জিনিসপত্রের দাম কমছে না কেন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ৩২

চাল, সবজি, ডিম, মুরগিসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। সরকার পতনের পর মানুষ আশা করেছিল পরিবহন খাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমে যাওয়ায় বাজারে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু না, বাস্তবে তেমন কিছু লক্ষ করা যাচ্ছে না। বাজারে গিয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই দাম বাড়ার প্রবণতা দেখছেন। মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অনেক মানুষের পক্ষে দুই বেলা খেয়ে-পরে জীবন নির্বাহ করা কষ্টকর হবে।  

অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, জিনিসপত্রের দাম কয়েক মাসের মধ্যে দৃশ্যমানভাবে কমে আসবে। তিনি বলেছেন, অনেকগুলো কারণে দাম বেড়ে গেছে, সেটা চট করে টেনে নামিয়ে আনা যাবে না। মূল্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। জিনিসপত্রের দাম কমাতে ইতিমধ্যে টাস্কফোর্স হচ্ছে। আলু, পেঁয়াজ ও কীটনাশকের শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর সুফল যাতে ভোক্তাপর্যায়ে পাওয়া যায়, তা-ও নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাছ, মাংস, ডিমের বিষয়েও কাজ চলছে।

সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সুফল যে খুব শিগগির পাওয়া যাবে না, সেটা মাননীয় উপদেষ্টার কথা থেকেই বোঝা যায়, তিনি কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাম কমার কথা বলেননি। বলেছেন ‘কয়েক মাস’।

দাম বাড়ানোর জন্য একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী সব সময় কোনো না কোনো অজুহাত ঠিকই বের করে থাকেন। জিনিসপত্রের দাম না কমার কারণ হিসেবে এখন যেমন বলা হচ্ছে, জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দেশে পণ্য পরিবহনব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটেছে, যা এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। তারপর দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কারণে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে।

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ও পরিবহনব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পর দাম বাড়ানোর পক্ষে কোনো নতুন অজুহাত সামনে আসবে না, তা তো নয়। সে জন্য ভুক্তভোগীরা মনে করেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। কী কী কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে তা যদি জানা থাকে, তাহলে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া তো কঠিন কিছু নয়।

মুনাফাশিকারি অসৎ ব্যবসায়ী ও মধ্যস্থতাকারীদের কারসাজির জন্যই মূলত পণ্যমূল্য বাড়ে। কাজেই মধ্যস্থতাকারী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। কারসাজিকারীরা বাজারে নানা অনিয়ম ও মনিটরিংয়ে ঘাটতির সুযোগ নিয়ে থাকেন। কাজেই মনিটরিংব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করতে হবে।

একাধিক দফায় হাতবদলের কারণেও দাম বেড়ে যায়। সে জন্য হাতবদলের সংখ্যা কমাতে হবে। ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের স্বার্থ না দেখে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ তথা ক্রয়ক্ষমতা বা সামর্থ্যের কথা চিন্তা করে দ্রুত বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলকপদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে এদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত