মোনায়েম সরকার
বাজারে খবরের চেয়ে গুজব বেশি। রাজনৈতিক নেতাদের মুখে সমঝোতা নয়, সংঘাতের সুর। গণমাধ্যমে যেসব খবর ছাপা হয়, তাতে মানুষের আস্থা কম। মানুষ নানা কানকথা শুনছে আর উদ্বিগ্ন হয়ে একজন আরেকজনের কাছে জানতে চাইছে, কী হতে চলেছে দেশে? নির্বাচন কি ঠিক সময়ে হবে? নাকি রাজপথেই ফয়সালা? বিএনপির সভা-সমাবেশে উপস্থিতি বাড়ছে, কিন্তু সেটা এমন নয়, যা দেখে সরকারের ভীত হওয়ার অবস্থা হয়েছে।
বিএনপি হুমকি দিচ্ছে সরকার পতনের। সরকারও পাল্টা হুমকি দিয়ে মাঠ দখলে রাখার কৌশল নিয়েছে। ১৮ অক্টোবর বিএনপির একটি ডেডলাইন ছিল। ওই দিন ঢাকায় একটি বড় শোডাউন করে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে দলটি। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে পূজার ছুটি পর্যন্ত সময় দিয়েছে সরকারকে। বলা হয়েছে, পতন না হওয়া পর্যন্ত থেমে থাকবে না কর্মসূচি। আর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পাল্টা বলা হয়েছে, বিএনপিকে দাঁড়াতেই দেওয়া হবে না। অবরোধের ডাক দিলে তাদের পাল্টা অবরোধ করা হবে। বিএনপির দাবি মেনে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন না, শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী—এটাই বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের শেষ বার্তা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। এই সময়ে দেশ নির্বাচনী আবহে মেতে ওঠার কথা থাকলেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ভোটের প্রস্তুতি নিলেও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে ব্যস্ত বিএনপি। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহল ও দেশীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করলেও সেদিকে নেতাদের আগ্রহ কম। সংলাপের বিষয়টি একেবারে নাকচ করা না হলেও যেভাবে কথা বলা হচ্ছে, তাতে মনে হয় ওটায় কাজ হবে না।
বিএনপির নেতারা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানার ঘোষণা এলেই কেবল সংলাপে বসবেন তাঁরা। আর সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে কোনো সংলাপ হবে না। এই অবস্থায় রাজপথে শক্তির মহড়া দেখাতে ফের মুখোমুখি দুই দল। এতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি বলছে, দুর্গাপূজা শেষ হওয়ার পরই তারা কঠোর আন্দোলনে যাবে। বিএনপি বলছে, এখন থেকে তাদের আন্দোলন হবে মূলত রাজধানী ঢাকামুখী। তবে বিএনপির এই মরণকামড়ের ভয়ে শঙ্কিত নয় ক্ষমতাসীনেরা। বিএনপিকে চাপে রাখতে কৌশলী আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে রাজপথে রয়েছে। সেই সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোও প্রস্তুত আছে বলা হচ্ছে। বিএনপি অবরোধ বা অন্য কোনো ধরনের সহিংস কর্মসূচির ঘোষণা দিলে প্রতিরোধে প্রস্তুত ক্ষমতাসীনেরা।
সারা দেশ থেকে সন্ত্রাসীদের ঢাকায় এনে বিএনপি নাশকতার ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোনো আলটিমেটাম দিয়ে লাভ হবে না। সংবিধান থেকে একচুলও সরবে না সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণবিপ্লবের চিন্তা করছে বিএনপি। তাদের এই স্বপ্ন কখনো বাস্তবায়িত হবে না। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নাশকতার সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
শারদীয় দুর্গাপূজার সময় বিএনপি-জামায়াতসহ মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলো বড় ধরনের নাশকতা করতে পারে। অতীতের মতো বড় ধরনের সহিংসতা বা তাণ্ডব চালাতে পারে। নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন কোনোভাবেই বিনষ্ট না করতে পারে, সে জন্য সারা দেশে নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। পূজার সময়টা নিয়ে বিএনপিও দুর্ভাবনায় নেই, তা নয়। কোনো অঘটন ঘটিয়ে তার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মতলব যাতে কোনো পক্ষ হাসিল করতে না পারে, সেদিকে বিএনপির নেতারা সতর্ক আছেন বলা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত অতন্দ্র প্রহরীর মতো রাজপথে থাকতে হবে। তফসিল ঘোষণা করা হলে দেশে একটি নির্বাচনী আমেজ তৈরি হবে এবং বিএনপির আন্দোলন মাঠে মারা যাবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আগামী ১০০ দিন দেশটাকে পাহারা দিতে হবে। বিএনপি ভেবেছে ঢাকা শহরে কয়েকটা মানববন্ধন করে, নয়াপল্টনে ২০-৩০ হাজার মানুষ জড়ো করে কিংবা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে, আগুন ধরিয়ে এই সরকারকে হটিয়ে দেবে। কিন্তু সেটা সম্ভব নয় বলে আওয়ামী লীগের এই নেতা মনে করেন। ২০১৩-১৪ সালেও অনেক চেষ্টা করেছিল। বহু গাড়ি ও মানুষ পুড়িয়েছিল; তবু শেখ হাসিনাকে হটাতে পারেনি। এবারও পারবে না।
অন্যদিকে, ‘এক দফা’ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বুধবারের সমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে শেষবারের মতো আলটিমেটাম দিয়ে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবারের সমাবেশে সারা দেশ থেকে লোক আনা হয়নি বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে ঢাকার বাইরে থেকে যে বিএনপির বহু কর্মী ঢাকায় এসেছেন, তা বিভিন্নভাবেই জানা যাচ্ছে। তবে বিএনপিও যে সরকারের ‘হামলা-মামলা’র বিষয়টি বিবেচনায় রাখছে না তা নয়। বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, পূজার পর চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগেই সরকার পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করে এমন আবহ সৃষ্টি করবে, যাতে মাঠের নেতারা ভীত হয়ে পড়েন। এ জন্যই আন্দোলনের কর্মসূচিও তারা রয়েসয়ে দিচ্ছেন। এই মুহূর্তে নির্বাচনের তফসিল ঠেকানোই তাদের টার্গেট। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভবনমুখী পদযাত্রা, ঘেরাও, অবস্থান ও অবরোধ, এমনকি পরিস্থিতি বুঝে হরতালের কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতিও দলটি নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
বিএনপির নেতাদের উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রে খবর ছাপা হয়েছে, সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য ৭ থেকে ১০ দিনের একটি লাগাতার কর্মসূচি দেবে দলটি। নেতারা মনে করছেন, ‘এবার হয় এসপার না হয় ওসপার হবে।’
তাঁদের এই আস্থার কারণ আমেরিকাসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অতি আগ্রহ। বিশেষ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ভূমিকায় বিএনপি যে যারপরনাই সন্তুষ্ট, সেটা দলের কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যেই বলেছেন। একজন তো তাঁকে ‘অবতার’ বলেও উল্লেখ করেছেন। আমেরিকা যে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি খুব সহানুভূতিসম্পন্ন নয়, তা প্রধানমন্ত্রী নিজেই একাধিকবার বলেছেন। বিএনপি এই বিষয়টিই ‘ক্যাশ’ করতে চাইছে। তবে বিএনপির সামনে এখনো বড় অন্তরায় হয়ে আছে প্রতিবেশী ভারতের মনোভাব। ভারত আওয়ামী লীগের প্রতি আর দৃঢ়ভাবে নেই বলে কোনো কোনো মহল প্রচার করলেও এই ধারণার পক্ষে শক্ত কোনো যুক্তি নেই। বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায়িক ও ভারতবিরোধী সরকার ক্ষমতায় আসুক, সেটা ভারত যে চায় না, তা বোঝার জন্য খুব তথ্য-তত্ত্বের সন্ধান করা নিষ্প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত যে সুবিধা পেয়েছে, তা তারা ভুলবে বলে মনে হয় না। আবার ভূরাজনৈতিক কারণে ভারতকে হোস্টাইল করে আমেরিকা একতরফা কোনো সিদ্ধান্ত নেবে, এমনটাও অনেক আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকই মনে করেন না।
আমেরিকা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া আর কিছু চায় বলে এখনো মনে হয় না। আর আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথাই বলছে। ফলে নির্বাচন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে আমেরিকার বড় দ্বন্দ্ব না হওয়ারই কথা। কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সে ব্যাপারে আমেরিকা খুব কনসার্ন বলেও মনে হয় না। সব মিলিয়ে এটা মনে হয় না যে নির্বাচন ছাড়াই মাঠের শক্তি পরীক্ষায় রাজনৈতিক সংকটের ফয়সালা হয়ে যাবে।
তবে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান ‘নির্বাচন আদৌ হবে কি না, এখনই বলতে পারব না’ বলে মন্তব্য করে অনেকের মনেই সন্দেহের বীজ ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তিনি কাজটি ভালো করেননি। দেশে নির্বাচন না হওয়ার মতো কোনো পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি।
বিএনপির দেওয়া ডেডলাইন নিয়ে বিচলিত হওয়ারও কিছু নেই। বিএনপি এর আগে বহু সময় বেঁধে দিয়েছে। সরকারের পতন না হলে আর ঘরে ফিরে যাবে না বলেছে। সরকারের পতন হয়নি। তাই বলে কি বিএনপির কেউ ঘরের বাইরে আছেন? আমাদের দেশের রাজনীতি হয়ে পড়েছে বুলিসর্বস্ব। তাই কারও মুখের কথায় বিশ্বাস রেখে শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবস্থা বাস্তবে নেই। ২৮ অক্টোবর কিংবা ৩ নভেম্বর আসবে এবং যাবে। এই দুই দিনে রাজনীতির পটপরিবর্তনের মতো কিছু ঘটবে বলে মনে করার কারণ এখনই নেই। এর আগে ১০ ডিসেম্বর এসেছে, চলেও গেছে, ১৮ অক্টোবর নিয়েও তো কত কথা ছিল। কিছু কি হলো?
নির্বাচন এলে আমাদের দেশে এমনিতেই অনেক কথা হয়। বিষয়টি যেহেতু ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই বেশি কথা হওয়াই তো স্বাভাবিক। ক্ষমতা ছাড়া আমাদের রাজনীতিকেরা আর কিছু কি চান?
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক; মহাসচিব, বিএফডিআর
বাজারে খবরের চেয়ে গুজব বেশি। রাজনৈতিক নেতাদের মুখে সমঝোতা নয়, সংঘাতের সুর। গণমাধ্যমে যেসব খবর ছাপা হয়, তাতে মানুষের আস্থা কম। মানুষ নানা কানকথা শুনছে আর উদ্বিগ্ন হয়ে একজন আরেকজনের কাছে জানতে চাইছে, কী হতে চলেছে দেশে? নির্বাচন কি ঠিক সময়ে হবে? নাকি রাজপথেই ফয়সালা? বিএনপির সভা-সমাবেশে উপস্থিতি বাড়ছে, কিন্তু সেটা এমন নয়, যা দেখে সরকারের ভীত হওয়ার অবস্থা হয়েছে।
বিএনপি হুমকি দিচ্ছে সরকার পতনের। সরকারও পাল্টা হুমকি দিয়ে মাঠ দখলে রাখার কৌশল নিয়েছে। ১৮ অক্টোবর বিএনপির একটি ডেডলাইন ছিল। ওই দিন ঢাকায় একটি বড় শোডাউন করে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে দলটি। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে পূজার ছুটি পর্যন্ত সময় দিয়েছে সরকারকে। বলা হয়েছে, পতন না হওয়া পর্যন্ত থেমে থাকবে না কর্মসূচি। আর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পাল্টা বলা হয়েছে, বিএনপিকে দাঁড়াতেই দেওয়া হবে না। অবরোধের ডাক দিলে তাদের পাল্টা অবরোধ করা হবে। বিএনপির দাবি মেনে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন না, শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী—এটাই বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের শেষ বার্তা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। এই সময়ে দেশ নির্বাচনী আবহে মেতে ওঠার কথা থাকলেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ভোটের প্রস্তুতি নিলেও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে ব্যস্ত বিএনপি। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহল ও দেশীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করলেও সেদিকে নেতাদের আগ্রহ কম। সংলাপের বিষয়টি একেবারে নাকচ করা না হলেও যেভাবে কথা বলা হচ্ছে, তাতে মনে হয় ওটায় কাজ হবে না।
বিএনপির নেতারা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানার ঘোষণা এলেই কেবল সংলাপে বসবেন তাঁরা। আর সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে কোনো সংলাপ হবে না। এই অবস্থায় রাজপথে শক্তির মহড়া দেখাতে ফের মুখোমুখি দুই দল। এতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি বলছে, দুর্গাপূজা শেষ হওয়ার পরই তারা কঠোর আন্দোলনে যাবে। বিএনপি বলছে, এখন থেকে তাদের আন্দোলন হবে মূলত রাজধানী ঢাকামুখী। তবে বিএনপির এই মরণকামড়ের ভয়ে শঙ্কিত নয় ক্ষমতাসীনেরা। বিএনপিকে চাপে রাখতে কৌশলী আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে রাজপথে রয়েছে। সেই সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোও প্রস্তুত আছে বলা হচ্ছে। বিএনপি অবরোধ বা অন্য কোনো ধরনের সহিংস কর্মসূচির ঘোষণা দিলে প্রতিরোধে প্রস্তুত ক্ষমতাসীনেরা।
সারা দেশ থেকে সন্ত্রাসীদের ঢাকায় এনে বিএনপি নাশকতার ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোনো আলটিমেটাম দিয়ে লাভ হবে না। সংবিধান থেকে একচুলও সরবে না সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণবিপ্লবের চিন্তা করছে বিএনপি। তাদের এই স্বপ্ন কখনো বাস্তবায়িত হবে না। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নাশকতার সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
শারদীয় দুর্গাপূজার সময় বিএনপি-জামায়াতসহ মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলো বড় ধরনের নাশকতা করতে পারে। অতীতের মতো বড় ধরনের সহিংসতা বা তাণ্ডব চালাতে পারে। নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন কোনোভাবেই বিনষ্ট না করতে পারে, সে জন্য সারা দেশে নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। পূজার সময়টা নিয়ে বিএনপিও দুর্ভাবনায় নেই, তা নয়। কোনো অঘটন ঘটিয়ে তার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মতলব যাতে কোনো পক্ষ হাসিল করতে না পারে, সেদিকে বিএনপির নেতারা সতর্ক আছেন বলা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত অতন্দ্র প্রহরীর মতো রাজপথে থাকতে হবে। তফসিল ঘোষণা করা হলে দেশে একটি নির্বাচনী আমেজ তৈরি হবে এবং বিএনপির আন্দোলন মাঠে মারা যাবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আগামী ১০০ দিন দেশটাকে পাহারা দিতে হবে। বিএনপি ভেবেছে ঢাকা শহরে কয়েকটা মানববন্ধন করে, নয়াপল্টনে ২০-৩০ হাজার মানুষ জড়ো করে কিংবা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে, আগুন ধরিয়ে এই সরকারকে হটিয়ে দেবে। কিন্তু সেটা সম্ভব নয় বলে আওয়ামী লীগের এই নেতা মনে করেন। ২০১৩-১৪ সালেও অনেক চেষ্টা করেছিল। বহু গাড়ি ও মানুষ পুড়িয়েছিল; তবু শেখ হাসিনাকে হটাতে পারেনি। এবারও পারবে না।
অন্যদিকে, ‘এক দফা’ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বুধবারের সমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে শেষবারের মতো আলটিমেটাম দিয়ে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবারের সমাবেশে সারা দেশ থেকে লোক আনা হয়নি বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে ঢাকার বাইরে থেকে যে বিএনপির বহু কর্মী ঢাকায় এসেছেন, তা বিভিন্নভাবেই জানা যাচ্ছে। তবে বিএনপিও যে সরকারের ‘হামলা-মামলা’র বিষয়টি বিবেচনায় রাখছে না তা নয়। বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, পূজার পর চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগেই সরকার পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করে এমন আবহ সৃষ্টি করবে, যাতে মাঠের নেতারা ভীত হয়ে পড়েন। এ জন্যই আন্দোলনের কর্মসূচিও তারা রয়েসয়ে দিচ্ছেন। এই মুহূর্তে নির্বাচনের তফসিল ঠেকানোই তাদের টার্গেট। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভবনমুখী পদযাত্রা, ঘেরাও, অবস্থান ও অবরোধ, এমনকি পরিস্থিতি বুঝে হরতালের কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতিও দলটি নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
বিএনপির নেতাদের উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রে খবর ছাপা হয়েছে, সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য ৭ থেকে ১০ দিনের একটি লাগাতার কর্মসূচি দেবে দলটি। নেতারা মনে করছেন, ‘এবার হয় এসপার না হয় ওসপার হবে।’
তাঁদের এই আস্থার কারণ আমেরিকাসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অতি আগ্রহ। বিশেষ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ভূমিকায় বিএনপি যে যারপরনাই সন্তুষ্ট, সেটা দলের কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যেই বলেছেন। একজন তো তাঁকে ‘অবতার’ বলেও উল্লেখ করেছেন। আমেরিকা যে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি খুব সহানুভূতিসম্পন্ন নয়, তা প্রধানমন্ত্রী নিজেই একাধিকবার বলেছেন। বিএনপি এই বিষয়টিই ‘ক্যাশ’ করতে চাইছে। তবে বিএনপির সামনে এখনো বড় অন্তরায় হয়ে আছে প্রতিবেশী ভারতের মনোভাব। ভারত আওয়ামী লীগের প্রতি আর দৃঢ়ভাবে নেই বলে কোনো কোনো মহল প্রচার করলেও এই ধারণার পক্ষে শক্ত কোনো যুক্তি নেই। বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায়িক ও ভারতবিরোধী সরকার ক্ষমতায় আসুক, সেটা ভারত যে চায় না, তা বোঝার জন্য খুব তথ্য-তত্ত্বের সন্ধান করা নিষ্প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত যে সুবিধা পেয়েছে, তা তারা ভুলবে বলে মনে হয় না। আবার ভূরাজনৈতিক কারণে ভারতকে হোস্টাইল করে আমেরিকা একতরফা কোনো সিদ্ধান্ত নেবে, এমনটাও অনেক আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকই মনে করেন না।
আমেরিকা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া আর কিছু চায় বলে এখনো মনে হয় না। আর আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথাই বলছে। ফলে নির্বাচন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে আমেরিকার বড় দ্বন্দ্ব না হওয়ারই কথা। কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সে ব্যাপারে আমেরিকা খুব কনসার্ন বলেও মনে হয় না। সব মিলিয়ে এটা মনে হয় না যে নির্বাচন ছাড়াই মাঠের শক্তি পরীক্ষায় রাজনৈতিক সংকটের ফয়সালা হয়ে যাবে।
তবে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান ‘নির্বাচন আদৌ হবে কি না, এখনই বলতে পারব না’ বলে মন্তব্য করে অনেকের মনেই সন্দেহের বীজ ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তিনি কাজটি ভালো করেননি। দেশে নির্বাচন না হওয়ার মতো কোনো পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি।
বিএনপির দেওয়া ডেডলাইন নিয়ে বিচলিত হওয়ারও কিছু নেই। বিএনপি এর আগে বহু সময় বেঁধে দিয়েছে। সরকারের পতন না হলে আর ঘরে ফিরে যাবে না বলেছে। সরকারের পতন হয়নি। তাই বলে কি বিএনপির কেউ ঘরের বাইরে আছেন? আমাদের দেশের রাজনীতি হয়ে পড়েছে বুলিসর্বস্ব। তাই কারও মুখের কথায় বিশ্বাস রেখে শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবস্থা বাস্তবে নেই। ২৮ অক্টোবর কিংবা ৩ নভেম্বর আসবে এবং যাবে। এই দুই দিনে রাজনীতির পটপরিবর্তনের মতো কিছু ঘটবে বলে মনে করার কারণ এখনই নেই। এর আগে ১০ ডিসেম্বর এসেছে, চলেও গেছে, ১৮ অক্টোবর নিয়েও তো কত কথা ছিল। কিছু কি হলো?
নির্বাচন এলে আমাদের দেশে এমনিতেই অনেক কথা হয়। বিষয়টি যেহেতু ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই বেশি কথা হওয়াই তো স্বাভাবিক। ক্ষমতা ছাড়া আমাদের রাজনীতিকেরা আর কিছু কি চান?
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক; মহাসচিব, বিএফডিআর
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১২ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে