অরুণ কর্মকার
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বোধকরি দেশের বৃহত্তম সেক্টর করপোরেশন। আয়-ব্যয়, স্থিতি কিংবা কার্যপরিধি সব বিবেচনায়ই বৃহত্তম। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণও বটে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের হিসাব-নিকাশের স্বচ্ছতা ও যথার্থতা সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছিল। এখনো আছে। কখনো কখনো সেই চিহ্নটি একেবারে নিরেট প্রমাণসহও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তার অবসান হয়নি; বরং বিপিসির লাভ-লোকসান আর রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির বিষয়গুলো একটি জটিল ধাঁধা হয়েই আছে।
বিষয়গুলো অনুধাবনের সুবিধার জন্য একটু পেছনের ক্রমানুসারে উল্লেখ করা বোধ হয় ভালো হবে। ২০২২ সালের আগস্টে বিপিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির আয়-ব্যয় প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত (সাত বছরে) বিপিসি সর্বমোট ৪২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। অথচ অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২’-এ উল্লিখিত ছিল (এখনো নিশ্চয়ই আছে), ওই সাত বছরে বিপিসি প্রকৃত মুনাফা করেছে ৪৬ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিপিসির তৎকালীন চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্য এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্যের মধ্যে ব্যবধান হচ্ছে ৩ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রীয় খাতের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠানটির হিসাব-নিকাশের এই গুরুতর গরমিল ওই সময় গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এই গরমিল কীভাবে হলো, এটি কি কারও ভুল নাকি এর অন্য কোনো ব্যাখ্যা আছে, সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে আজ পর্যন্ত কেউ কোনো কথা বলেনি। সুতরাং কীভাবে বিষয়টির ফয়সালা হলো, আদৌ কোনো ফয়সালা হলো কি না, তার কিছুই দেশবাসী জানতে পারল না। ফলে সেই ধারা এখনো বলবৎ রয়েছে। হিসাব কিছুতেই মিলছে না। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বিপিসির হিসাবের গরমিলটি হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবের সঙ্গে।
যেমন চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) কথাই ধরা যাক। এই অর্থবছরে বিপিসির লোকসানের প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১০ হাজার ১৯ কোটি টাকা। অথচ অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, অর্থবছর শেষে বিপিসির নিট মুনাফা হবে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি। প্রাসঙ্গিক হিসেবে উল্লেখ করা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিপিসি লোকসানের প্রাক্কলন করেছিল ৭ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। অথচ ওই অর্থবছর শেষে মুনাফা করেছিল ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ২০২৪ অর্থবছরে বিপিসি লোকসানের প্রাক্কলন করেছে ৫ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। জ্বালানির বিশ্ববাজারের যে গতি-প্রকৃতি তাতে আশা করা যায়, বিপিসি কয়েক হাজার কোটি টাকা মুনাফা করবে।
বিশ্ব জ্বালানি বাজারের গতি-প্রকৃতি ছাড়াও এই অনুমানের আরও বড় কারণ হলো, এখন তো প্রতি মাসে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। সেই সমন্বয় প্রক্রিয়ায় বিপিসির মুনাফা যোগ করেই দাম নির্ধারণ করা হয়। তারপরও বলা হতে পারে, বিশ্ব জ্বালানি বাজার যেকোনো সময় অস্থিতিশীল হতে পারে। তার ওপর বছর দুয়েক ধরে যুক্ত হয়েছে মার্কিন ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। এসব কারণে বিপিসির প্রাক্কলন এবং বাস্তবে তার অর্জনে বড় ধরনের গরমিল হচ্ছে। কিন্তু কথা হলো, প্রতিবার যদি একই রকম ফল হয়, তাহলে বিপিসির সদিচ্ছা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠবেই।
তাহলে একটি বিষয় পরিষ্কার যে বিপিসির লাভ-লোকসানের প্রাক্কলন যুক্তিযুক্তভাবে করা হয় না। তাদের হিসাব-নিকাশও অস্বচ্ছ। বিপিসির এই অস্বচ্ছতার বিষয়টিও বেশ পুরোনো। এক যুগের বেশি সময় আগে, যখন জ্বালানি তেল আমদানির জন্য বিপিসিকে আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার কাছে ঋণের জন্য ধরনা দিতে হতো, তখন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ঋণ দেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে কোনো বিদেশি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে বিপিসির আর্থিক বিষয়াদি নিরীক্ষা করার কথা বলেছিল। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাতে রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু পরে অজ্ঞাত কারণে বিপিসি কিংবা সরকার আর সে পথে হাঁটেনি। দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকেরাও বারবার একই পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না।
শুধু যে বিপিসির আয়-ব্যয়, নিরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তা নয়। প্রশ্ন রয়েছে তাদের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়েও। গত ৭ মার্চ থেকে এই পদ্ধতিতে জ্বালানি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। কিন্তু বিপিসির দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন ধাপের ব্যয় নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে। কী পদ্ধতিতে জ্বালানি পণ্যের দাম হিসাব করে নির্ধারণ করা হয়, বিপিসি কখনোই তা প্রকাশ করে না। অথচ জ্বালানি পণ্যের দাম নির্ধারণের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি রয়েছে। তা সত্ত্বেও দাম নির্ধারণের পদ্ধতি প্রকাশ না করায় জনমনে এই বিশ্বাস প্রবল যে ভোক্তাদের কাছ থেকে জ্বালানি পণ্যের বেশি দাম, অন্যায্য দাম নেওয়া হয়।
জনমনের এই বিশ্বাসের যৌক্তিক ভিত্তিও আছে। তা হলো, জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণন-প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায় থেকে সরকার প্রায় ৩৫ শতাংশ শুল্ক ও কর নেয়। কাজেই এই পণ্যের দাম যত বেশি রাখা যাবে, বিপিসির যেমন তত বেশি লাভ হবে, তেমনি সরকারের শুল্ক ও করের অঙ্কও ততই বড় হবে। এতে আরও একটি লাভ হলো, ক্রমান্বয়ে এই খাতে আর ভর্তুকি দেওয়ারও প্রশ্ন থাকবে না। সুতরাং দাম বেশি রাখা হলে একদিকে জ্বালানি তেল থেকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের পথ আবিষ্কার হয়, অন্যদিকে আইএমএফের ভর্তুকি তুলে দেওয়ার শর্ত পূরণও সহজ হয়ে যায়। এর শতভাগ ভুক্তভোগী হয় ভোক্তারা, দেশের সাধারণ জনগণ।
অবশ্য জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য দেশে মূল্যস্ফীতিতে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলে। কিন্তু তাতে বিপিসির তো নয়ই, সরকারেরও বিশেষ কিছু যায়-আসে না। কারণ প্রথমত, সেই মূল্যস্ফীতির বোঝাও জনগণকেই বহন করতে হয়। দ্বিতীয়ত, এ জন্য সরকারকে কারও কাছে খুব জোর জবাবদিহিও করতে হয় না। তারপরও তথাকথিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চলমান আছে। জনগণের সরকার। জনকল্যাণই যে সরকারের ঘোষিত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, বিষয়টি তাদের গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার।
এমনিতেই সমাজের উপরিকাঠামো অপরাধ-দুর্নীতিতে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এরপর ভিত্তিকাঠামোতেও যদি একই হাওয়া প্রবলভাবে বইতে শুরু করে, তখন বোধ হয় আর সামাল দেওয়ার সময়-সুযোগ থাকবে না। সবকিছু নিয়েই ডুবতে হবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বোধকরি দেশের বৃহত্তম সেক্টর করপোরেশন। আয়-ব্যয়, স্থিতি কিংবা কার্যপরিধি সব বিবেচনায়ই বৃহত্তম। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণও বটে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের হিসাব-নিকাশের স্বচ্ছতা ও যথার্থতা সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছিল। এখনো আছে। কখনো কখনো সেই চিহ্নটি একেবারে নিরেট প্রমাণসহও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তার অবসান হয়নি; বরং বিপিসির লাভ-লোকসান আর রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির বিষয়গুলো একটি জটিল ধাঁধা হয়েই আছে।
বিষয়গুলো অনুধাবনের সুবিধার জন্য একটু পেছনের ক্রমানুসারে উল্লেখ করা বোধ হয় ভালো হবে। ২০২২ সালের আগস্টে বিপিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির আয়-ব্যয় প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত (সাত বছরে) বিপিসি সর্বমোট ৪২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। অথচ অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২’-এ উল্লিখিত ছিল (এখনো নিশ্চয়ই আছে), ওই সাত বছরে বিপিসি প্রকৃত মুনাফা করেছে ৪৬ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিপিসির তৎকালীন চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্য এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্যের মধ্যে ব্যবধান হচ্ছে ৩ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রীয় খাতের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠানটির হিসাব-নিকাশের এই গুরুতর গরমিল ওই সময় গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এই গরমিল কীভাবে হলো, এটি কি কারও ভুল নাকি এর অন্য কোনো ব্যাখ্যা আছে, সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে আজ পর্যন্ত কেউ কোনো কথা বলেনি। সুতরাং কীভাবে বিষয়টির ফয়সালা হলো, আদৌ কোনো ফয়সালা হলো কি না, তার কিছুই দেশবাসী জানতে পারল না। ফলে সেই ধারা এখনো বলবৎ রয়েছে। হিসাব কিছুতেই মিলছে না। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বিপিসির হিসাবের গরমিলটি হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবের সঙ্গে।
যেমন চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) কথাই ধরা যাক। এই অর্থবছরে বিপিসির লোকসানের প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১০ হাজার ১৯ কোটি টাকা। অথচ অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, অর্থবছর শেষে বিপিসির নিট মুনাফা হবে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি। প্রাসঙ্গিক হিসেবে উল্লেখ করা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিপিসি লোকসানের প্রাক্কলন করেছিল ৭ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। অথচ ওই অর্থবছর শেষে মুনাফা করেছিল ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ২০২৪ অর্থবছরে বিপিসি লোকসানের প্রাক্কলন করেছে ৫ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। জ্বালানির বিশ্ববাজারের যে গতি-প্রকৃতি তাতে আশা করা যায়, বিপিসি কয়েক হাজার কোটি টাকা মুনাফা করবে।
বিশ্ব জ্বালানি বাজারের গতি-প্রকৃতি ছাড়াও এই অনুমানের আরও বড় কারণ হলো, এখন তো প্রতি মাসে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। সেই সমন্বয় প্রক্রিয়ায় বিপিসির মুনাফা যোগ করেই দাম নির্ধারণ করা হয়। তারপরও বলা হতে পারে, বিশ্ব জ্বালানি বাজার যেকোনো সময় অস্থিতিশীল হতে পারে। তার ওপর বছর দুয়েক ধরে যুক্ত হয়েছে মার্কিন ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। এসব কারণে বিপিসির প্রাক্কলন এবং বাস্তবে তার অর্জনে বড় ধরনের গরমিল হচ্ছে। কিন্তু কথা হলো, প্রতিবার যদি একই রকম ফল হয়, তাহলে বিপিসির সদিচ্ছা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠবেই।
তাহলে একটি বিষয় পরিষ্কার যে বিপিসির লাভ-লোকসানের প্রাক্কলন যুক্তিযুক্তভাবে করা হয় না। তাদের হিসাব-নিকাশও অস্বচ্ছ। বিপিসির এই অস্বচ্ছতার বিষয়টিও বেশ পুরোনো। এক যুগের বেশি সময় আগে, যখন জ্বালানি তেল আমদানির জন্য বিপিসিকে আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার কাছে ঋণের জন্য ধরনা দিতে হতো, তখন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ঋণ দেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে কোনো বিদেশি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে বিপিসির আর্থিক বিষয়াদি নিরীক্ষা করার কথা বলেছিল। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাতে রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু পরে অজ্ঞাত কারণে বিপিসি কিংবা সরকার আর সে পথে হাঁটেনি। দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকেরাও বারবার একই পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না।
শুধু যে বিপিসির আয়-ব্যয়, নিরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তা নয়। প্রশ্ন রয়েছে তাদের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়েও। গত ৭ মার্চ থেকে এই পদ্ধতিতে জ্বালানি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। কিন্তু বিপিসির দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন ধাপের ব্যয় নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে। কী পদ্ধতিতে জ্বালানি পণ্যের দাম হিসাব করে নির্ধারণ করা হয়, বিপিসি কখনোই তা প্রকাশ করে না। অথচ জ্বালানি পণ্যের দাম নির্ধারণের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি রয়েছে। তা সত্ত্বেও দাম নির্ধারণের পদ্ধতি প্রকাশ না করায় জনমনে এই বিশ্বাস প্রবল যে ভোক্তাদের কাছ থেকে জ্বালানি পণ্যের বেশি দাম, অন্যায্য দাম নেওয়া হয়।
জনমনের এই বিশ্বাসের যৌক্তিক ভিত্তিও আছে। তা হলো, জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণন-প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায় থেকে সরকার প্রায় ৩৫ শতাংশ শুল্ক ও কর নেয়। কাজেই এই পণ্যের দাম যত বেশি রাখা যাবে, বিপিসির যেমন তত বেশি লাভ হবে, তেমনি সরকারের শুল্ক ও করের অঙ্কও ততই বড় হবে। এতে আরও একটি লাভ হলো, ক্রমান্বয়ে এই খাতে আর ভর্তুকি দেওয়ারও প্রশ্ন থাকবে না। সুতরাং দাম বেশি রাখা হলে একদিকে জ্বালানি তেল থেকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের পথ আবিষ্কার হয়, অন্যদিকে আইএমএফের ভর্তুকি তুলে দেওয়ার শর্ত পূরণও সহজ হয়ে যায়। এর শতভাগ ভুক্তভোগী হয় ভোক্তারা, দেশের সাধারণ জনগণ।
অবশ্য জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য দেশে মূল্যস্ফীতিতে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলে। কিন্তু তাতে বিপিসির তো নয়ই, সরকারেরও বিশেষ কিছু যায়-আসে না। কারণ প্রথমত, সেই মূল্যস্ফীতির বোঝাও জনগণকেই বহন করতে হয়। দ্বিতীয়ত, এ জন্য সরকারকে কারও কাছে খুব জোর জবাবদিহিও করতে হয় না। তারপরও তথাকথিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চলমান আছে। জনগণের সরকার। জনকল্যাণই যে সরকারের ঘোষিত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, বিষয়টি তাদের গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার।
এমনিতেই সমাজের উপরিকাঠামো অপরাধ-দুর্নীতিতে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এরপর ভিত্তিকাঠামোতেও যদি একই হাওয়া প্রবলভাবে বইতে শুরু করে, তখন বোধ হয় আর সামাল দেওয়ার সময়-সুযোগ থাকবে না। সবকিছু নিয়েই ডুবতে হবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে