খুলনা-৩: জয়-পরাজয়ে ‘ফ্যাক্টর’ শ্রমিকেরা

শেখ আবু হাসান, খুলনা
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৩, ১১: ৩২

দেশের সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ছিল এ এলাকায়। ছিল এশিয়ার সবচেয়ে বড় নিউজপ্রিন্ট মিল (কাগজের কল)। হার্ডবোর্ড মিলও ছিল। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই খুলনা-৩ আসনের ভোটের মাঠ মহানগরীর খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানার আয়ত্তে থাকা এলাকায় শ্রমিকদের বেশ আধিপত্য ছিল। সব কটি কারখানা একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই আধিপত্য অনেকটা খর্ব হয়ে গেছে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে তাঁদের নিয়ে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারও ভোটের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে এই শ্রমিকদের ওপর।

বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তোড়জোড় শুরু করেছেন আগেভাগেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান আবারও এ আসনে দলের মনোনয়ন পাবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত বলে মনে করছেন নেতারা। তাঁরা কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, এ আসনে মন্নুজান সুফিয়ানের বিকল্প গড়ে ওঠেনি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা এস এম কামাল হোসেন, দৌলতপুর থানা কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) চেয়ারম্যান শেখ সৈয়দ আলীও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীরা দাবি করেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আসনটি নিজেদের ঘরে তুলতে পারবেন। দলটি নির্বাচনে গেলে কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মো. রকিবুল ইসলাম বকুলের এ আসনের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইবেন নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম। জাতীয় পার্টি খুলনা মহানগর কমিটির সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং কেন্দ্রীয় শ্রমিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনের প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খুলনা মহানগর কমিটির নির্বাহী সদস্য শেখ হাসান ওয়ারেছুল করিম মনোনয়ন চাইতে পারেন। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) থেকে দলের খুলনা জেলা কমিটির আহ্বায়ক জনার্দন দত্ত নান্টু প্রার্থী হতে পারেন।

২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শ্রমিকনেত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। এর আগে ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা আশরাফ হোসেন। সরেজমিনে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে ভোটের মাঠে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পদ-প্রত্যাশীদের নামে রংবেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন টানানো হয়েছে। প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা আবু সুফিয়ান নিহত হওয়ার পর তাঁর স্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিক লীগের নেতৃত্বে আসেন। একপর্যায়ে তিনি শ্রমিকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

তবে আওয়ামী লীগের আরেক নেতা এস এম কামাল হোসেন একসময় খুলনায় দাপটের সঙ্গে ছাত্ররাজনীতি করেছেন। নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। তবে হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নেবে, তিনি তা মাথা পেতে নেবেন।

অপরদিকে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি। দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা মনে করেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি রকিবুল ইসলামকে প্রার্থী করলে আসনটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি খুলনার রাজনীতিতে সক্রিয় হন। দলের অনেকে মনে করেন, সাবেক নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পরে খুলনা মহানগর এবং জেলা বিএনপির রাজনীতিতে রকিবুল ইসলাম বকুলের প্রভাব রয়েছে।

বিএনপির আরেক নেতা তরিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছেন। একসময় দলের সব আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁকে রাজপথে দেখা যেত। কিন্তু নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারী হওয়ায় দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে তাঁকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না।

তরিকুল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলের সব আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। দল তাঁকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত