জামালগঞ্জে বাঁধের কাজ সম্পন্ন, কৃষকের স্বস্তি

জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২২, ০৮: ০৩
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২২, ০৯: ৫৮

চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করেছে উপজেলা প্রশাসন। বিলম্ব হলেও বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এদিকে বাঁধ নির্মাণে হাওর অঞ্চলের একমাত্র ফসল আগাম বন্যা থেকে রক্ষা পাবে ভেবে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অর্থায়নে চলতি বছর জামালগঞ্জের হাওরে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮৫ কিলোমিটার বাঁধের কাজ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮ কিলোমিটার নতুন বাঁধ নির্মাণ ও ১৩৭ কিলোমিটার পুরোনো বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। এসব বাঁধ নির্মাণে ৪০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়।

এর আগে হাওরের বোরো চাষিরা সঠিক সময়ে জমির ফসল ঘরে তোলা নিয়ে প্রতিবছরই আগাম বন্যার শঙ্কায় থাকতেন। এর কারণ, ২০১৭ সালে জামালগঞ্জের হাওরে পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে পানির নিচে তলিয়ে যায় কৃষকের হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান। এতে ব্যাপক ক্ষতিতে পড়েন তাঁরা। তখন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওর হেলিকপ্টারে পরিদর্শন করেন। তারপর ২০১৮ সাল থেকে হাওরের কৃষকদের সেই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পাউবো।

এর ধারাবাহিকতায় আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষা করতে জামালগঞ্জের হাওরে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে বাঁধের কাজ শুরু করে নির্ধারিত সময় ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। তবে বিলম্বে বিল প্রদান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিগুলোর কিছু ঢিলেমির কারণে তা সম্ভব হয়নি।

তবে বর্তমানে ঘাস লাগানোসহ বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হওয়ায় আশঙ্কামুক্ত হাওরের কৃষকেরা।

উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের উত্তর কামলাবাজ গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার বাদশা বলেন, ‘২০১৭ সালের আগাম বন্যায় আমাদের একমাত্র বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। জমি থেকে একমুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারিনি। পরের বছর থেকে কৃষকদের দিয়ে পিআইসি গঠন করে বাঁধ নির্মাণ শুরু হওয়ায় স্বস্তি মিলেছে কৃষকদের।’

‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ জামালগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, ‘এ বছর বাঁধের কাজ শেষ হতে বিলম্ব হলেও বর্তমানে তা শেষ হয়েছে।’

এদিকে হাওর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন সবুজের সমারোহ। অনেক ধানগাছ রং বদলে সোনালি আকার ধারণ করেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর উপজেলার হাওরে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাওর ফসল রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটির সভাপতি বিশ্বজিত দেব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বাঁধের কাজে অতিরিক্ত সময় লেগেছে। কারণ, হালির হাওরের ১৯ নম্বর পিআইসি (গনিয়ার কাড়া) বাঁধ নদীর তীরবর্তী হওয়ায় ভাঙনের মুখে ছিল। এটাকে পুনরায় সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে সব কাজ সন্তোষজনক হয়েছে। হাওরের কৃষকেরা তাঁদের একমাত্র বোরো ধান ঘরে তুলতে পারবেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত