এম আর খায়রুল উমাম
এ বছর দেশে স্মরণকালের ভয়াবহ তাপপ্রবাহ চলছে। এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল। পরিবেশের এই ‘গরম’ অবস্থা প্রকোপ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে ভূগোলবিদ, পরিবেশবিদ, সরকার আর সাধারণ মানুষের। ভূগোলবিদ ভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কারণ বিশ্লেষণ করছেন, পরিবেশবিদ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, সরকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গে অতীত কর্মকাণ্ডের তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আর সাধারণ মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চলমান ক্রূর অব্যবস্থাপনা এবং ধর্মীয় অনুশাসন পালনে নিজেদের দুর্বলতার ওপর দায় চাপিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে পরিবেশের বিরূপ আচরণ সহ্য করে চলছে। যে যা-ই বিশ্লেষণ করুক না কেন, সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা নদীমাতৃক ষড়্ঋতুর আমাদের এই দেশটার প্রকৃতি ও পরিবেশ যে দিনে দিনে চরম বৈরী হয়ে উঠেছে তা অস্বীকার করা যাবে না কোনোভাবেই। ক্ষমতার বলয়ের মানুষের ক্রম-গৃহীত ভুল পরিকল্পনার সমাহারই আজকের এই চরম বৈরী আবহাওয়ার জন্য দায়ী। পাশাপাশি ভুল পরিকল্পনা থেকে শিক্ষা না নেওয়ার ফলও ভোগ করতে হচ্ছে দেশ ও জনগণকে।
নেতাদের স্বপ্নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বারবার প্রকৃতি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণকেও চরমভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিগত সরকার জনসাধারণের দোরগোড়ায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে উৎপাদনের খবর না রেখে খাম্বা উন্নয়ন করে গেছে। বর্তমান সরকার বিদ্যুতের জন্য জনজীবনের অতিষ্ঠ অবস্থা দেখে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিবেদিত হয়েছে। কিন্তু সৎ পরিকল্পনার অভাবে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও তার সুফল জনগণের ভাগ্যে জুটল না আজও। শুধু প্রকৃতি ও পরিবেশকে উপেক্ষা করা হলো দারুণভাবে। দেশের রাজনৈতিক নেতা আর পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রচারেই আজ বিদ্যুতের জয়জয়কার চলমান। এ বিষয়ে কথা তুললেই বলা হচ্ছে গ্রিসে বিদ্যুতের মূল্য প্রতি ইউনিট ৪০ টাকা, সেখানে আমাদের দুই মাসে তিনবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পরও এখনো তা গ্রিসের তুলনায় অনেক কম। তাই এ খাতে লোকসান কমাতে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানো হলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। আমরা উন্নত দেশের কাতারে ভিড়তে চলেছি, তাই নির্বিকার জনগণ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে একরকম বাধ্য।
‘রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে’—এ বিষয়ে দেশের প্রায় সব সেক্টর থেকে প্রতিবাদ হওয়ার পরও সরকার কারও কথা না শুনে কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে আরও শিল্পকারখানা নির্মাণ হচ্ছে। মন্ত্রী থেকে সচিব পর্যন্ত সুন্দরবন এবং এর আশপাশের স্থাপনা বিষয়ে এমন সব মন্তব্য করে চলেছেন, যাতে করে সহজেই অনুমেয়, সুন্দরবনের উপকারিতা সাধারণ জনগণের কাছে প্রকৃতি ও জীবন রক্ষাকারী হলেও সরকারের কাছে তা নয়। সংশ্লিষ্টদের শুধু নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রকল্প চাই, তাতে না বাঁচুক প্রাণ-প্রকৃতি, দাবদাহে দগ্ধ হোক মানুষ।
একটা সময় পর্যন্ত দেশের সড়কের পাশে গাছের শোভা শুধু দেশের মানুষকেই নয়, বিদেশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় অনন্য অবদান রাখত এই গাছগুলো। এখন সারা দেশে সড়কব্যবস্থায় উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। এই জোয়ারের প্রথম ধাক্কায় কাটা পড়ছে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী থেকে নবীন চারা গাছ পর্যন্ত। সম্প্রতি রাজধানীর সাত মসজিদ রোডের গাছ কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলনরত এলাকার মানুষ। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—গাছ রক্ষা ও লাগানোর উপদেশদানকারী রাষ্ট্র নিজেই কেন গাছ কাটছে? সিটি করপোরেশনের পক্ষে এই গাছ কাটার লিখিত অনুমোদন এখন পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেনি। শুধু এবারেই নয়, যশোর রোডের কিংবা যশোর-খুলনা সড়কের কয়েক হাজার গাছ হত্যা সব ক্ষেত্রেই গাছ রক্ষার শপথ পাঠ করানো সরকার গাছ কাটার পক্ষে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভয়ংকর বিষয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় নাগরিক কমিটি করা হয়েছে, যারা গাছ কাটার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের দায়িত্বে নিয়োজিত।
আসলে দেশের মানুষ রাজনৈতিক মতাদর্শে এমনভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে যে তাদের বিবেচনায়—দেশ ও জাতির কথা পরে ভাবা যাবে, এখন নিজের কথা ভাবাই উত্তম। এতে করে দিনে দিনে বনায়ন কমেই চলেছে। অথচ পরিবেশের জন্য গাছের ভূমিকা সবাই জানে। প্রতিবছর দেশে সাড়ম্বরে পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। প্রতিবছর একই জায়গায় খ্যাতনামা ব্যক্তিরা গাছ লাগান। তাঁরা জনগণকে গাছ লাগাতে নির্দেশ দেন। কিন্তু দিবস পালনের শেষে ক্ষমতাবানেরা ভুলেই যান, রেড ইন্ডিয়ানদের উক্তি—’যখন শেষ গাছটি কেটে ফেলা হবে, শেষ মাছটি খেয়ে ফেলা হবে, শেষ জলাধারটি বিষাক্ত হবে, তখন বুঝবে টাকা খাওয়া যায় না।’ তাই প্রকৃতির রুদ্ররোষ আর দগ্ধরূপের প্রকোপ বেড়েই চলে প্রতিদিন।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী রক্ষা কোনো দিন গুরুত্ব পায়নি। সীমাহীন অত্যাচারের স্বীকার হয়ে কত যে নদী হারিয়ে গেছে, তার হিসাব নেই। ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান কাল পার হয়ে আজও স্বাধীন বাংলাদেশে সমভাবে অত্যাচার চলমান। সাংবিধানিকভাবে আমাদের সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলার নীতির কারণে দু-একটি নদীর পানির জন্য চিৎকার অন্তত করলেও কেউ কথা শোনে না। তিস্তার পানি চুক্তির জন্য বছরের পর বছর ধরে রাস্তায় ঘুরতে হয় আমাদের। ফারাক্কা ব্যারাজ অস্থায়ীভাবে পরীক্ষামূলক চালু হলেও আর বন্ধ হয় না। আর সরকার দেশি-বিদেশি পরামর্শে একটার পর একটা উচ্চাভিলাষী ভুল প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে নদীর বিপন্নতাকে ত্বরান্বিত করছে। মালিকানার অভাবে নদী ব্যবহৃত, দখল ও দূষিত হয়েছে।
শুধু নদী নয়, কোনো জেলায় কোনো জলাশয় রক্ষা পেয়েছে—এমন দাবিও কেউ করতে পারবে না। গ্রাম থেকে শহর—কোথাও জলাশয়ের সবচেয়ে ছোট ইউনিট পুকুর রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। পুকুর রক্ষার আইন আছে কিন্তু বাস্তবায়নের কেউ নেই। ফলে পুকুর ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশবাদী বোদ্ধা নেতা থেকে সাধারণ মানুষ এবং সরকার, কেউ পিছিয়ে থাকেনি। এলাকার পর এলাকা পুকুরশূন্য হয়েছে, পরিবেশের ওপর চাপ বাড়ছে, পানির সংকট ঊর্ধ্বমুখী, জলাবদ্ধতা বাড়ছে, বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার। পরিবেশ রক্ষায় পুকুরের ন্যূনতম গুরুত্ব সরকার কিংবা জনগণ কর্তৃক বিবেচিত না হলেও পুকুর খনন শিক্ষার জন্য কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ঠিকই চলছে। কী বিচিত্র বৈপরীত্য!
সরকার দেশের জনসংখ্যাকে সম্পদ বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রণ না করে উল্টো খাদ্যের জোগান দিতে প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের নামে জলাভূমি পর্যন্ত ধ্বংস করার মহাপরিকল্পনায় ব্যস্ত। মাছে-ভাতে বাঙালির মাছ অনেককাল আগেই তিরোহিত এবং চাল একমাত্র খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় চলনবিলকেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে এলাকার পর এলাকা বাঁধ দিয়ে ঘেরা হয়েছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় ছোট স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে একদিকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে ছোট নদী-খাল মারা পড়েছে। বেহিসাবি পরিকল্পনা কত নদী-খাল জলাভূমি ধ্বংস করেছে তার হিসাব কেউ রাখে না। আমরা শুধু বিশ্বাস করছি জীবন যিনি দিয়েছেন, তিনি আহারও দেবেন! প্রকৃতি রক্ষার কীই-বা প্রয়োজন!
দেশের আবহাওয়া যতই চরম হোক, তাতে নীতিনির্ধারকদের কোনো সমস্যা নেই। কারণ তাদের পরিবার বিদেশে থাকে, নিজের বাড়ি-গাড়ি সবখানেই
আছে ঠান্ডা মেশিন। প্রয়োজনে আরও দু-একটা কেনা যাবে। এই ঠান্ডা মেশিনে আবহাওয়া আরও গরম হচ্ছে, কিন্তু তাতে সমস্যা কী? জনগণের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য আমরা একের পর এক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে বিশ্বের মডেল হতে চাই, জাতে উঠতে চাই। আর চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাওয়া ঋণ কিংবা অনুদানের বৈদেশিক মুদ্রায় কত জনার সেকেন্ড হোম হবে, আগামীর অভিজাত জীবন যাপনের রসদ সংগৃহীত হবে, সেটাই তো একমাত্র হিসাবের বিষয়। তাই চরম আবহাওয়া নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।
দেশের জনগণ সব অবস্থায় নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম। প্রয়োজনে নেতারা স্বপ্ন দেখাতে শুরু করবে, ‘৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রা গেলে মাটির নিচের সব পানি তেল হয়ে যাবে। তখন আর দেখে কে? ২০৪১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। আমরা বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ হব।’ তাই কবীর সুমন যতই গেয়ে চলুক, ‘আমি চাই গাছ কাটা হলে শোকসভা হবে বিধানসভায়, আমি চাই প্রতিবাদ হবে রক্ত পলাশে, রক্ত জবায়’, পৃথিবীকে ঠান্ডা রাখার প্রয়োজনীয়তা আমাদের আছে কি?
লেখক: প্রাবন্ধিক, সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ
এ বছর দেশে স্মরণকালের ভয়াবহ তাপপ্রবাহ চলছে। এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল। পরিবেশের এই ‘গরম’ অবস্থা প্রকোপ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে ভূগোলবিদ, পরিবেশবিদ, সরকার আর সাধারণ মানুষের। ভূগোলবিদ ভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কারণ বিশ্লেষণ করছেন, পরিবেশবিদ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, সরকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গে অতীত কর্মকাণ্ডের তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আর সাধারণ মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চলমান ক্রূর অব্যবস্থাপনা এবং ধর্মীয় অনুশাসন পালনে নিজেদের দুর্বলতার ওপর দায় চাপিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে পরিবেশের বিরূপ আচরণ সহ্য করে চলছে। যে যা-ই বিশ্লেষণ করুক না কেন, সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা নদীমাতৃক ষড়্ঋতুর আমাদের এই দেশটার প্রকৃতি ও পরিবেশ যে দিনে দিনে চরম বৈরী হয়ে উঠেছে তা অস্বীকার করা যাবে না কোনোভাবেই। ক্ষমতার বলয়ের মানুষের ক্রম-গৃহীত ভুল পরিকল্পনার সমাহারই আজকের এই চরম বৈরী আবহাওয়ার জন্য দায়ী। পাশাপাশি ভুল পরিকল্পনা থেকে শিক্ষা না নেওয়ার ফলও ভোগ করতে হচ্ছে দেশ ও জনগণকে।
নেতাদের স্বপ্নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বারবার প্রকৃতি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণকেও চরমভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিগত সরকার জনসাধারণের দোরগোড়ায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে উৎপাদনের খবর না রেখে খাম্বা উন্নয়ন করে গেছে। বর্তমান সরকার বিদ্যুতের জন্য জনজীবনের অতিষ্ঠ অবস্থা দেখে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিবেদিত হয়েছে। কিন্তু সৎ পরিকল্পনার অভাবে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও তার সুফল জনগণের ভাগ্যে জুটল না আজও। শুধু প্রকৃতি ও পরিবেশকে উপেক্ষা করা হলো দারুণভাবে। দেশের রাজনৈতিক নেতা আর পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রচারেই আজ বিদ্যুতের জয়জয়কার চলমান। এ বিষয়ে কথা তুললেই বলা হচ্ছে গ্রিসে বিদ্যুতের মূল্য প্রতি ইউনিট ৪০ টাকা, সেখানে আমাদের দুই মাসে তিনবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পরও এখনো তা গ্রিসের তুলনায় অনেক কম। তাই এ খাতে লোকসান কমাতে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানো হলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। আমরা উন্নত দেশের কাতারে ভিড়তে চলেছি, তাই নির্বিকার জনগণ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে একরকম বাধ্য।
‘রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে’—এ বিষয়ে দেশের প্রায় সব সেক্টর থেকে প্রতিবাদ হওয়ার পরও সরকার কারও কথা না শুনে কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে আরও শিল্পকারখানা নির্মাণ হচ্ছে। মন্ত্রী থেকে সচিব পর্যন্ত সুন্দরবন এবং এর আশপাশের স্থাপনা বিষয়ে এমন সব মন্তব্য করে চলেছেন, যাতে করে সহজেই অনুমেয়, সুন্দরবনের উপকারিতা সাধারণ জনগণের কাছে প্রকৃতি ও জীবন রক্ষাকারী হলেও সরকারের কাছে তা নয়। সংশ্লিষ্টদের শুধু নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রকল্প চাই, তাতে না বাঁচুক প্রাণ-প্রকৃতি, দাবদাহে দগ্ধ হোক মানুষ।
একটা সময় পর্যন্ত দেশের সড়কের পাশে গাছের শোভা শুধু দেশের মানুষকেই নয়, বিদেশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় অনন্য অবদান রাখত এই গাছগুলো। এখন সারা দেশে সড়কব্যবস্থায় উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। এই জোয়ারের প্রথম ধাক্কায় কাটা পড়ছে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী থেকে নবীন চারা গাছ পর্যন্ত। সম্প্রতি রাজধানীর সাত মসজিদ রোডের গাছ কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলনরত এলাকার মানুষ। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—গাছ রক্ষা ও লাগানোর উপদেশদানকারী রাষ্ট্র নিজেই কেন গাছ কাটছে? সিটি করপোরেশনের পক্ষে এই গাছ কাটার লিখিত অনুমোদন এখন পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেনি। শুধু এবারেই নয়, যশোর রোডের কিংবা যশোর-খুলনা সড়কের কয়েক হাজার গাছ হত্যা সব ক্ষেত্রেই গাছ রক্ষার শপথ পাঠ করানো সরকার গাছ কাটার পক্ষে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভয়ংকর বিষয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় নাগরিক কমিটি করা হয়েছে, যারা গাছ কাটার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের দায়িত্বে নিয়োজিত।
আসলে দেশের মানুষ রাজনৈতিক মতাদর্শে এমনভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে যে তাদের বিবেচনায়—দেশ ও জাতির কথা পরে ভাবা যাবে, এখন নিজের কথা ভাবাই উত্তম। এতে করে দিনে দিনে বনায়ন কমেই চলেছে। অথচ পরিবেশের জন্য গাছের ভূমিকা সবাই জানে। প্রতিবছর দেশে সাড়ম্বরে পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। প্রতিবছর একই জায়গায় খ্যাতনামা ব্যক্তিরা গাছ লাগান। তাঁরা জনগণকে গাছ লাগাতে নির্দেশ দেন। কিন্তু দিবস পালনের শেষে ক্ষমতাবানেরা ভুলেই যান, রেড ইন্ডিয়ানদের উক্তি—’যখন শেষ গাছটি কেটে ফেলা হবে, শেষ মাছটি খেয়ে ফেলা হবে, শেষ জলাধারটি বিষাক্ত হবে, তখন বুঝবে টাকা খাওয়া যায় না।’ তাই প্রকৃতির রুদ্ররোষ আর দগ্ধরূপের প্রকোপ বেড়েই চলে প্রতিদিন।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী রক্ষা কোনো দিন গুরুত্ব পায়নি। সীমাহীন অত্যাচারের স্বীকার হয়ে কত যে নদী হারিয়ে গেছে, তার হিসাব নেই। ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান কাল পার হয়ে আজও স্বাধীন বাংলাদেশে সমভাবে অত্যাচার চলমান। সাংবিধানিকভাবে আমাদের সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলার নীতির কারণে দু-একটি নদীর পানির জন্য চিৎকার অন্তত করলেও কেউ কথা শোনে না। তিস্তার পানি চুক্তির জন্য বছরের পর বছর ধরে রাস্তায় ঘুরতে হয় আমাদের। ফারাক্কা ব্যারাজ অস্থায়ীভাবে পরীক্ষামূলক চালু হলেও আর বন্ধ হয় না। আর সরকার দেশি-বিদেশি পরামর্শে একটার পর একটা উচ্চাভিলাষী ভুল প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে নদীর বিপন্নতাকে ত্বরান্বিত করছে। মালিকানার অভাবে নদী ব্যবহৃত, দখল ও দূষিত হয়েছে।
শুধু নদী নয়, কোনো জেলায় কোনো জলাশয় রক্ষা পেয়েছে—এমন দাবিও কেউ করতে পারবে না। গ্রাম থেকে শহর—কোথাও জলাশয়ের সবচেয়ে ছোট ইউনিট পুকুর রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। পুকুর রক্ষার আইন আছে কিন্তু বাস্তবায়নের কেউ নেই। ফলে পুকুর ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশবাদী বোদ্ধা নেতা থেকে সাধারণ মানুষ এবং সরকার, কেউ পিছিয়ে থাকেনি। এলাকার পর এলাকা পুকুরশূন্য হয়েছে, পরিবেশের ওপর চাপ বাড়ছে, পানির সংকট ঊর্ধ্বমুখী, জলাবদ্ধতা বাড়ছে, বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার। পরিবেশ রক্ষায় পুকুরের ন্যূনতম গুরুত্ব সরকার কিংবা জনগণ কর্তৃক বিবেচিত না হলেও পুকুর খনন শিক্ষার জন্য কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ঠিকই চলছে। কী বিচিত্র বৈপরীত্য!
সরকার দেশের জনসংখ্যাকে সম্পদ বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রণ না করে উল্টো খাদ্যের জোগান দিতে প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের নামে জলাভূমি পর্যন্ত ধ্বংস করার মহাপরিকল্পনায় ব্যস্ত। মাছে-ভাতে বাঙালির মাছ অনেককাল আগেই তিরোহিত এবং চাল একমাত্র খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় চলনবিলকেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে এলাকার পর এলাকা বাঁধ দিয়ে ঘেরা হয়েছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় ছোট স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে একদিকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে ছোট নদী-খাল মারা পড়েছে। বেহিসাবি পরিকল্পনা কত নদী-খাল জলাভূমি ধ্বংস করেছে তার হিসাব কেউ রাখে না। আমরা শুধু বিশ্বাস করছি জীবন যিনি দিয়েছেন, তিনি আহারও দেবেন! প্রকৃতি রক্ষার কীই-বা প্রয়োজন!
দেশের আবহাওয়া যতই চরম হোক, তাতে নীতিনির্ধারকদের কোনো সমস্যা নেই। কারণ তাদের পরিবার বিদেশে থাকে, নিজের বাড়ি-গাড়ি সবখানেই
আছে ঠান্ডা মেশিন। প্রয়োজনে আরও দু-একটা কেনা যাবে। এই ঠান্ডা মেশিনে আবহাওয়া আরও গরম হচ্ছে, কিন্তু তাতে সমস্যা কী? জনগণের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য আমরা একের পর এক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে বিশ্বের মডেল হতে চাই, জাতে উঠতে চাই। আর চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাওয়া ঋণ কিংবা অনুদানের বৈদেশিক মুদ্রায় কত জনার সেকেন্ড হোম হবে, আগামীর অভিজাত জীবন যাপনের রসদ সংগৃহীত হবে, সেটাই তো একমাত্র হিসাবের বিষয়। তাই চরম আবহাওয়া নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।
দেশের জনগণ সব অবস্থায় নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম। প্রয়োজনে নেতারা স্বপ্ন দেখাতে শুরু করবে, ‘৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রা গেলে মাটির নিচের সব পানি তেল হয়ে যাবে। তখন আর দেখে কে? ২০৪১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। আমরা বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ হব।’ তাই কবীর সুমন যতই গেয়ে চলুক, ‘আমি চাই গাছ কাটা হলে শোকসভা হবে বিধানসভায়, আমি চাই প্রতিবাদ হবে রক্ত পলাশে, রক্ত জবায়’, পৃথিবীকে ঠান্ডা রাখার প্রয়োজনীয়তা আমাদের আছে কি?
লেখক: প্রাবন্ধিক, সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১২ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে