ডলার সংকটে ফ্লাইট কমাচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইনস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ১১: ১৪
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ১১: ২৩

ডলার সংকটের মুখে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী অনেক  বিদেশি এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রি ও পণ্য পরিবহনের অর্থ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় পাঠানো বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)। এই অর্থের পরিমাণ ২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এই সংকটে পড়ে কয়েকটি বিদেশি এয়ারলাইনস  বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক গতকাল বুধবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডলার সংকট ও রিজার্ভ কমে যাওয়ার জন্য পাওনা অর্থ দেওয়া হয়নি—আইএটিএর এই অভিযোগ ঠিক নয়। এই খাতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থের কোনো ঘাটতিও নেই। এমনকি নেই কোনো নীতিগত বাধা।

মূলত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ঘাটতি ও তথ্যগত হিসাবে গরমিল থাকায় ওই পাওনা পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে দাবি করে মেজবাউল হক বলেন, এসব সমস্যা দূর হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে পাওনা পরিশোধ করা হবে।

আইএটিএ ৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ২৭ দেশ থেকে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এয়ারলাইনসগুলোর প্রায় ২০০ কোটি ডলার আটকে আছে। এর মধ্যে ৫৫ কোটি ডলারের বেশি আটকে রেখে তালিকার শীর্ষে রয়েছে নাইজেরিয়া। এরপরই আছে পাকিস্তান, সাড়ে ২২ কোটি ডলার, বাংলাদেশ ২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার, লেবানন ১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং আলজেরিয়া ১৪ কোটি ডলার।

আইএটিএর মহাপরিচালক উইলি ওয়ালশ বলেছেন, ডলারের ঘাটতির মুখে এয়ারলাইনসের তহবিল আটকে রাখা একটি সহজ পদক্ষেপ। কিন্তু এতে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় অর্থনীতিকেই চড়া মূল্য দিতে হয়। সেবামুখী যেকোনো ব্যবসায় আয় না হলে সেবা দিয়ে যাওয়া কঠিন। এয়ারলাইনসগুলো এর বাইরে নয়। আন্তর্জাতিক চুক্তির বাধ্যবাধকতা মেনে রাজস্ব আয়ের তহবিল ছাড়ের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর প্রতি দাবি জানান।

সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, কাতার এয়ারলাইনস, টার্কিশ এয়ারলাইনসসহ বিভিন্ন এয়ারলাইনস সপ্তাহে আগের তুলনায় গড়ে তিনটি করে ফ্লাইট কমিয়েছে, এমন দাবি করে একটি সূত্র বলেছে, ফ্লাইট কমানোর পেছনে একটি বড় কারণ এসব সংস্থার আয় করা তহবিল স্থানান্তরে বাধা।

তবে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর চলাচল সীমিত হয়নি দাবি করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সবাই যার যার সামর্থ্য অনুসারে ফ্লাইট পরিচালনা করে।

বর্তমানে এয়ারলাইনসগুলোর তহবিল ছাড় আস্তে আস্তে শুরু হয়েছে জানিয়ে ঢাকায় টার্কিশ এয়ারলাইনসের কর্মকর্তা সাত্তার সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বুধবার বলেছেন, কেবল তহবিল ছাড় না হওয়ার জন্য ফ্লাইট কমানো হয়েছে এমন নয়। আগের তুলনায় যাত্রী কমে যাওয়াসহ আরও অনেক কারণে ফ্লাইট কমে যেতে পারে।

গত গ্রীষ্মে টার্কিশ এয়ারলাইনস বাংলাদেশ থেকে সপ্তাহে ১৪টি পর্যন্ত ফ্লাইট দিয়েছে জানিয়ে সাত্তার সিদ্দিকী বলেন, এখন সপ্তাহে চলছে মাত্র ৫টি ফ্লাইট। আগামী গ্রীষ্মে ১০টি ফ্লাইট চালানোর পরিকল্পনা আছে।

অবশ্য বেসামরিক বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশে যে টিকিট বিক্রি করে, সেই টাকা তো তাদের দেশে পাঠাতে হবে। তারা এখানে ব্যবসা করতে এসেছে, সমাজসেবা করতে আসেনি। বলা হচ্ছে, তহবিল সংকটের কারণে ডলার পাঠানো যাচ্ছে না। এই সংকট সমাধানে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে, নইলে দেশের উড়োজাহাজ চলাচল খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত