‘খালি শুনি কিন্তু সেতু আর দেখি না’

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ৪৪
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ৪৩

‘মোর বিয়ার বয়স ১৮ বছর। বিয়ার সময় থাকি শোনোং এটে সেতু হইবে, গাড়ি চলবে। কিন্তু খালি কানে শুনি, কিন্তু চোখে আর সেতু দেখি না। এটে একনা সেতু বানাইতে কি সরকারের সউগ টাকা শ্যাষ হইবে? সেতু কোনা হইলে তো হামরা গাড়িত যাওয়া-আইসা কইরার পাই।’

তারাগঞ্জের কালারঘাট এলাকায় যমুনেশ্বরী নদী বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হওয়ার সময় কথাগুলো বলছিলেন চাকলা গ্রামের সুফিয়া বেগম। বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে ফেরার পথে সেতু নিয়ে এ আক্ষেপ করেন তিনি।

সুফিয়ার মতো উপজেলার ১২ গ্রামের ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে কালারঘাট পাড়ি দিতে সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা দীর্ঘদিন শুধু সেতু নির্মাণের আশ্বাস পেয়ে আসছে, বাস্তবায়ন আর দেখছে না। সেতু না থাকার বিরূপ প্রভাব পড়েছে এলাকার কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায়।

উপজেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে সয়ার ইউনিয়নে যমুনেশ্বরী নদীর কালারঘাট পারাপারে শুষ্ক মৌসুমে একমাত্র অবলম্বন বাঁশের সাঁকো। এলাকাবাসীর চাঁদায় বানানো এ সাঁকো বর্ষাকালে ডুবে যায়। তখন নৌকা বা কলার ভেলাই ভরসা।

ঘাটের দুই পাড়ে শাহপাড়া, কাংলাচড়া, উজিয়াল, চারআনী, দোলাপাড়া, বুড়িরহাট, চিলাপাক, চাকলাসহ রয়েছে ১২টি গ্রাম। এসব গ্রামে ১৭ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। গত শনিবার সরেজমিন দেখা গেছে, লোকজন সাঁকো দিয়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছে। বাইসাইকেল ছাড়া অন্য কোনো যান এতে তোলা যায় না। কৃষকেরা ফসলের বস্তা কাঁধে করে পার করছেন।

চিলাপাক গ্রামের মোরছালিন ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যেক বছর এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সবাই বলে বরাদ্দ হচ্ছে, এটে সেতু হইবে। কিন্তু সেতু আর হয় না। বাপ-দাদারা গেইছে, হামাকও বাঁশের সাঁকো আর কলার ভেলাত পারাপার করি জীবন শেষ করির নাগবে। তাও এটে কোনা সেতু হবার নেয়।’

কালারঘাট গ্রামের কৃষক পলাশ মিয়া জানান, কষ্ট করে উৎপাদিত ফসল সেতুর অভাবে হাটে নিয়ে বিক্রি করতে পারেন না। কম দামে বাড়িতে পাইকারকে দিতে হয়। তিনি বলেন, ‘এই বাঁশের সাঁকোকোনা দেখছেন, এইকনা খরার সময় একমাত্র ভরসা। বর্ষা হইলে কী যে যন্ত্রণা হয়, বলি বুঝির পামো না হামরা। রাইতো গ্রামের কোনো মাইনষের সমস্যা হইলে তো হাসপাতালো নিতে নিতে রোগী মারা যাইবে।’

সাঁকো পেরিয়ে চিলাপাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসে। বর্ষাকালে তাদের নিয়ে শঙ্কায় থাকেন শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক আনছারী বলেন, কালারঘাটে সেতু না থাকায় বর্ষাকালে নদীর ওপারের উজিয়াল, শাহপাড়া ও চারআনী গ্রামের বেশির ভাগ শিশু ভয়ে স্কুল আসতে চায় না।

সয়ার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আল ইবাদত হোসেন পাইলট বলেন, ‘কালারঘাটে একটি সেতু ১২ গ্রামের ১৭ হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া। এখানে হাজারো মানুষ দাবি করেও একটি সেতু পাচ্ছে না, এটি খুবই দুঃখজনক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মেদ হায়দার বলেন, ‘কালারঘাটে সেতু না থাকার বিষয়টি জানা আছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে খুব দ্রুত সেতু নির্মাণ করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত