মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বোরো ধানে দেখা দিয়েছে মাজরা পোকার আক্রমণ ও ধানের মাইন পচা রোগ। পোকার আক্রমণে ধানের পাতা ও মাইন পচে নষ্ট হচ্ছে। ফলে ভালো ফলন নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি পোকার আক্রমণ থেকে ধান রক্ষার কোনো উপায় না পেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ৪ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও কয়েকটি এলাকায় আংশিক সেচের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু জায়গায় পোকার আক্রমণের খবর পাওয়ার পাওয়া গেছে। তবে কৃষি অধিদপ্তর থেকে এসব এলাকার কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও পোকার আক্রমণে ফলস নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা।

উপজেলার, রহিমপুর, মুন্সিবাজার ও পতনঊষার ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়, বোরো ধানের গাছে মাজরা ও এক ধরনের পোকায় ধানের মাইন কেটে দিচ্ছে, অনেক জায়গায় পোকায় ধানগাছের পাতা ছিদ্র করছে। এ ছাড়া ধানের পাতা শুকিয়ে বাদামি রং ধারণ করছে। উপজেলার রসুলপুর এলাকায় কৃষি অফিসের পরামর্শমতো কীটনাশক ছিটিয়েও ফল পাচ্ছে না কৃষক।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে গাছে শিষ আসার কথা। এরই মধ্যে ব্যাপক আকারে শুরু হয়েছে পোকার আক্রমণ। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় বাজারের কৃষি দোকানের কীটনাশক জমিতে ছিটিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। তাঁরা আরও জানান, চাষ ও সেচে এমনিতেই অনেক খরচ হয়েছে। এখন পোকায় আক্রমণ করেছে। বোরো ধানের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। তাঁদের আশঙ্কা, সময়মতো পোকা দমন করতে না পারলে বোরো উৎপাদন ব্যাহত হবে।

পতনঊষার ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকার আলামিন মিয়া ও ইসরাইল মিয়া জানান, তাঁরা আলাদাভাবে প্রায় আট একর জমিতে এবার বোরো চাষ করেছেন। আবাদি জমির প্রায় পুরোটাই পোকার আক্রমণের শিকার হয়েছে। কৃষি কার্যালয়ের লোকজন এসে পরামর্শ দিয়ে পোকা দমনে দুটি কীটনাশক ছিটানোর কথা বলছেন। এসব কীটনাশক ছিটিয়েও পোকা দমন করা যাচ্ছে না। প্রতিবার কীটনাশক ছিটাতে একরপ্রতি অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

তাঁদের মতোই উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ছয় কোট এলাকার কৃষক মুয়িদ আলী বলেন, ‘আমার চার একর বোরো ধান পোকা আক্রমণ করে নষ্ট করে ফেলছে। কীটনাশক ছিটিয়েছি, কিন্তু পোকার আক্রমণ একটুও কমেনি।’

উপজেলার কৃষক অজিত বাবু বলেন, ‘মুন্সিবাজার ইউনিয়নের আব্দুল কাইয়ুমসহ বেশ কয়েকজন কৃষক তাঁদের জমিতে পোকার আক্রমণের কথা জানান। তাঁরা জানান, সেচের সমস্যা ও অনেক টাকা খরচ করে এবার বোরো চাষ করেছেন। আর এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ধানগাছে শিষ বের হবে। এমন সময় পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এই পোকা ধানগাছের জন্য ক্ষতিকর। পোকা থেকে ফসল রক্ষায় কৃষি অফিস থেকে আমাদের সহযোগিতা করা হোক।’

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মূলত এই সময়ে মাজরা পোকা দেখা দেয়। ধানের শিষ বের হওয়ার আগে পোকায় গাছ কাটলে সেই গাছ আবার নতুন করে গজাবে।

মো. জনি খান আরও বলেন, ‘বোরো ধানে পোকার আক্রমণ থেকে গাছ রক্ষায় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পোকা দমনে ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের টিম কাজ করছে। পোকা দমনে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি কৃষকদের।’