দিনবদলে বাধা অনভ্যাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২২, ০৮: ৩৬
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২২, ০৯: ০২

বৈশ্বিক সংকট থেকে উত্তরণে নানা পথ খুঁজছে সরকার। বিদ্যুৎ-জ্বালানি সাশ্রয় এবং দিনের আলোয় কাজ করার চেষ্টায় অফিস সময় বদলে গেছে। পরিবর্তিত এ সময়ের সঙ্গে অনেকেই খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রাথমিকভাবে অনভ্যাসজনিত কষ্টের কথাও বলেছেন অনেকে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বলে খ্যাত বাংলাদেশ সচিবালয়ে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আসতে শুরু করেন। অনেক নারী তাঁদের আসতে নানা সমস্যার কথা বলেন। তবে কেউ কেউ আবার খুশি।

জ্বালানির সংকট মোকাবিলায় মন্ত্রিসভা গত সোমবার অফিস সময় পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত নেয়। ওই দিন মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান। সরকারি অফিসের পাশাপাশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে দুই দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আনোয়ারা বেগম বলেন, সকাল আটটায় অফিসে আসতে হবে। আরও সকালে অফিসের গাড়ি ধরতে হবে। এই চিন্তায় নাশতা কিংবা দুপুরের খাবার রান্না করা সম্ভব হয়নি। তাই নাশতা না করেই দ্রুত অফিসে চলে আসেন। আরেক নারী কর্মচারী ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘আমাদের জন্য অনেক কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে বাচ্চাকাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো; আবার রান্নাবান্না করা—সব মিলিয়ে আমাদের মতো নারীদের জন্য কষ্টকর।’ তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কর্মরত রুকসানা আক্তার জানান, সকালে অফিস সময় হওয়ায় তাঁর জন্য ভালোই হয়েছে। এতে বিকেলে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে।

অর্থ বিভাগে কর্মরত মাসুদ আহমেদ জানান, সকালের অফিসটা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। সকালে গাড়িতে আসতে কোনো সমস্যা হয়নি। যানবাহন খুব সহজে পাওয়া গেছে। রাস্তায় কোনো যানজটও ছিল না। দিলীপ কুমার সাহা নামে এক কর্মকর্তা বলেন, সকালে কোনো যানজট ছিল না। খুব দ্রুত অফিসে পৌঁছাতে পেরেছেন।

পরিবর্তিত এই অফিস সময়কে সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেশির ভাগই সাধুবাদ জানিয়েছেন। বিশেষ করে যাঁদের ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস রয়েছে এবং নামাজ আদায় করেন, তাঁদের জন্য এ সময়টা খুবই ভালো হয়েছে। তবে যাঁরা একটু দেরিতে ওঠেন, তাঁদের অনেকেই কষ্টের কথা জানিয়েছেন। সচিবালয়ের কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বলছেন, ‘সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে আমরা তা মানতে বাধ্য।’

 নতুন নিয়মের প্রথম দিন কারওয়ান বাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) প্রিন্সিপাল অফিসার আবদুর রব বলেন, সরকারি ব্যাংকের জন্য অফিসের সময়সূচি দেওয়া হয়েছে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে অফিসের সময়সূচি ৯টা থেকে ৫টা। তবে আজকে থেকে ৯টা থেকে কর্মীরা আসা শুরু করেছেন। আগে-পরে আসার সুযোগ নেই। কারণ ব্যাংকে ডিজিটাল হাজিরা দিতে হয়।

কারওয়ান বাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ‘সরকার অফিসের সময়সূচিতে পরিবর্তন এনেছে, এ বিষয়ে নোটিশ পেয়েছি। নির্ধারিত সময়ে আমি এসেছি। অন্যদের বিষয়ে তো আমি জানি না। কারণ আমাদের দেশে যাঁরা নিয়ম তৈরি করেন, তাঁরা নিজেরাই নিয়ম মানেন না।’ ঢাকা ওয়াসার নিরাপত্তা প্রহরী হাসেম বলেন, আজকে অধিকাংশ কর্মী আগে আগে আসতে শুরু করেছেন।

গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল বুধবার থেকে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত অফিস শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং শেষ হবে বেলা ৩টায়। আর ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অফিস শুরু হবে সকাল ৯টায় এবং শেষ হবে বিকেল ৪টায়।

নতুন অফিস সময়ে বিদ্যুতের পিক আওয়ারও বদলাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়ায় সকালে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। পিক আওয়ার দিনের বেলায় চলে এলে আমরা একটা ভারসাম্য করতে পারব।’

নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা দেখলাম আগে যে ট্রেন্ড ছিল সকাল ১০টা থেকে বেড়েছে (বিদ্যুতের চাহিদা), এখন দেখলাম সকাল ৯টা থেকে (চাহিদা) বাড়া শুরু করেছে। এই মুহূর্তে ডেসকোর চাহিদা প্রায় এক হাজারের ওপরে চলে গেছে। তার মানে সিটির ভেতরে ডেসকো এবং ডিপিডিসির পিক আওয়ার থাকে দুপুরে, কিন্তু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এটা আমরা চাচ্ছি যে সন্ধ্যা থেকে পিক আওয়ারটা যদি দিনের বেলায় চলে আসে, তাহলে আমরা একটা সমন্বয় করতে পারব সন্ধ্যা ও দিনের বেলা।’

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজ থেকে নিশ্চিত করতে চাই, মধ্যরাত থেকে সেচপাম্পের জন্য আগামী ১৫ দিন যেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকে। এটি সম্ভব করে ফেলব। আগামী একটা সপ্তাহ আমরা দেখি। যদি এটা কার্যকরী হয়, তাহলে অন্তত বিদ্যুতের ভারসাম্যটা ঠিক করতে পারব।’

প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দিচ্ছেন, এটা কত দিন চলবে—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘লোডশেডিং আমরা কমাচ্ছি। গতকাল রাতে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার চলে আসছে, যেখানে প্রায় ১১ হাজার ছিল। আস্তে আস্তে লোডশেডিং কমে আসছে। পরিস্থিতির কারণে লোডশেডিং আমরা দিতে বাধ্য হয়েছি। যেহেতু আমাদের জ্বালানি ও গ্যাসের সংকট ছিল। ওই জায়গা থেকে আমরা লোডশেডিং ব্যালান্স করার চেষ্টা করছি। এটা করে আমরা সাশ্রয় করতে পারছি।’

বিদ্যুৎ অপচয় রোধে এবং উৎপাদনব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে অফিসের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা যাতে দিনের আলোকে কাজে লাগাতে পারি, সে জন্য অফিস সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই এ নিয়ম চালু রয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সারা বিশ্বই সংকটের মধ্যে পড়েছে। সংকট উত্তরণের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

অফিস সময় কমে যাওয়ায় সেবা ব্যাহত হবে কি না—এ প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন পর্যন্ত প্রতিটি অফিসেই বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) রয়েছে। এর চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত সময়ে সবাই কাজকর্ম সম্পন্ন করবেন বলে আশা করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত