ভুয়া বন্দোবস্তে বেহাত কোটি টাকার খাসজমি

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ০২
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ২০

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় কোটি কোটি টাকার সরকারি খাসজমি ভুয়া বন্দোবস্তের নামে বেহাত হয়েছে। দখলদারদের হাত থেকে নদী, খাল ও জলাশয়ও রক্ষা পাচ্ছে না। একটি সংঘবদ্ধ চক্র স্থানীয় ভূমি অফিস, বিএস মাঠ জরিপ কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রচ্ছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি আত্মসাৎ করে আসছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মধুখালী মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ২০ দশমিক ৬৭ একর জমি আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে ভুয়া বন্দোবস্ত ২৩৫-কে/ ১৯৫৩-১৯৫৪ কেস দেখিয়ে ১৫৯ নম্বর খতিয়ান খুলে বিএস মাঠ জরিপে ৬২৯৯, ৬২৯৭, ৬৩৯৪, ৬৪০৪ ও ৬৪০৯ নম্বর দাগে পৃথক ১০৬২ ও ১১৮১ নম্বর খতিয়ান প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই জমি ৩০ ধারা পর্যন্ত ১ নম্বর খাস খতিয়ান হিসেবে ছিল। পরবর্তী সময়ে ৩১ ধারা (আপিল) মোকদ্দমায় কারসাজি করে প্রজার নামে সরকারের সম্পত্তির খতিয়ান দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে পূর্ব মধুখালী গ্রামের মাহাতাব হাওলাদার ও তাঁর শরিকেরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন।

এরপর সংশ্লিষ্ট নয়াকাটা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও কলাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে জানান, উল্লিখিত বন্দোবস্ত কেস, খতিয়ান সঠিক নয়। বিএস মাঠ জরিপে ভুলক্রমে এটি করা হয়েছে, যা বাতিলের জন্য অনুরোধ জানান তাঁরা। তবে এটি বাতিল করতে হলে দেওয়ানি কার্যবিধি আইনে জেলা প্রশাসককে বাদী হয়ে আদালতে মামলা করতে হবে।

এ বিষয়ে ভুয়া ২৩৫-কে/ ১৯৫৩-১৯৫৪ বন্দোবস্ত কেসের গ্রহীতা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একজন কাঠমিস্ত্রি। এখন কাজ করতেছি। বিষয়টি আমি ভালো জানি না। ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে আপনাকে ফোন করব।’

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘২৩৫-কে/ ১৯৫৩-১৯৫৪ কেসটি ভুয়া। ১৫৯ নম্বর নামে কোনো খতিয়ানের অস্তিত্ব নেই ভূমি অফিসে। বিধিবহির্ভূত বিএস মাঠ জরিপ করা হয়েছে। উল্লিখিত জমি খাল শ্রেণির ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি।’

এর আগে আন্ধারমানিক, চিংগড়িয়া, নাচনাপাড়া, টিয়াখালী, শিববাড়িয়া, দোন নদী, খালসহ জলাশয়কে নাল জমি দেখিয়ে ভুয়া বন্দোবস্ত কেসে খতিয়ান, মাঠ জরিপ হয়ে কয়েক হাত বদল হয়ে গেছে মালিকানার। একটি চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সরকারের সম্পত্তি বিক্রি করে। এসব নদী, খাল ও জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। আদালত পর্যন্ত গড়িয়ে পাকাপোক্ত হয়েছে দখলিস্বত্ব।

এমনকি আন্ধারমানিক নদীর ডুবো চর বিক্রি হয়ে গেছে ভুয়া বন্দোবস্ত কেস, খতিয়ান ও খাজনা দাখিলা দিয়ে।

কলাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) জগৎ বন্ধু মণ্ডল বলেন, ‘সরকারি খাস জমি উদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বেদখল হওয়া সব সরকারি জমি পর্যায়ক্রমে উদ্ধার করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত