যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া বাজারের চুড়িপট্টি, মুদিপট্টির দোকানগুলো রাস্তা দখল করে বসিয়েছে বিভিন্ন পণ্যের পসরা। এতে ১২ ফুটের রাস্তা দাঁড়িয়েছে ৬ ফুটে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারীরা।

তবে তাতে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেই প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের। প্রশাসনের দাবি রাস্তা থেকে দোকান সরিয়ে দিলেও আবার দোকান বসাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়রা জানান, নওয়াপাড়া বাজারের বেশির ভাগ রাস্তা এখন দোকানিদের দখলে। মূল সড়ক থেকে অলিগলির রাস্তা দখলে নিয়ে দোকান বাড়ানো হয়েছে। বছরের পর বছর রাস্তার ওপরেই চলছে এসব দোকানের ব্যবসা। বিশেষ করে নওয়াপাড়া বাজারে মুদি, পলিথিন, হার্ডওয়্যার এবং চুড়িপট্টি দোকানদারদের মধ্যে রীতিমতো জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা চলছে।

রাস্তা সরু হওয়ার ফলে পণ্য আনা-নেওয়া আর ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে এ রাস্তা দিয়ে যানবাহন দুরের কথা হাঁটাও কষ্টকর হয়ে যায়। আবার যেসব রাস্তায় জনসমাগম বেশি, সেখানে দোকানের সামনের জায়গা দখলের সংখ্যাও বেশি। এতে রাস্তায় চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন মানুষ। বছর বছর এমন অবস্থা চললেও কোনোভাবেই যেন লাগাম টানতে পারছে না নওয়াপাড়া পৌরসভা।

তবে নওয়াপাড়া পৌরসভা বিভিন্ন সময়ে এ সড়কের জায়গা দখল করা দোকানগুলো উচ্ছেদ করলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। উচ্ছেদের কিছুদিন পরেই ফের দোকানের সামনের জায়গা দখল করছে। অলিগলির রাস্তার ওপরে গড়ে ওঠা দোকানগুলোর যেন স্থায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে নওয়াপাড়া বাজারের অধিকাংশ রাস্তার দৃশ্য এটি। যানবাহন, পথচারী চলাচলে রাস্তা নির্মাণ হলেও দখলদার এবং দোকানিদের সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নেই। নওয়াপাড়া বাজারের রাস্তায় শৃঙ্খলা কখনই আসছে না। এ যেন এক ছন্নছাড়া বন্দর নগরী নওয়াপাড়া।

গতকাল বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নওয়াপাড়া বাজারে হাইস্কুল গেটের সামনে থেকে কাঁচা বাজার, বীজ-চারা বিক্রির গলি, চুড়িপট্টি গলি ও সোনাপট্টি গলিতে রাস্তার ওপর অবৈধভাবে দোকান বসানো হয়েছে। এতে রাস্তা দিয়ে মানুষজনকে চলাচলে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা গেছে। একই চিত্র নওয়াপাড়া বাজারের প্রতিটি গলিতে।

এ বিষয়ে মুদি পট্টির কয়েকজন দোকানদার বলেন, ‘কয়েকজন দোকানদারদের খাম-খেয়ালিপানার কারণে নওয়াপাড়া মুদিপট্টির এই অবস্থা। তাঁরা ইচ্ছেমতো রাস্তার ওপর দোকান বসায় এবং অন্য দোকানদারদের বাধ্য করে তাঁদের দোকানের সামনেও চৌকি বসাতে।

এ সময় কয়েকজন দোকানদার বলেন, ‘দোকানের সামনের জায়গা দখলের প্রতিযোগিতার কারণে এখন ১২ ফুট রাস্তা ৬ ফুটে দাঁড়িয়েছে।’

নওয়াপাড়া বাজার এলাকার বাসিন্দা আবদুল করিম বলেন, ‘আগে বাজারের একটি নিয়মশৃঙ্খলা ছিল। কিন্তু বর্তমানে নওয়াপাড়া বাজার যন্ত্রণাদায়ক নগরী। যেখানে কোনো শৃঙ্খলা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে বাজারের ভেতরের সকল গলি দোকানদারেরা দখলের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। একটা ভ্যান/রিকশা আসলে অন্য একটি ভ্যান–রিকশা এমনকি কিছু জায়গায় সাইকেল যাওয়ার জায়গা থাকে না। এতে পথচারী চলাচলেও চরম অস্বস্তিতে পড়ছেন তাঁরা।’

নওয়াপাড়া বাজারের সকল রাস্তার ওপর দোকান বাড়ানোর বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর হোসেন বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে দায়িত্ব ‍বুঝে পেয়েছি। তবে রাস্তার ওপর দোকান বসিয়ে যারা সরকারি জায়গা দখল করে নিয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

নওয়াপাড়া পৌরসভার মেয়র সুশান্ত কুমার দাস শান্ত বলেন, ‘নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। রাস্তার ওপরে বালু কিংবা নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্যও জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া নওয়াপাড়া বাজার এলাকায় যেসব দোকানদার রাস্তা দখল করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের চলাচলের পথে দোকান বসিয়ে বাধা সৃষ্টি করবে সেটি কখনই নওয়াপাড়া পৌরসভাতে করতে দেওয়া হবে না।’