Ajker Patrika

দাম

সম্পাদকীয়
দাম

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে বিপদে পড়েছে সাধারণ মানুষ। দাম বাড়ল কি না, সে আতঙ্ক নিয়ে প্রতিদিনই ঘুম ভাঙে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের। আর যার আয় নেই, তার অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। বাজারদরের ওঠা-নামার প্রশ্ন নেই, ওঠাটাই এখন একমাত্র সত্য। এ অবস্থা চলতে থাকলে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে মানুষ।

দাম বাড়ার দায়ভার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর চাপিয়ে দেওয়া খুব সহজ। তেলের দাম বাড়ার পর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম যে যার মতো বাড়িয়ে নিয়েছে। ব্যবসায় সততার মূল্যটা এ ক্ষেত্রে খুব একটা নজরে আসেনি। দাম বাড়ানোর আগে মজুত করা পণ্য ধরে রেখেছেন দোকানিরা, বেশি দামে তা বিক্রি করেছেন পরে। ব্যবসা থেকে নীতি-নৈতিকতা একেবারে অদৃশ্য হয়ে গেলে বাজারব্যবস্থাই তো ভেঙে পড়ে, কারও ওপর তখন আর আস্থা রাখা যায় না।

কথাটা ঠিক, ইউরোপের এই যুদ্ধ গোটা পৃথিবীকেই এক অচলাবস্থার দিকে নিয়ে গেছে। ইউরোপের দুঃখ আর এশিয়া-আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকার দুঃখ এক নয়। তাদের দারিদ্র্যও এক নয়। উপনিবেশের ‘কল্যাণে’ ইউরোপের অনেক দেশই অন্তত তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তির একটা সুঠাম রূপ দিতে পেরেছে। কিন্তু এশিয়া-আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকার যে দেশগুলো শোষণের শিকার হয়েছে, তাদের পক্ষে এই প্রতিবন্ধকতা জয় করে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ কই? ভাবনার এটা একটা দিক বটে। কিন্তু আজ বলব অন্য আরেকটি সংকট নিয়ে। এ দেশের মাথামোটা আমলাতন্ত্রের পেছনে খরচও আমাদের পিছিয়ে থাকার একটি বড় কারণ বটে। ব্রিটিশরাজ আমাদের দেশে সেই মাথাভারী প্রশাসনের জন্ম দিয়ে গেছে, তা জনগণের সেবক না হয়ে জনগণকেই তাদের প্রজা বানিয়ে রেখেছে। আমরা মুখে বলি, জনগণের টাকায় এই প্রশাসন চলে, কিন্তু যাঁরা জনগণের করের টাকায় বেতন নেন এবং রাজার হালে চলেন, তাঁরা কি কখনো নিজেদের জনগণের সেবক বলে ভেবেছেন?

সাঁতার শিখতে, কাচকি মাছ রান্না, গাছের পরিচর্যা ও কম্পিউটারে বাংলা টাইপিং শিখতে কেউ যদি সদলবলে বিদেশ সফরে যান, তাহলে আমরা এখন আর অবাক হব না। কারণ, আমরা মেনে নিয়েছি, সরকারের ‘মাল’ সৃষ্টিই হয়েছে ‘দরিয়া’য় ঢালার জন্য। আর তারই ফাঁকফোকর দিয়ে চুইয়ে পড়া আর্থিক ড্রেনেজ সিস্টেম থেকে মুফতে কোটিপতি হয়ে যান কোনো কোনো সরকারি ড্রাইভার। ঢাকাসহ নানা শহরে গড়ে ওঠে তাঁর বাড়ি, অফিসের গাড়ির পাশাপাশি নিজের গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ান তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা।

কথাগুলো কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্যে বলা নয়। আচরণের এই অভব্যতা সৃষ্টি হয়েছে মাথাভারী প্রশাসন তৈরি করার কারণেই। তারা এতটাই শক্তিশালী যে এ ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দেওয়া সহজ নয়। দেশের জনগণ যখন অর্থাভাবে কিংবা মুদ্রাস্ফীতির কারণে বেসামাল, তখন মাথাভারী প্রশাসনের অযৌক্তিক খরচের অন্তত ৩০ শতাংশ কর্তন করলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাজারে একটা সাম্যাবস্থা আসতে পারে। দেশবাসীকে বাঁচাতে সে দিকটায় দৃষ্টি দেওয়া খুব দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজারে বিমানঘাঁটিতে গুলি: যা বলছে আইএসপিআর, নিহতের মা-বাবা ও স্থানীয়রা

কক্সবাজার বিমান ঘাঁটিতে দুর্বৃত্তদের হামলা, সংঘর্ষে নিহত ১

ভারতের কাছে হারে পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্টকে ধুয়ে দিলেন শোয়েব

নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক নিয়ে কী প্রস্তাব এল, জানালেন আখতার

মালিককে ঘরে আটকে রেখে খামারে পেট্রল ঢেলে আগুন, পুড়ল ৮ গরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত