ঐতিহ্যের ‘পাতা চালা খেলা’

পীরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৪: ৪৭
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ২৮

ধান কেটে নেওয়া ফাঁকা মাঠের মাঝখানে একটি কলাগাছ পোঁতা। গাছটির পাশে বসে আছে তুলা রাশির জাতক এক কিশোর। যার পরিচয় ‘পাতা’। তন্ত্র-মন্ত্রের কেরামতি দেখিয়ে তাকে নিজেদের দিকে টেনে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কয়েকজন ওঝা।

কিশোর ছেলেটি একবার এই দিকে যাচ্ছে তো আরেকবার ওই দিকে যাচ্ছে। মাঠজুড়ে চলছে তার দৌড়াদৌড়ি। মাঝেমধ্যে পড়ে যাচ্ছে মাটিতে। দেখে মনে হয় সে আর তার নিজের ইচ্ছাশক্তির ওপরে নেই। অদৃশ্য কোনো শক্তির বলে চালিত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সে কোন ওঝার বশে যাবে তা দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মাঠের চারপাশে জড়ো হওয়া শত শত মানুষ।

পীরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ঝোরারঘাটে গত শনিবার শেষ বিকেলে দেখা গেল এই ঐতিহ্যবাহী ‘পাতা চালা খেলা’। ঝোরারঘাট সামাজিক উন্নয়ন সংগঠনের উদ্যোগে খেলাটির আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম রুবেল, ঠিকাদার তৌফিকুর রহমান শাকিল প্রমুখ।

খেলায় পাতা হিসেবে আনা হয় তুলা রাশির আনারুল ইসলামকে। আনারুল এবার দাখিল পরীক্ষা দিয়েছে। সে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুরের মহির উদ্দিনের ছেলে। তাঁর পরিবার এখন পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের ঘাসিপুর গ্রামে বসবাস করছে।

আনারুল বলে, ‘পাতা খেলায় শরীরে খুব বিষ উঠে। আর মাটিতে জোরে জোরে পড়ে গিয়ে প্রচণ্ড ব্যথা পাই। তারপরও আমি এ খেলায় পাতা হিসেবে অংশ নিয়ে আমার লেখাপড়ার খরচ চালাই।’

খেলা দেখতে এসেছিল রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া মো. আবরার জুনায়েদ স্পন্দন। সে বলে, ‘জীবনে এমন খেলা প্রথম দেখলাম। খোলা মাঠে এত মানুষ খেলা দেখতে এসেছেন, দেখে আমি খুব মজা পেয়েছি। আজকে যে মজা পেলাম, সারা জীবন তা মনে রাখার মতো। সুযোগ পেলে গ্রামীণ খেলা আরও দেখব।’

শনিবারের খেলায় ছয়জন ওঝার দল অংশ নেয়। এতে উপজেলার চতরার আবদুল গোফফার মিয়ার দল প্রথম এবং কানঞ্চগাড়ী গ্রামের ওয়াহাব মিয়ার দল দ্বিতীয় হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে প্রথম হওয়া দলকে একটি ছাগল আর দ্বিতীয় দলকে রাজহাঁস দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত