আব্দুর রাজ্জাক
এই ভরা মৌসুমেও চালের বাজারে যে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে, তা কোনোক্রমেই প্রত্যাশিত নয়। কৃষকপর্যায়ে ধানের যে মূল্য আর ভোক্তাপর্যায়ে চালের যে বাজারমূল্য—এই দুইয়ের মাঝে অনেক ব্যবধান। একেবারেই সাধারণ মানের মোটা চালের দাম কেজি ৫০ টাকার কম নয়। একটু উন্নত মানের চাল কিনতে হলেই কেজিপ্রতি গুনতে হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
গত বছরের তুলনায় এ বছর এই মূল্যবৃদ্ধি ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। আমাদের সমাজব্যবস্থায় অথবা আর্থিক খাতে এমন কোনো উন্নতি হয়নি যে আমাদের আয় এক বছরের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চালের উৎপাদন খরচ এই এক বছরের মধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। সার-কীটনাশকসহ সেচের খরচ ততটা বৃদ্ধি পায়নি। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। এরপরও বাজারের এই অবস্থা কেন, তা বিশ্লেষণ করতে হবে।
এখানে চালকলমালিকেরা এবং যাঁরা ধান-চাল মজুত করেন, তাঁরা আগের মহাজনিব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে মৌসুমের শুরুতেই সস্তায় ধান কিনে মজুত করেন। আমাদের ভোক্তাদের জিম্মি করে আস্তে আস্তে এই চাল বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে অধিক মুনাফা করেন। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে, একচেটিয়াভাবে সারা দেশে হাতে গোনা দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ এ কাজটি করেন, আমাদের সবার চোখের সামনে। এখানে রাষ্ট্রীয় তদারকি সংস্থা খুব একটা তাঁদের সঙ্গে পেরে উঠছে না।
এই ব্যবস্থা ভাঙার জন্য রাষ্ট্রের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কৃষকপর্যায়ে রাষ্ট্রকে আরও ছাড় দিতে হবে। কৃষক যেন তাঁদের উৎপাদিত ধান তিন-চার মাস সংগ্রহে রাখতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। স্বল্প সুদে অথবা বিনা সুদে তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের যে দাম হয়, সেই পরিমাণ টাকা ঋণ দিতে হবে। আরও ঋণ দিতে হবে একবারে, যেন তাঁরা ধান সংগ্রহ করতে পারেন, সে রকম অবকাঠামোর জন্য। এটা হতে হবে অল্প সুদে অথবা শূন্য সুদে।
ধরুন একজন কৃষক এক শ মণ ধান উৎপাদন করেন। তাঁর নিজের জন্য ২০ মণ রেখে অন্য ৮০ মণ ধান যেন তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। নিজের সাংসারিক ব্যয় ও কৃষিকাজ মেটানোর জন্য চার মাসের মধ্যে তিনি আস্তে আস্তে ৮০ মণ ধান বিক্রি করবেন। এই ৮০ মণ ধান যেন তিনি আস্তে আস্তে বিক্রি করতে পারেন প্রয়োজন অনুসারে, সেভাবে তাঁকে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ দিতে হবে। উৎপাদন পর্যায়ে কৃষকদের এই প্রণোদনা দিতেই হবে।
রাষ্ট্রের কঠোর হতে হবে মজুতদারি পর্যায়ে। মিলমালিক বা মজুতদারেরা বড় বড় গোডাউন করে ধান মজুত করতে পারবেন না। আইন করে এটা বন্ধ করতে হবে, প্রয়োজন হলে বল প্রয়োগ করতে হবে। মিলমালিকেরা সেই পরিমাণ ধান তাঁদের কাছে রাখবেন, যা এক সপ্তাহের মধ্যে চালে পরিণত করে বিক্রি করা যায়। এর বেশি ধান সংগ্রহে রাখলেই রাষ্ট্র বল প্রয়োগ করে, তাঁদের এই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ জেল-জরিমানার ব্যবস্থা করবে। এখনই যদি এ রকম আইন করা না হয়, তাহলে চালের বাজারে মাফিয়াতন্ত্র গড়ে উঠবে আরও শক্তিশালীভাবে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় অচল হয়ে যাবে, এই সিন্ডিকেটের কাছে। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র কোনো অসহায় সংস্থা নয়, রাষ্ট্রের হাতে সব ধরনের ব্যবস্থা আছে, শুধু সঠিকভাবে প্রয়োগ করলেই সাফল্য আসবে।
এক মণ ধান থেকে ২৭-২৮ কেজি চাল হয়। প্রায় ৮ কেজি কুঁড়া হয়, ৪-৫ কেজি তুষ হয়। কুঁড়ার মণ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এখানে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, এক মণ ধান যে টাকা দিয়ে কেনা হয়, ২৭ কেজি চাল সেই দামে বিক্রি করার পরেও কুঁড়া এবং তুষের মূল্য থেকেই প্রক্রিয়াকরণের সব খরচ মিটে যাওয়ার কথা।
এখন সবাই একটু মিলিয়ে দেখুন, কৃষকপর্যায়ে ধানের যে দাম আর ভোক্তাপর্যায়ের চালের যে দাম, এর মধ্যে সামঞ্জস্য কি না। রাষ্ট্র যেন এই অসামঞ্জস্যের বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ নেয়, আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে, বাজারব্যবস্থাকে সচল রাখে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখে।
প্রতিদিন টেলিভিশন খুললেই সংবাদের একপর্যায়ে দেখা যায়, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে একটি সংবাদ আছেই। এই তো সেদিন ঢাকার বাজারে দেখলাম, ১ কেজি মুলা ৫০ টাকা। ১ কেজি গোল বেগুন ১২০ টাকা, একটি লাউ মাঝারি আকারের ১০০ টাকা। ১ কেজি শিম ৮০ টাকা দিয়ে কিনলাম। শীতের এই ভরা মৌসুমে, সাধারণ মানের এই সবজির দাম এত হওয়া উচিত নয়, এটা সবাই বলবেন। আমাদের সমাজের ৮০ ভাগ মানুষের মাসিক যে আয়, সেই আয় থেকে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা খুবই দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন প্রশ্ন: এসব পণ্যের দাম আসলেই কি এতটা হওয়া উচিত? আমরা খুবই খুশি হতাম, যদি যে দাম ওপরে উল্লেখ করলাম তার শতকরা ৬০ ভাগ কৃষক পেতেন।
এসব পণ্যের উৎপাদনপর্যায়ে খবর নিয়ে দেখেছি, এর দাম কৃষক পান তিন ভাগের এক ভাগ। যশোর অঞ্চলে কৃষকপর্যায়ে মুলা বিক্রি হয় ১৫ টাকা কেজি, ঢাকায় ৫০ টাকা। বেগুন বিক্রি হয় ৩০-৪০ টাকা, ঢাকায় বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা। শিম বিক্রি হয় উৎপাদনপর্যায়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, ঢাকায় ৮০ টাকা। এখানে লক্ষ করলে দেখা যায়, এই সব ভোগ্যপণ্যের দাম উৎপাদনপর্যায় থেকে ভোক্তাপর্যায়ে ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
দেশে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত, বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় ৩০০ শতাংশ দাম বাড়ার কোনোই কারণ নেই; একটাই কারণ হতে পারে—মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, মাস্তানতন্ত্রের জন্য চাঁদাবাজি—ঘাটে ঘাটে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে। আমি কয়েকজন পরিবহনশ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, প্রায় সবাই বলেছেন, যশোর-কুষ্টিয়া-রংপুর-দিনাজপুর বা যেকোনো অঞ্চল থেকে একটি ট্রাকের যে পরিমাণ ভাড়া দিতে হয়, সমপরিমাণ টাকা ঘাটে ঘাটে বিভিন্ন পর্যায়ের চাঁদাবাজদের দিতে হয়। তারপর এই সব কাঁচামাল কমপক্ষে তিন-চার হাত বদল হয়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছায়। প্রতিটি স্তরেই ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মূল্য সংযোজিত হয়। যার কারণে ভোক্তাপর্যায়ে আমরা ১৫ টাকার মুলা ৫০ টাকায় কিনি।
এসব ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্র তার প্রশাসনযন্ত্র দিয়ে পরিবহনক্ষেত্রে নৈরাজ্য ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য না কমায়, তাহলে ভোগ্যপণ্য কেনার ক্ষমতা সাধারণ মানুষ হারিয়ে ফেলবে। প্রয়োজনের তুলনায় সাধারণ মানুষ কম খাদ্য গ্রহণ করবে, কম ক্যালরি গ্রহণ করবে, অপুষ্টিতে ভুগবে দেশের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ।
মনে রাখা ভালো, আমাদের দেশের মানুষের আয় গত এক বছরে কোনোক্রমেই ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়নি। কিন্তু ভোগ্যপণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয়, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ক্ষেত্রবিশেষে ৬০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত। এক বছরের ব্যবধানে এতটা মূল্যবৃদ্ধি কোনো স্বাভাবিক কারণে হতে পারে না—এ কথা সবাই নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করবেন।
লেখক: প্রকৌশলী
এই ভরা মৌসুমেও চালের বাজারে যে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে, তা কোনোক্রমেই প্রত্যাশিত নয়। কৃষকপর্যায়ে ধানের যে মূল্য আর ভোক্তাপর্যায়ে চালের যে বাজারমূল্য—এই দুইয়ের মাঝে অনেক ব্যবধান। একেবারেই সাধারণ মানের মোটা চালের দাম কেজি ৫০ টাকার কম নয়। একটু উন্নত মানের চাল কিনতে হলেই কেজিপ্রতি গুনতে হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
গত বছরের তুলনায় এ বছর এই মূল্যবৃদ্ধি ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। আমাদের সমাজব্যবস্থায় অথবা আর্থিক খাতে এমন কোনো উন্নতি হয়নি যে আমাদের আয় এক বছরের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চালের উৎপাদন খরচ এই এক বছরের মধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। সার-কীটনাশকসহ সেচের খরচ ততটা বৃদ্ধি পায়নি। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। এরপরও বাজারের এই অবস্থা কেন, তা বিশ্লেষণ করতে হবে।
এখানে চালকলমালিকেরা এবং যাঁরা ধান-চাল মজুত করেন, তাঁরা আগের মহাজনিব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে মৌসুমের শুরুতেই সস্তায় ধান কিনে মজুত করেন। আমাদের ভোক্তাদের জিম্মি করে আস্তে আস্তে এই চাল বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে অধিক মুনাফা করেন। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে, একচেটিয়াভাবে সারা দেশে হাতে গোনা দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ এ কাজটি করেন, আমাদের সবার চোখের সামনে। এখানে রাষ্ট্রীয় তদারকি সংস্থা খুব একটা তাঁদের সঙ্গে পেরে উঠছে না।
এই ব্যবস্থা ভাঙার জন্য রাষ্ট্রের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কৃষকপর্যায়ে রাষ্ট্রকে আরও ছাড় দিতে হবে। কৃষক যেন তাঁদের উৎপাদিত ধান তিন-চার মাস সংগ্রহে রাখতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। স্বল্প সুদে অথবা বিনা সুদে তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের যে দাম হয়, সেই পরিমাণ টাকা ঋণ দিতে হবে। আরও ঋণ দিতে হবে একবারে, যেন তাঁরা ধান সংগ্রহ করতে পারেন, সে রকম অবকাঠামোর জন্য। এটা হতে হবে অল্প সুদে অথবা শূন্য সুদে।
ধরুন একজন কৃষক এক শ মণ ধান উৎপাদন করেন। তাঁর নিজের জন্য ২০ মণ রেখে অন্য ৮০ মণ ধান যেন তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। নিজের সাংসারিক ব্যয় ও কৃষিকাজ মেটানোর জন্য চার মাসের মধ্যে তিনি আস্তে আস্তে ৮০ মণ ধান বিক্রি করবেন। এই ৮০ মণ ধান যেন তিনি আস্তে আস্তে বিক্রি করতে পারেন প্রয়োজন অনুসারে, সেভাবে তাঁকে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ দিতে হবে। উৎপাদন পর্যায়ে কৃষকদের এই প্রণোদনা দিতেই হবে।
রাষ্ট্রের কঠোর হতে হবে মজুতদারি পর্যায়ে। মিলমালিক বা মজুতদারেরা বড় বড় গোডাউন করে ধান মজুত করতে পারবেন না। আইন করে এটা বন্ধ করতে হবে, প্রয়োজন হলে বল প্রয়োগ করতে হবে। মিলমালিকেরা সেই পরিমাণ ধান তাঁদের কাছে রাখবেন, যা এক সপ্তাহের মধ্যে চালে পরিণত করে বিক্রি করা যায়। এর বেশি ধান সংগ্রহে রাখলেই রাষ্ট্র বল প্রয়োগ করে, তাঁদের এই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ জেল-জরিমানার ব্যবস্থা করবে। এখনই যদি এ রকম আইন করা না হয়, তাহলে চালের বাজারে মাফিয়াতন্ত্র গড়ে উঠবে আরও শক্তিশালীভাবে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় অচল হয়ে যাবে, এই সিন্ডিকেটের কাছে। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র কোনো অসহায় সংস্থা নয়, রাষ্ট্রের হাতে সব ধরনের ব্যবস্থা আছে, শুধু সঠিকভাবে প্রয়োগ করলেই সাফল্য আসবে।
এক মণ ধান থেকে ২৭-২৮ কেজি চাল হয়। প্রায় ৮ কেজি কুঁড়া হয়, ৪-৫ কেজি তুষ হয়। কুঁড়ার মণ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এখানে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, এক মণ ধান যে টাকা দিয়ে কেনা হয়, ২৭ কেজি চাল সেই দামে বিক্রি করার পরেও কুঁড়া এবং তুষের মূল্য থেকেই প্রক্রিয়াকরণের সব খরচ মিটে যাওয়ার কথা।
এখন সবাই একটু মিলিয়ে দেখুন, কৃষকপর্যায়ে ধানের যে দাম আর ভোক্তাপর্যায়ের চালের যে দাম, এর মধ্যে সামঞ্জস্য কি না। রাষ্ট্র যেন এই অসামঞ্জস্যের বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ নেয়, আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে, বাজারব্যবস্থাকে সচল রাখে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখে।
প্রতিদিন টেলিভিশন খুললেই সংবাদের একপর্যায়ে দেখা যায়, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে একটি সংবাদ আছেই। এই তো সেদিন ঢাকার বাজারে দেখলাম, ১ কেজি মুলা ৫০ টাকা। ১ কেজি গোল বেগুন ১২০ টাকা, একটি লাউ মাঝারি আকারের ১০০ টাকা। ১ কেজি শিম ৮০ টাকা দিয়ে কিনলাম। শীতের এই ভরা মৌসুমে, সাধারণ মানের এই সবজির দাম এত হওয়া উচিত নয়, এটা সবাই বলবেন। আমাদের সমাজের ৮০ ভাগ মানুষের মাসিক যে আয়, সেই আয় থেকে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা খুবই দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন প্রশ্ন: এসব পণ্যের দাম আসলেই কি এতটা হওয়া উচিত? আমরা খুবই খুশি হতাম, যদি যে দাম ওপরে উল্লেখ করলাম তার শতকরা ৬০ ভাগ কৃষক পেতেন।
এসব পণ্যের উৎপাদনপর্যায়ে খবর নিয়ে দেখেছি, এর দাম কৃষক পান তিন ভাগের এক ভাগ। যশোর অঞ্চলে কৃষকপর্যায়ে মুলা বিক্রি হয় ১৫ টাকা কেজি, ঢাকায় ৫০ টাকা। বেগুন বিক্রি হয় ৩০-৪০ টাকা, ঢাকায় বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা। শিম বিক্রি হয় উৎপাদনপর্যায়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, ঢাকায় ৮০ টাকা। এখানে লক্ষ করলে দেখা যায়, এই সব ভোগ্যপণ্যের দাম উৎপাদনপর্যায় থেকে ভোক্তাপর্যায়ে ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
দেশে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত, বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় ৩০০ শতাংশ দাম বাড়ার কোনোই কারণ নেই; একটাই কারণ হতে পারে—মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, মাস্তানতন্ত্রের জন্য চাঁদাবাজি—ঘাটে ঘাটে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে। আমি কয়েকজন পরিবহনশ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, প্রায় সবাই বলেছেন, যশোর-কুষ্টিয়া-রংপুর-দিনাজপুর বা যেকোনো অঞ্চল থেকে একটি ট্রাকের যে পরিমাণ ভাড়া দিতে হয়, সমপরিমাণ টাকা ঘাটে ঘাটে বিভিন্ন পর্যায়ের চাঁদাবাজদের দিতে হয়। তারপর এই সব কাঁচামাল কমপক্ষে তিন-চার হাত বদল হয়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছায়। প্রতিটি স্তরেই ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মূল্য সংযোজিত হয়। যার কারণে ভোক্তাপর্যায়ে আমরা ১৫ টাকার মুলা ৫০ টাকায় কিনি।
এসব ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্র তার প্রশাসনযন্ত্র দিয়ে পরিবহনক্ষেত্রে নৈরাজ্য ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য না কমায়, তাহলে ভোগ্যপণ্য কেনার ক্ষমতা সাধারণ মানুষ হারিয়ে ফেলবে। প্রয়োজনের তুলনায় সাধারণ মানুষ কম খাদ্য গ্রহণ করবে, কম ক্যালরি গ্রহণ করবে, অপুষ্টিতে ভুগবে দেশের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ।
মনে রাখা ভালো, আমাদের দেশের মানুষের আয় গত এক বছরে কোনোক্রমেই ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়নি। কিন্তু ভোগ্যপণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয়, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ক্ষেত্রবিশেষে ৬০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত। এক বছরের ব্যবধানে এতটা মূল্যবৃদ্ধি কোনো স্বাভাবিক কারণে হতে পারে না—এ কথা সবাই নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করবেন।
লেখক: প্রকৌশলী
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে