বলেশ্বরে স্বেচ্ছাশ্রমে সেতুবন্ধন

চিতলমারী (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬: ৪৫
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৪৪

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চরবানিয়ারীতে স্বেচ্ছাশ্রমে বলেশ্বর নদে বাঁশের সাঁকোর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় দুই পারের দুই বিভাগের দুই শতাধিক মানুষ এ কাজে অংশ নেন। নির্মাণকাজ চলবে মাসব্যাপী। শুধু স্বেচ্ছাশ্রমই নয়, এ কাজের জন্য তাঁরা স্বেচ্ছায় টাকা, বাঁশ ও গাছ দিচ্ছেন।

দুই পারের দুই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় কয়েকজন উদ্যমী যুবকের নেতৃত্বে পূর্ণ গতিতে এ সাঁকোর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। যুবকদের সঙ্গে প্রবীণেরাও কাজে নেমেছেন।

সরেজমিন জানা গেছে, এক পারে খুলনা বিভাগের বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চরবানিয়ারী ইউনিয়নের চরবানিয়ারী গ্রাম, অন্য পারে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম বানিয়ারী গ্রাম। মধ্য দিয়ে বলেশ্বর নদ বহমান।

মরা এই নদে প্রায় ৪০ বছর আগে বিশাল এক বাঁশের সাঁকো নির্মিত হয়েছিল। সেই সাঁকো এখন চলাচলের অনুপযোগী। প্রতিদিন এই সাঁকো দিয়ে দুই পারের কমপক্ষে ২০ গ্রামের ৪-৫ হাজার মানুষ পারাপার হন। সরকারের বহু দপ্তরে ছোটাছুটি করেও সাঁকোটি মেরামত কিংবা ওই জায়গায় নতুন সেতু নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। তাই স্থানীয় যুবক দেবাশীষ মণ্ডল, তপন কুমার বাইন ও আলমগীর শেখ পুরোনো সাঁকোর নকশা পাল্টিয়ে নতুন করে মজবুত একটি সাঁকো নির্মাণের উদ্যোগ নেন।

সেই অনুযায়ী তাঁরা চিতলমারী উপজেলার চরবানিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অপূর্ব মণ্ডল ও নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কমলেশ মণ্ডলের সঙ্গে আলোচনা করেন। দুই ইউপি সদস্য এতে একমত পোষণ করেন। তাঁদের নেতৃত্বে শুরু হয় নবীন ও প্রবীণদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক।

বৈঠকে সাঁকো নির্মাণ কমিটি গঠন করা হয়। করা হয় নির্মাণ পরিকল্পনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাঁকোটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা, যা গ্রামবাসী দেবেন। শ্রমিক হিসেবেও কাজ করবেন গ্রামের মানুষ। বহুদিনের জল্পনা-কল্পনা শেষে শুক্রবার সকাল ১০টায় দুই পারের দুই শতাধিক মানুষ এ নির্মাণকাজ শুরু করেন।

চরবানিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অপূর্ব মণ্ডল ও মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কমলেশ মণ্ডল বলেন, বহু পুরোনো এ সাঁকোর সঙ্গে দুই পাড়ের কয়েক হাজার মানুষের ভাগ্য জড়িত। দুই পাড়ের মানুষই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাঁদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে এ সাঁকো ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

সরকারের বহু দপ্তরে ছোটাছুটি করেও সাঁকোটি মেরামত কিংবা ওই স্থানে সেতু নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। তাই দুই পারের মানুষের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর নতুন নকশা অনুযায়ী বাঁশের সাঁকো নির্মাণকাজ শুরু করেছেন। কাজ পরিচালনার জন্য কমিটি রয়েছে। কমিটিতে দুজন কোষাধ্যক্ষ রয়েছেন।

সাঁকো নির্মাণ কমিটির কোষাধ্যক্ষ রমেন্দ্র নাথ রায় ও সহকারী কোষাধ্যক্ষ ধনঞ্জয় বালা বলেন, এ সাঁকো কমপক্ষে ৩০০ ফুট লম্বা। এটি নির্মাণে ৫ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হবে। দুই পারে ৬০০ পরিবার রয়েছে। পরিবারের ধরন বুঝে পরিবারপ্রতি সর্বনিম্ন ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা ধরা হয়েছে।

তাঁরা আরও বলেন, এ ছাড়া প্রতি পরিবার সাধ্য অনুযায়ী বাঁশ ও গাছ দেবে, আর শ্রম তো রয়েছে। এভাবেই নির্মিত হবে এ বিশাল সাঁকো। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতে এক মাস লাগবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত