বিধি লঙ্ঘনের মহোৎসব

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৭: ৩৮
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ১৬

চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কুড়িগ্রামের উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচার জমে উঠেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্রচার। আগামী ২৬ ডিসেম্বর এই দুই উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচনী এ প্রচারে চলছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মহোৎসব।

পোস্টার-ব্যানার সাঁটানোসহ শব্দযন্ত্রের (মাইক) ব্যবহারে মানা হচ্ছে না কোনো বিধিনিষেধ। এমনকি বিধিনিষেধ থাকলেও মোটর শোভাযাত্রাসহ চলছে মিছিল ও নির্বাচনী সভা। কর্তৃপক্ষ বলছে, আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে কোনো অভিযোগ পাননি তাঁরা।

সরেজমিন উলিপুর উপজেলার তবকপুর, পান্ডুল ও দুর্গাপুর ইউপি এবং রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ও চাকিরপাশা ইউপি ঘুরে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কোনো প্রার্থীই নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলছেন না। পোস্টার লাগানো থেকে শুরু করে নির্বাচনী আইনের কোনো তোয়াক্কাই করছেন না প্রার্থীরা।

ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীরা বিধিমালা লঙ্ঘন করে গাছে, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে, বসতবাড়ির প্রাচীর ও দেয়ালে পোস্টার সেঁটে চলছেন। পোস্টার সাঁটানো থেকে বাদ পড়েনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফটকসহ সড়কের অভ্যর্থনা তোরণ ও যানবাহন। এমনকি রাতের বেলা নির্বাচনী প্রতীকে আলোকসজ্জা করে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা দেখা গেছে।

উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউপিতে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদার রহমান বকুলের নির্বাচনী প্রচারের পোস্টারে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছবি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা অনুসারে, ‘নির্বাচনী প্রচারে কোনো প্রার্থী নিজের ছবি ও প্রতীক বাদে অন্য কারও নাম, ছবি বা প্রতীক ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, প্রার্থী কোনো রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী হলে সে ক্ষেত্রে তিনি কেবল তাঁর দলের বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টার বা লিফলেটে ছাপাতে পারবেন।’

একই বিধিমালার উপধারায় বলা হয়েছে ‘কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কোনো ব্যক্তি, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দল নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত দেয়াল বা যানবাহনে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগাতে পারবেন না।’ তবে ভোটকেন্দ্র বাদে নির্বাচনী এলাকার যে কোনো স্থানে পোস্টার ঝুলিয়ে রাখা যাবে বলে বিধিমালায় বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদার রহমান বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের ছবি ছাপানোর আগে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অনুমতি নিয়ে পোস্টার ছাপিয়েছি। আমি কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি।’

ওই ইউপির আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমার অল্প কিছু পোস্টার মানুষের বাড়ির টিনের প্রাচীরে লাগানো হয়েছে। আমি সেগুলো সরিয়ে নেব।’

ইউনিয়ন জুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাইলে তবকপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাদিরুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থীকে এ বিষয়ে অভিযোগ করতে হবে।’

উলিপুরের দুর্গাপুর ইউপির দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকে নির্বাচনী পোস্টার সাঁটানো দেখা গেছে। পোস্টার সাঁটানো থেকে বাদ পড়েনি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থাপনার দেয়াল। একই ইউপির অর্জুনডারা সেতুর কাছে রাতের বেলা বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জা ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রতীক প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে রাজারহাটের উমরমজিদ ইউপিতে গভীর রাত পর্যন্ত শব্দযন্ত্র (মাইক) ব্যবহার ও মিছিল মিটিং করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। আচরণবিধির অন্যান্য ধারাও মানা হচ্ছে না উপজেলার অন্যান্য ইউপিতে।

উমরমজিদ ইউপির বাসিন্দা এক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আগামী ২০ ডিসেম্বর আমাদের পরীক্ষা রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহৃত মাইকের শব্দে বাড়িতে অবস্থান করাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

রাজারহাট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত