দাম বেশি, সাড়া মিলছে না ক্রেতার

নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ৪৬
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১৬: ২২

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ভালো কেনাবেচার আশায় রোজা শুরুর আগে থেকেই নাটোর শহরের শতাধিক বিপণিবিতান প্রস্তুতি নিতে শুরু করে; পাশাপাশি এবারই প্রথমবার ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকটি অভিজাত ব্র্যান্ড আউটলেট নাটোর শহরে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। তবে কোনোটিই আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছে না। তাই এখনো জমে ওঠেনি ঈদের কেনাকাটা।

কেনাবেচায় খরার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকার কথা। আর ক্রেতাদের দাবি, স্বাভাবিকের তুলনায় এবার পোশাক, জুতা, কসমেটিকসহ সব পণ্যের দাম বেশি। উচ্চমূল্যে শুধু পোশাক কেনাই নয়, বেড়েছে পোশাক তৈরির মজুরিও। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে মজুরিও বেড়েছে বলে দাবি তাঁদের।

নাটোরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত দুই বছর করোনার আর্থিক ক্ষতি এ বছর কাটিয়ে ওঠার আশা করলেও এখন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে বাজারে কেনাবেচা পুরোদমে শুরু হওয়ার আশা তাঁদের।

বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে ক্রেতাসমাগম কম থাকায় ভিড় বেড়েছে বুটিক হাউস ও অনলাইন শপগুলোতে। নারী ক্রেতারা দেখেশুনে পোশাক কিনতে বাজারের তুলনায় বুটিক হাউসগুলোতে ছুটছেন। দামও বেশ সন্তোষজনক বলে জানান তাঁরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে শুধু শহরের উত্তরা সুপার মার্কেট, মন্দির মার্কেট, সাদেক কমপ্লেক্স, রোজী সুপার মার্কেটসহ প্রতিটি মার্কেট আর ব্র্যান্ড আউটলেটগুলোতে বাহারি আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছেন। তবে দিনে এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায় না। ক্রেতারা কেনার চেয়ে পণ্য ঘুরে দেখে চলে যাচ্ছেন।

শহরের কাপুড়িয়াপট্টি এলাকায় কাপড় কিনতে আসা শায়লা পারভীন নামের এক গৃহিণী বলেন, ‘শুধু গজ কাপড়ের দামই গজপ্রতি বেড়েছে ১০ টাকা। অথচ গজ কাপড় বছরের পর বছর একই দামে কিনেছি। ৫০ টাকা গজের কাপড় ৭০ টাকায় কিনলাম।’

সাজিদ আহমেদ নামের এক ক্রেতা বলেন, একটি খাদি পাঞ্জাবির দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা হওয়াটা স্বাভাবিক। অথচ বিক্রেতারা দাম চাইছেন ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

মিলন হোসেন নামের উত্তরা সুপার মার্কেটের এক বিক্রেতা বলেন, ক্রেতারা বাজার ঘুরে পোশাক দেখে দামাদামি করে চলে যান। পোশাক তৈরির মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও বাড়তি। এ ছাড়া কাপড়ের দাম বেশি। তবে ঈদের তিন চার দিন আগে কেনাবেচা বাড়বে।

স্টেশন বাজার রোজী মার্কেটের বিক্রেতা আলী আহমেদ বলেন, এখনো পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়নি। বেশির ভাগ ক্রেতাই এসে কাপড় দেখে দামাদামি করে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ কিনছেনও। তবে সে সংখ্যা খুব কম।

শহরের প্রাণকেন্দ্র পিলখানা এলাকার ব্র্যান্ড শপ চারুলতার মেগা মলের বিপণন নির্বাহী আব্দুল বারী বলেন, এবারের ঈদে কেনাবেচা একদমই কম। একই অবস্থা তাঁদের অন্য আউটলেটগুলোতেও। দিনের বেলায় সেভাবে ক্রেতারা না এলেও রাতে বিক্রি কিছুটা বাড়ে। তিনি আশা করছেন ২২ রমজানের পর পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হবে।

শহরের উত্তর পটুয়াপাড়া এলাকার আরপি বুটিক হাউসের স্বত্বাধিকারী রত্না পোদ্দার বলেন, অনেক নারী ক্রেতাই ভিড় এড়াতে বুটিক হাউসগুলোতে আসছেন। দাম হাতের নাগালে থাকায় বিক্রি ভালো হচ্ছে।

এদিকে, মজুরি বেড়েছে শার্ট, প্যান্ট ও পাঞ্জাবি তৈরিতেও। ঈদ উপলক্ষে প্যান্ট তৈরির মজুরি ৪০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫০ টাকা, শার্টের মজুরি ৩০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫০, পাঞ্জাবির মজুরি ৪০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫০ টাকা। মজুরি বাড়ার কারণ হিসেবে দরজিরা বলছেন, জামা কাপড় তৈরির কারিগরেরা অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় দক্ষ কারিগর-সংকট রয়েছে।

এদিকে জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও যানজট এড়াতে কাজ করেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, শহরের প্রধান বিপণিবিতানগুলোর আশপাশে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। তিনি আশা করছেন ক্রেতারা ঈদবাজারে নির্বিঘ্নে কেনাকাটা সম্পন্ন করতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত