রপ্তানি হিস্যায় পিছিয়ে চট্টগ্রাম

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬: ৫৪
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ৫০

ঢাকার তুলনায় সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে জাতীয় রপ্তানিতে চট্টগ্রামের হিস্যা কমছে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে যখন দেশের তৈরি পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তখন নানা সমস্যায় জর্জরিত এ খাতের আঁতুড়ঘর চট্টগ্রামের কারখানাগুলো।

করোনার কারণে চলতি অর্থবছরের শুরুতে গত জুলাই মাসে বিদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মকে চলে যায়। তবে এর ছয় মাস পর গত ডিসেম্বরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশে। এখন একের পর এক অর্ডার পাচ্ছে পোশাক কারখানাগুলো। নতুন বিনিয়োগে ব্যাংকের অসহযোগিতা, দক্ষ শ্রমিকের স্বল্পতাসহ নানা কারণে বিদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম। ১৯৮৫ সালে দেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ৩৯ শতাংশ হতো চট্টগ্রাম থেকে। সেখানে ৩৫ বছর পর ২০২১ সালে তা নেমে এসেছে মাত্র ১৫ শতাংশে।

গত তিন দশক ধরে জাতীয় রপ্তানিতে চট্টগ্রামের হিস্যা ধারাবাহিকভাবেই কমছে বলে জানিয়েছেন পোশাকশিল্প ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, চট্টগ্রামে জায়গার দাম অনেক বেশি। এ কারণে নতুন কারখানা স্থাপন করা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। এখানে ব্যাংকগুলোর প্রদান কার্যালয় না থাকায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে ঋণ প্রদানসহ আমদানি ঋণপত্র খোলার জন্য লিমিট বৃদ্ধিকরণ সংক্রান্ত বিষয়ে চট্টগ্রাম থেকে দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না। যে কারণে এখানে নতুন কারখানা স্থাপন করা অনেক কঠিন।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে সমুদ্র বন্দরসহ রপ্তানির অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগে দীর্ঘসূত্রতা, ক্রেতা কর্তৃক কমপ্লায়েন্সের বাধ্যবাধকতা প্রতিপালন, নতুন বিনিয়োগে ব্যাংকের অসহযোগিতা, দক্ষ শ্রমিকস্বল্পতা, বায়িং হাউসের ওপর নির্ভরশীলতা, গার্মেন্টসপল্লি গড়ে না ওঠায় চট্টগ্রাম থেকে তৈরি পোশাকশিল্পে রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের ক্ষমতা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন। পাশাপাশি শহরের বাইরে মিরসরাই ও আনোয়ারা ইকোনমিক জোনে স্বল্পমূল্যে পোশাকশিল্প সংশ্লিষ্ট কারখানা স্থাপনে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের দাবি করেন।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত গার্মেন্টস শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল ১৩৩টি। এর মধ্যে সচল ছিল ১২৬টি। ওই সময় দেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রায় ৩৯ শতাংশ হতো চট্টগ্রাম থেকে। এরপর ১৯৯৫ সালে এখানে তৈরি পোশাক কারখানা দ্বিগুণ হয়ে যায়। ওই সময় এখানে নিবন্ধিত পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল ৩৫৯টি। এর মধ্যে সচল ছিল ৩৪৫টি। তখন জাতীয় রপ্তানির ৩৪ শতাংশ হতো চট্টগ্রাম থেকে।

এরপর ধারাবাহিকভাবে চট্টগ্রামে পোশাক কারখানার সংখ্যা বাড়লেও জাতীয় রপ্তানিতে চট্টগ্রামের অংশগ্রহণ কমতে থাকে। ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত গার্মেন্টস শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল ৬৯৯টি। এর মধ্যে ৬১০টি কারখানা চালু ছিল। ওই সময় জাতীয় রপ্তানির ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশ হতো চট্টগ্রাম থেকে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত পোশাক কারাখানা ছিল ৭৫৬টি। এর মধ্যে মাত্র ৪৫৫টি চালু ছিল। বাকি ৩০১টি কারখানা তখন বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় জাতীয় রপ্তানিতে চট্টগ্রামের অবদান আগের দশক থেকে হঠাৎ কমে ১৪ শতাংশে নেমে আসে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত