উপসম্পাদকীয়
কিছুদিন আগেই ভাইরাল হওয়া মুক্তা সুলতানা থেকে শুরু করা যাক। তিনি যেটি করেছেন লাইভে এসে, নিজের সব সনদ পুড়িয়ে ফেলেছেন। তাঁর দাবি, চাকরিপ্রত্যাশীদের বয়স ৩৫ করতে হবে। তাঁর মতামত, জীবনের ২৫ বছর ধরে অর্জিত সনদ কেন পাঁচ বছরে ইনভ্যালিড (মূল্যহীন) হয়ে যাবে? উনি সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন, যদি তিনি সরকারি চাকরি না পেয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর পড়াশোনা করা বা প্রাপ্ত সনদ বৃথা। তাই সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়াতে হবে। পরবর্তী সময়ে উনি কোনো রকম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছাড়াই বয়সসীমার বাধা পেরিয়ে সরকারি চাকরিও পেয়েছেন, যাতে চাকরিপ্রার্থী অনেকের মন ভেঙেছে বৈকি। কেননা, তিনিই প্রথম নন, এর আগেও অনেকে চাকরির অভাবে সনদপত্র ছিঁড়ে ফেলেছেন বা পুড়িয়ে ফেলেছেন। তাঁদের কি চাকরি দেওয়া হয়েছে? নাকি পরবর্তী সময়ে যাঁরা এ কাজ করবেন, সবাইকে চাকরি দেওয়া হবে?
যাই হোক, এবার আসি আসল কথায়। সরকারি চাকরির আবেদনের বয়সসীমা বাড়াতে হবে—এ দাবি বহু বছর ধরেই চলছে। বর্তমানে ভাইরাল ইস্যু আর সামনে নির্বাচন, এই সুযোগে দাবি পূরণের আশায় শাহবাগে আন্দোলনে বসে পড়েছেন অনেকেই।
এ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর কোনোভাবেই ফাঁকা মাথায় মেলানো সম্ভব হচ্ছে না। যদি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো হয়, তাহলে কী হবে? যাঁরা ২৫ বছরের মধ্যে স্নাতক শেষ করে ৩০ বছর পর্যন্ত বেকার হয়েছেন শুধু একটি সরকারি চাকরি পাবেন বলে, তারা আরও পাঁচ বছর বেশি বেকার থাকবেন, তাই নয়কি? না, এটি সম্পূর্ণ সত্য নয়, তবে কিছুটা হলেও সত্য।
আমাদের দেশের শিক্ষিত সমাজের দিকে তাকালেই এর উত্তর পাওয়া যায়। যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বা লাইব্রেরিতে গেলেই আমাদের চোখে এমন অনেক উদাহরণ পড়বে যে তাঁরা চাকরি পেয়েছেন, কিন্তু প্রত্যাশিত সরকারি চাকরিতে এখনো আবেদন করতে পারবেন বলে আরও বছরখানেক লাইব্রেরিতেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের দেশে বেকারদের দলে কিন্তু তাঁরাও পড়েন।
এবার আসি পরিসংখ্যানে। দেশে মোট সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। মনে করি, প্রতিবছর সরকারি চাকরির নিয়োগ হয় প্রায় ৩ লাখ। এই মুহূর্তে দেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ। ধরে নিলাম এ বছরই ৩ লাখ সরকারি চাকরি পাবেন। তার পরও বেকারের সংখ্যা থাকে প্রায় ২৩ লাখ। তাই যখন সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো হবে, এই ২৩ লাখ বেকারের সংখ্যাও বেড়ে যাবে আর তাঁরা আরও বছর পাঁচেক বেকার থাকার বৈধতা পেয়ে যাবেন আরকি।
এখন প্রশ্ন হলো, বয়সসীমা যদি বাড়ানো হয়, তাতে কি বেকারত্ব কোনোভাবে এড়ানো সম্ভব? আমার মতো হয়তো অনেকে উত্তর দেবেন, ‘না, সম্ভব নয়।’ তবে হতাশা বাড়ানো সম্ভব। হতাশায় আত্মহত্যার হার বেড়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ স্কুলের শিক্ষার্থীরাও আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। এই হার আরও বাড়বে নাকি? যেখানে মানুষের গড় আয়ু ৭০ থেকে ৭২ বছর, সেখানে জীবনের অর্ধেক সময় কেবল একটি চাকরির আশায় পার করে দেওয়া কি আরও বেশি হতাশার হবে না?
কিন্তু বয়সসীমা যদি একই থাকে, তাহলে অন্তত ত্রিশের পর দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়ে হলেও বিকল্প পথ বেছে নিতে পারবে তরুণ সমাজ। উদ্যোক্তা হতে পারবে, বেছে নিতে পারবে করপোরেট বা বেসরকারি কোনো চাকরি। এর জন্যও কিন্তু শিক্ষার প্রয়োজন। তাই ৩০ বছরের পর আপনার সনদ যে মূল্যহীন হয় না, এটা তো সুনিশ্চিত।
আবার ৩০ বছরের পর একজন মানুষের জ্ঞান ধারণক্ষমতা ও কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। তাই যদি দাবি করারই থাকে, তাহলে বয়স বাড়ানোর নয়, বরং আপনার দাবি হতে পারত (নলেজড) জ্ঞানভিত্তিক একাডেমিক পড়াশোনার সিস্টেম পরিবর্তন করে (স্কিল্ড) দক্ষতাভিত্তিক পড়াশোনা চালু করা। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। কেবল এর মাধ্যমেই তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন সম্ভব। অন্যথায় কেবল চাকরিপ্রার্থীর বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলন যদি মেনেও নেওয়া হয়, তাতে কর্মসংস্থান বাড়বে না, কেবল বাড়বে একটি বেকার জনগোষ্ঠী।
লেখক: সাংবাদিক
কিছুদিন আগেই ভাইরাল হওয়া মুক্তা সুলতানা থেকে শুরু করা যাক। তিনি যেটি করেছেন লাইভে এসে, নিজের সব সনদ পুড়িয়ে ফেলেছেন। তাঁর দাবি, চাকরিপ্রত্যাশীদের বয়স ৩৫ করতে হবে। তাঁর মতামত, জীবনের ২৫ বছর ধরে অর্জিত সনদ কেন পাঁচ বছরে ইনভ্যালিড (মূল্যহীন) হয়ে যাবে? উনি সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন, যদি তিনি সরকারি চাকরি না পেয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর পড়াশোনা করা বা প্রাপ্ত সনদ বৃথা। তাই সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়াতে হবে। পরবর্তী সময়ে উনি কোনো রকম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছাড়াই বয়সসীমার বাধা পেরিয়ে সরকারি চাকরিও পেয়েছেন, যাতে চাকরিপ্রার্থী অনেকের মন ভেঙেছে বৈকি। কেননা, তিনিই প্রথম নন, এর আগেও অনেকে চাকরির অভাবে সনদপত্র ছিঁড়ে ফেলেছেন বা পুড়িয়ে ফেলেছেন। তাঁদের কি চাকরি দেওয়া হয়েছে? নাকি পরবর্তী সময়ে যাঁরা এ কাজ করবেন, সবাইকে চাকরি দেওয়া হবে?
যাই হোক, এবার আসি আসল কথায়। সরকারি চাকরির আবেদনের বয়সসীমা বাড়াতে হবে—এ দাবি বহু বছর ধরেই চলছে। বর্তমানে ভাইরাল ইস্যু আর সামনে নির্বাচন, এই সুযোগে দাবি পূরণের আশায় শাহবাগে আন্দোলনে বসে পড়েছেন অনেকেই।
এ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর কোনোভাবেই ফাঁকা মাথায় মেলানো সম্ভব হচ্ছে না। যদি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো হয়, তাহলে কী হবে? যাঁরা ২৫ বছরের মধ্যে স্নাতক শেষ করে ৩০ বছর পর্যন্ত বেকার হয়েছেন শুধু একটি সরকারি চাকরি পাবেন বলে, তারা আরও পাঁচ বছর বেশি বেকার থাকবেন, তাই নয়কি? না, এটি সম্পূর্ণ সত্য নয়, তবে কিছুটা হলেও সত্য।
আমাদের দেশের শিক্ষিত সমাজের দিকে তাকালেই এর উত্তর পাওয়া যায়। যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বা লাইব্রেরিতে গেলেই আমাদের চোখে এমন অনেক উদাহরণ পড়বে যে তাঁরা চাকরি পেয়েছেন, কিন্তু প্রত্যাশিত সরকারি চাকরিতে এখনো আবেদন করতে পারবেন বলে আরও বছরখানেক লাইব্রেরিতেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের দেশে বেকারদের দলে কিন্তু তাঁরাও পড়েন।
এবার আসি পরিসংখ্যানে। দেশে মোট সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। মনে করি, প্রতিবছর সরকারি চাকরির নিয়োগ হয় প্রায় ৩ লাখ। এই মুহূর্তে দেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ। ধরে নিলাম এ বছরই ৩ লাখ সরকারি চাকরি পাবেন। তার পরও বেকারের সংখ্যা থাকে প্রায় ২৩ লাখ। তাই যখন সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো হবে, এই ২৩ লাখ বেকারের সংখ্যাও বেড়ে যাবে আর তাঁরা আরও বছর পাঁচেক বেকার থাকার বৈধতা পেয়ে যাবেন আরকি।
এখন প্রশ্ন হলো, বয়সসীমা যদি বাড়ানো হয়, তাতে কি বেকারত্ব কোনোভাবে এড়ানো সম্ভব? আমার মতো হয়তো অনেকে উত্তর দেবেন, ‘না, সম্ভব নয়।’ তবে হতাশা বাড়ানো সম্ভব। হতাশায় আত্মহত্যার হার বেড়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ স্কুলের শিক্ষার্থীরাও আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। এই হার আরও বাড়বে নাকি? যেখানে মানুষের গড় আয়ু ৭০ থেকে ৭২ বছর, সেখানে জীবনের অর্ধেক সময় কেবল একটি চাকরির আশায় পার করে দেওয়া কি আরও বেশি হতাশার হবে না?
কিন্তু বয়সসীমা যদি একই থাকে, তাহলে অন্তত ত্রিশের পর দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়ে হলেও বিকল্প পথ বেছে নিতে পারবে তরুণ সমাজ। উদ্যোক্তা হতে পারবে, বেছে নিতে পারবে করপোরেট বা বেসরকারি কোনো চাকরি। এর জন্যও কিন্তু শিক্ষার প্রয়োজন। তাই ৩০ বছরের পর আপনার সনদ যে মূল্যহীন হয় না, এটা তো সুনিশ্চিত।
আবার ৩০ বছরের পর একজন মানুষের জ্ঞান ধারণক্ষমতা ও কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। তাই যদি দাবি করারই থাকে, তাহলে বয়স বাড়ানোর নয়, বরং আপনার দাবি হতে পারত (নলেজড) জ্ঞানভিত্তিক একাডেমিক পড়াশোনার সিস্টেম পরিবর্তন করে (স্কিল্ড) দক্ষতাভিত্তিক পড়াশোনা চালু করা। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। কেবল এর মাধ্যমেই তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন সম্ভব। অন্যথায় কেবল চাকরিপ্রার্থীর বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলন যদি মেনেও নেওয়া হয়, তাতে কর্মসংস্থান বাড়বে না, কেবল বাড়বে একটি বেকার জনগোষ্ঠী।
লেখক: সাংবাদিক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে