বিলুপ্ত খালের ওপর সোয়া কোটি টাকার কালভার্ট!

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ)
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ১২: ২১

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার তালতলা বাজারের প্রবেশমুখের খালটি দুই যুগের বেশি আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন সেই খালের ওপর সোয়া কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। এত ছোট কাজের বড় বাজেট দেখে জনপ্রতিনিধি থেকে সাধারণ মানুষও বিস্মিত।

এদিকে দেড় মাস আগে রড-সিমেন্টের ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলেও দুই পাশের সংযোগ সড়কে এখনো মাটি ভরাট হয়নি। এতে উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের তালতলা বাজারে যেতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। শারদীয় দুর্গাপূজার মধ্যে এই দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালভার্টের মূল নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে সংযোগ সড়কের মাটি ভরাট করা হয়নি। বাঁশ ফেলে কালভার্টের ওপর দিয়ে যাতায়াত করছে মানুষজন। তা ছাড়া মাটি ভরাট করে মুক্তিযোদ্ধা ভবন, ইউনিয়ন পরিষদের পাকা রাস্তা ও বাড়িঘর তৈরিসহ নানাভাবে খালটি দখল করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইছামতী নদীর একটি শাখা খালের একটি উপখাল (নালা) বয়ে গেছে তালতলা বাজারের পাশ দিয়ে। দুই যুগে মানুষ এর নামই ভুলে গেছে। নতুন কালভার্ট পারাপারে দুর্ভোগ কমাতে শেষ পর্যন্ত মালখানগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আক্তার মাটি ভরাট করে দিচ্ছেন।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার, বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) অর্থায়নে ওই খালে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্য, ৩২ ফুট প্রস্থ ও ১৫ ফুট উচ্চতা কালভার্টের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯১১ টাকা। এর ঠিকাদার মেসার্স খাজা চিশতীয়া এন্টারপ্রাইজ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে কাজের তদন্তে রয়েছে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ মির্জা হায়দার নেকবর বলেন, ‘এক সময় খাল ছিল, এখন নেই। বহু আগে ভরাট হয়ে গেছে। এখানে কীভাবে এত টাকা খরচ করে কালভার্ট নির্মাণের অনুমতি পেল? এতটুকু একটি বক্স কালভার্ট নির্মাণে এত টাকা লাগে! বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত।’

উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিলুপ্ত খালের ওপর এত টাকা ব্যয়ে কালভার্ট নির্মাণের কথা শুনে আমিও অবাক হয়েছি। পরে জেলা এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তিনি কি বলতে চান বুঝে উঠতে পারলাম না। পূজার আগে কাজ শেষ না হওয়া নিয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রকৌশলী বলেন, কাজের সময়সীমা আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রয়েছে। পরে মালখানগর ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি দুই পাশে মাটি ভরাট করে দিতে।’

উপজেলা প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম জানান, কালভার্ট নির্মাণের বাজেট আগেই করা হয়েছিল। চলতি বছরের মার্চে শুরু হওয়া কাজ আগামী বছরের মার্চে শেষ হবে। কালভার্টটি তৈরি হলে খাল দখল মুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান করা হবে। তিনি বলেন, ‘বিস্তারিত জানতে জেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেন। এ বিষয়ে আমাদের সাক্ষাৎকার দেওয়ার অনুমতি নেই।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত