মেলা মানুষে মানুষে আত্মিক, মানবিক, সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে। মানুষ সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে ভাবের আদান-প্রদান করে মেলায় নিজেদের উদ্দীপ্ত করার সুযোগ পায়; কূপমণ্ডূকতা, সংকীর্ণতা, সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সমাজ-সংস্কৃতির গতিশীলতা আনতে সহায়তা করে। মানুষ নিত্যনৈমিত্তিক কাজে হাঁপিয়ে ওঠে, মেলায় এসে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।

৪ নভেম্বর বারিধারা ডিওএইচএস কনভেনশন সেন্টারে একটি ব্যতিক্রমী মেলার আয়োজন হতে যাচ্ছে—প্রবীণ মেলা। চলবে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। কেন প্রবীণ মেলার আয়োজন সে বিষয়ে দু-চারটে কথা বলা আবশ্যক। দেশে প্রায় ২ কোটি প্রবীণের বসবাস। বিপুলসংখ্যক প্রবীণের পরিকল্পিত বিনোদন পাওয়ার সুযোগ কম। বিনোদন প্রবীণের সুযোগ নয়, অধিকার হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।

প্রবীণ মেলায় একজন প্রবীণ সেবার বিভিন্ন খাত সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে, খেলাধুলায় অংশ নেবে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবে, একসঙ্গে খাবে, একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হবে। সামাজিক নানা পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশে প্রবীণদের একাকী হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে তাঁরা প্রতিনিয়ত নানা রকমের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে থাকেন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সময় পর্যাপ্ত তথ্য হাতে না থাকার কারণে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ঝামেলা পোহাতে হয়।

একাকী প্রবীণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা গ্রহণে, চলাচলে বিড়ম্বনার শিকার হন। প্রবীণ মেলায় অংশগ্রহণ করে প্রবীণেরা নানা বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে—কোথায় কোন ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। এই মেলা প্রবীণের আবেগিক চাহিদাগুলো সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে মোকাবিলা করার কৌশল সম্পর্কে অবহিত করবে।

দেশের প্রথম সারির তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মেলায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রবীণ জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ, সংকট, সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করবে। গার্লস গাইড, লিও ক্লাব, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রবীণ মেলায় অংশ নেবেন। নতুন প্রজন্ম প্রবীণ জীবন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করবে। নিজেদের বার্ধক্য কেমন হবে, সে বিষয়ে নতুন চিন্তা করতে শিখবে।

প্রবীণ মেলায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রদত্ত স্টল থেকে প্রবীণ কল্যাণে সরকারের গৃহীত নানা কর্মসূচি সম্পর্কে মেলায় অংশগ্রহণকারীরা জানতে পারবেন; বিশেষ করে বয়স্ক ভাতা, প্রবীণ নিবাস, সরকারি শিশু পরিবারে প্রবীণদের থাকা-খাওয়ার সুযোগ, কঠিন রোগের চিকিৎসায় সরকারের আর্থিক সহায়তা, হাসপাতাল, সমাজসেবা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যাবে।

অনেক প্রবীণ মানসিক কষ্টে ভোগেন, নিঃসঙ্গ প্রবীণদের একাকী জীবন যন্ত্রণা লাঘবে মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলিং থাকবে। প্রবীণদের দাঁতের যত্নে ডেন্টিস্ট্রি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেবেন। মামলা-মোকদ্দমা, আইনকানুন বিষয়ে আইন পরামর্শ কেন্দ্রে অভিজ্ঞ আইনজীবীরা পরামর্শ দেবেন। প্রবীণের পোষা পশু-পাখির যত্নে, চিকিৎসায়, সেবায় অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ পাবেন। প্রবীণদের আয়কর বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিতে মেলায় আয়কর উপদেষ্টাদের একটি দল কাজ করবে।

মেলায় স্টল দেবে দেশের সর্ববৃহৎ বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র, গাজীপুর। তারা অসহায় প্রবীণদের বিনা মূল্যে থাকা-খাওয়ার সুযোগ এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়। সুবার্তা ট্রাস্টের প্রবীণ নিবাসগুলোতে টাকার বিনিময়ে প্রবীণদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তাদের স্টলও মেলায় থাকবে।

স্টল থাকবে হোম কেয়ার সার্ভিস পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান স্যার উইলিয়াম বেভারিজ ফাউন্ডেশন, কেয়ার এট হোম, এক্সট্রা মাইল এইজ কেয়ারের। তাদের কাছ থেকে জানা যাবে একজন প্রবীণ বাড়িতে সেবা পেতে কী পরিমাণ অর্থ খরচ করবেন। সেবার মান বজায় রাখতে সেবা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান কী ধরনের ভূমিকা পালন করে তা-ও জানা যাবে। আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথির দুটো প্রতিষ্ঠান মেলায় স্টল দিয়ে প্রবীণদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা এবং ওষুধ দেবে।

চকসা ফাউন্ডেশন প্রবীণদের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করবে। ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি স্টলগুলো থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপনের নিয়মকানুন, কৌশল সম্পর্কে অবহিত হতে পারবেন। পুষ্টি কর্নার থেকে একদল অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের বিনা মূল্যে পরামর্শ পাবেন।

একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ৩০০ প্রবীণের বোন ডেনসিটি (হাড় ক্ষয়) টেস্ট বিনা মূল্যে হবে। শহুরে জীবনে অনেকেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকার ইচ্ছে পোষণ করে, তাদের জন্য ছাদবাগান করার পরামর্শ দেওয়া হবে। মেলায় স্বাস্থ্যের বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা বিনা মূল্যে করা হবে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড প্রবীণদের আনন্দিত করবে। শতাধিক র‍্যাফেল ড্র পুরস্কার মেলার আকর্ষণ বাড়িয়ে দেবে। এই মেলার আয়োজন করছে প্রবীণ অধিকার মঞ্চ বাংলাদেশ। মেলাটি হবে আগামী দিনের প্রবীণ অধিকার বাস্তবায়ন করার একটি শুভসূচনা।