শহরে জট বাড়াচ্ছে অবৈধ যান

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫: ০১

ময়মনসিংহ নগরীতে প্রতিদিনই বাড়ছে যানজট। এর কারণ অবৈধ যান। যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা। জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ যানজট নিরসনে প্রতিনিয়ত আশার কথা শোনালেও বাস্তবে যানজট না কমে প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেছেন, যানজট নিরসনে তাঁরা কাজ করছেন। অবৈধ যানের বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন এলাকায় অনুমোদিত ইজিবাইক ও রিকশা রয়েছে ১৯ হাজারের মতো। এর মধ্যে ইজিবাইক ৭ হাজার। ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে ১২ হাজার, এগুলোর মধ্যে চার ব্যাটারির মোটা চাকার রিকশা ৫ হাজার ৬০০টি। কিন্তু বাস্তবে এসব যানের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।

সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন ৩ হাজার ইজিবাইক নগরীতে চলাচল করতে পারে। তবে নগরীতে এসব অযান্ত্রিক যানের সংখ্যা সিটি করপোরেশনের হিসাবের অনেক বেশি। ফলে ভোর থেকেই নগরজুড়ে যানজট শুরু হয়, চলে রাত পর্যন্ত।

যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশন ইজিবাইকগুলো দুই ভাগ করে লাল-সবুজ রং করে দিলেও নির্দেশনা অমান্য করে রং পাল্টে, নম্বরপ্লেট জালিয়াতি করে সড়কে চলছে ব্যাটারিচালিত যান। ব্যাটারিচালিত এসব যানের কারণে সড়কে শুরু হওয়া বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে অভিযান শুরু হয়েছে। গত জুলাইয়ে সিটি করপোরেশন ২৩২টি অযান্ত্রিক যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। জরিমানা করা হয় ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭০০ টাকা।

ভুয়া নম্বরপ্লেটে ইজিবাইক চালানো, রং পরিবর্তন করে গাড়ি চালানো, অবৈধ পার্কিং, বেশি ভাড়া আদায় করায় ব্যাটারি ও নম্বরপ্লেট জব্দ করছে সিটি করপোরেশনের দল। তবু কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না যানজট। সবচেয়ে বেশি যানজট পড়তে হচ্ছে গাঙ্গিনারপাড়, পাটগুদাম ব্রিজ মোড়, নতুন বাজার, জিলা স্কুল মোড়, চরপাড়া, মিন্টু কলেজ, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দাদের।

নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা কামরুজ্জামান বাবু বলেন, যানজটের বিষয়ে সারা দিন বললেও শেষ হবে না। অন্তত ফুটপাতমুক্ত থাকলে হেঁটে চলাচল করা যায়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, ‘ময়মনসিংহ নগরীতে মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ যানজট। বিগত সময়ে স্টেকহোল্ডাররা অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু যানজট নিরসনে ব্যর্থ হয়েছে।  আমি মনে করি মেয়র সাহসী উদ্যোগ নিলে নগরবাসী কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।’

জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুল আমিন কালাম বলেন, যানজটসহ নগরের সব সমস্যা ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর নাগরিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে তা নিরসনের লক্ষ্যে মেয়র বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারের কাছেও স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এর পরেও যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে আন্দোলনে মাঠে নামব।’

জেলা ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নতুন পুলিশ সুপার স্যার যোগদান করার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাফিক বিভাগে লোকবল বাড়ানো হয়েছে। এখন শহরে যানজট নিরসন করার জন্য ১৩০ জনের মতো সদস্য রয়েছে। আমরা দিনরাত কাজ করছি। রাস্তা প্রশস্ত না থাকায় নগরীর অলিগলিতেও যানজট হচ্ছে। রাস্তা প্রশস্ত না হলে যানজট কোনোভাবেই নিরসন করা সম্ভব হবে না।’

জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, ‘যানজটসহ জেলার ২৪টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। শহরে মূল সমস্যা যানজট, তা নিরসনে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসা হবে। এরপর স্থায়ী সমাধানের চিন্তাভাবনা করে কাজ শুরু করা হবে।

সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘যানজটে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আমরা যখন যানজট নিরসনের উদ্যোগ নিই, তখন নানা বাধায় তা ভেস্তে যায়। আসলে শহরটাই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। এখন উন্নত মানের রং দিয়ে ইজিবাইক কালার করে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ কার্যক্রম অচিরেই শুরু হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত