ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের হাওয়ায় সরব বরিশালের গ্রামগঞ্জ। কিন্তু তৃণমূলের মানুষের সেবাপ্রদানকারী ইউনিয়ন পরিষদগুলোর ভবনের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। কোনো কোনো ইউনিয়ন পরিষদ ভবন জরাজীর্ণ, আবার কোনোটা চলছে ভাড়া করা স্থাপনায়। নদীভাঙনের কবলেও পড়েছে কিছু ভবন। বরিশালের অন্তত দেড় ডজন ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের অবস্থা বেহাল। সংশ্লিষ্ট ইউপির জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষ মনে করেন নিজস্ব ভবন না থাকায় সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চলছে ভাড়া বাসায়। সেখানকার স্থানীয় জনসাধারণ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগে। এখন ভবন না থাকায় জনগণের সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, বহু বছরের পুরোনো একটি ভবন থেকে ছাদ ও দেয়াল খসে পড়েছে। জানালা খুলে দেখা যায় একটি ভুতুড়ে বাড়ির মতো।

চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহতাব হোসেন শুরুজ বলেন, ২০১২ সালে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বহু বছরের পুরোনো ওই ভবনটির ছাদের পলেস্তারা একেবারেই ধসে পড়ে ছাদ চুঁইয়ে ভেতরে পানি পড়ত। তাই সেখানে অফিস করা সম্ভব হচ্ছিল না। এরপর থেকে তালতলী বন্দরে একটি ভাড়া ভবনে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ভাড়া ভবনে কাজ করা খুবই কষ্টসাধ্য।

সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন জরাজীর্ণ। একই অবস্থা সদরের সায়েস্তাবাদ ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের। চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন কীর্তনখোলা নদীভাঙনের কবলে পড়েছে।

মেঘনা ঘেরা বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম ভবন সংকটে ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার চর গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে জরাজীর্ণ টিনশেড ভবনে। চর গোপালপুরের ইউপি চেয়ারম্যান সামশুল বারী মনির বলেন, পরিষদের যে জমি আছে তা তেঁতুলিয়া নদী ঘেঁষা হওয়ায় ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তাই সরকার ভবন করতে অনীহা প্রকাশ করেছে। যে কারণে ইউনিয়ন পরিষদে যেমন জনসাধারণ আসছেন না, তেমনি পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংরক্ষণও কঠিন হয়ে পড়েছে।

একইভাবে উপজেলার আলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে অস্থায়ী কার্যালয়ে। জয়নগর, দরিরচর, খাজুরিয়া, জাঙ্গালিয়া, নবগঠিত উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের অবস্থাও একই। শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ নদীভাঙনের কবলে থাকায় ভবন নির্মাণ হচ্ছে না।

উজিরপুরের হারতা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বাজারের ভাড়া বাসায় পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হরেন রায় বলেন, ইউনিয়নের এরিয়া নিয়ে টানাটানির কারণে ভবন হচ্ছে না। এতে গ্রাম আদালত ও তথ্য কেন্দ্র ভাড়া বাসায় পরিচালিত হচ্ছে। ভবন না থাকায় জনগণ প্রশ্ন তুলছেন এমনটাই জানালেন চেয়ারম্যান হরেন রায়। একই অবস্থা উপজেলার জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের। সেখানকার কারফা বাজারে দোকান ভাড়া করে কার্যক্রম চলছে।

বাকেরগঞ্জ উপজেলার নেয়ামতি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটিরও জরাজীর্ণ অবস্থা। সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন মাসুম শরীফ বলেন, ভবন না থাকায় জনগণকে সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। একই পরিস্থিতি উপজেলার গারুরিয়া ও কলসকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের।

বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমাতপুর ইউনিয়নে ভূমি জটিলতার কারণে নতুন ভবন নির্মাণ আটকে আছে। বর্তমানে যে ভবন আছে তাতে বৃষ্টি হলেই আশপাশে পানি জমে যায়। যার ফলে সেবা নিতে আসা মানুষকে থাকতে হয় দাঁড়িয়ে। রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরোয়ার মাহমুদ জানান, পুরোনো ভবন খুব ঝুঁকিপূর্ণ। ঝড়-বৃষ্টিতে ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ে কার্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে যায়।

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসনের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বরিশালের কোনো কোনো ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা নেই, তাই ভবন করা যাচ্ছে না। কোনোটা আবার নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। যখনই পরিদর্শনে যাওয়া হয় এগুলো পর্যালোচনা করে সরকারকে অবহিত করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যানরা যদি জমি ব্যবস্থা করে দেন এবং সরকারকে অবহিত করা হয় তবে ইউপি ভবন নির্মাণের অনুমোদনে দ্রুত হবে।