রাবারের নতুন জাত উদ্ভাবন

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ২২
Thumbnail image

দেশে চাষ করা রাবার গাছে মেলে না উচ্চ মাত্রার ল্যাটেক্স। তাই মালয়েশীয় উচ্চ ফলনশীল একটি রাবারগাছের জাতকে ক্লোন করে রাবারগাছের নতুন জাত উদ্ধাবন করেছে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। মালয়েশিয়ান পিবি ৩৫০ জাতের রাবারগাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে রাবারের এই নতুন জাতটি উদ্ভাবন করেন গবেষকেরা। নতুন এই জাতের নাম দেওয়া হয়েছে বিএফআরআই রাবার লাইন এমআর ০০১।

এ বিষয়ে বিএফআরআইয়ের গবেষক ড. মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশে চাষ করা রাবারগাছ থেকে উচ্চ মাত্রায় ল্যাটেক্স পাওয়া যায় না। যে কারণে প্রায়ই লোকসান গুনতে হয় রাবার বাগান মালিকদের। তাই কীভাবে উচ্চ ফলনশীল রাবার জাত উদ্ভাবন করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। এর অংশ হিসেবে উচ্চ মাত্রায় ল্যাটেক্স দেওয়া মালয়েশিয়ান একটি রাবার গাছের জাতকে ক্লোন করে নতুন এই জাতটি উদ্ভাবন করেছি।’

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, নতুন আবিষ্কৃত রাবারের এই জাতটির মাঠ পর্যায়ের গবেষণা এখনো শেষ হয়নি। নতুন জাতের গাছগুলো বর্তমানে বিএফআইডিসির দাঁতমারা রাবার বাগানে মাঠ পর্যায়ের গবেষণার জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

এই রাবার গাছগুলো প্রতিবছর কী পরিমাণ ল্যাটেক্স দেবে তা ওই গবেষণার পর জানা যাবে উল্লেখ করে এই গবেষক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা দেখেছি, গাছগুলোর বিকাশ অন্য গাছের তুলনায় অনেক ভালো।’

নতুন জাতের রাবারগাছ আবিষ্কারের পর তাঁরা সেটি নিবন্ধনের জন্য বন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিএফআরআই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ান রাবার বোর্ড থেকে বীজ সংগ্রহ করেন সংস্থাটির গবেষকেরা। এরপর চারা উৎপন্ন করার জন্য বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিভিকালচার জেনেটিক্স বিভাগের আর্দ্র ঘরে বালু দিয়ে তৈরি বীজ বপন ক্ষেত্রে সেগুলো বপন করা হয়। এর ১০টি চারার মধ্যে ৫টি চারা মাটি এবং গরুর গোবরমিশ্রিত পলিব্যাগে স্থানান্তর করা হয়। এরপর সেগুলোর বৃদ্ধির জন্য আর্দ্র ঘর থেকে নার্সারিতে সূর্যের আলোয় রাখা হয়। সবগুলো চারা পলিব্যাগে ভালোভাবে বেড়ে ওঠে এবং বাড (কলম) গ্রাফটিং করার উপযুক্ত হয়ে উঠে।

এরপর ২০১৯ সালের মার্চ এপ্রিল মাসে চারা গাছগুলো প্রথম বাড গ্রাফটিং করা হয়। সফল বাড গ্রাফটিংয়ের পর সেগুলোর সঙ্গে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাদগাঁও রাবার বাগানের উচ্চ মাত্রায় ল্যাটেক্স দেওয়া কয়েকটি গাছ নির্ধারণ করে সেগুলো থেকে বীজ এনে বাড গ্রাফটিং করা হয়। এরপর ২০২১ সালে বাড গ্রাফটিং করা নতুন জাতের চারাগুলো বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) দাঁতমারা রাবার বাগানে রোপণ করা হয়। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে গবেষণার জন্য সেখানে রাবার গাছগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

বালু ও দোআঁশ দুই ধরনের মাটিতে এই জাতের রাবারগাছ চাষ করা যায় বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, জুন থেকে আগস্টের মধ্যে রাবারের এই নতুন জাতের চারাগুলো রোপণ করতে হয়। চারা রোপণ থেকে ল্যাটেক্স উৎপন্ন পর্যন্ত একটি রাবার গাছের চার বছর সময় লাগবে। সমতল ভূমিতে প্রতি হেক্টরে ৪৪০টি এবং পাহাড়ি ভূমিতে ৪৪৫টি রাবার গাছ রোপণ করতে হবে। গাছগুলোতে সার প্রয়োগের খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। প্রয়োজনে এক থেকে চার বছর বয়সী রাবারগাছে ইউরিয়া ১০০ গ্রাম, টিএসপি ৩০ গ্রাম এবং এমওপি ৩০ গ্রাম সার দিতে হবে। ৫ থেকে ৭ বছর বয়সী গাছে ইউরিয়া ১৬০ গ্রাম, টিএসপি ৫০ এবং এমওপি ৫০ গ্রাম দিতে হবে। অন্যদিকে ৭ বছরের বেশি বয়সী গাছে ইউরিয়া সার ৩০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম এবং এমওপি ১০০ গ্রাম দেওয়ার পরামর্শ দেন গবেষকেরা।

ড. মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, মাঠ পর্যায়ের গবেষণায় নতুন রাবারগাছগুলোতে কোনো রকম রোগবালাই দেখা দেয়নি। এই গাছগুলোর বিকাশও ভালো হয়েছে। এক বছর বয়সে এই রাবার গাছগুলো গড়ে ১৬০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। প্রতিটি পাতা ২০ সেন্টিমিটার এবং পাতাগুলোর স্টিম গড়ে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। দেশে চাষ করা প্রতি হেক্টর রাবার বাগান থেকে গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি ল্যাটেক্স পাওয়া যায়। যে মাদার গাছ থেকে ক্লোন করে নতুন জাতটি আবিষ্কার করা হয়েছে, ওই গাছগুলো থেকে প্রতি হেক্টরে ২ হাজার কেজি পর্যন্ত রাবার পাওয়া যায়। এই নতুন জাত থেকে উচ্চ মাত্রায় ল্যাটেক্স পাওয়ার আশার প্রকাশ করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত