Ajker Patrika

দ্রব্যমূল্যের রাশ টানাই নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দ্রব্যমূল্যের রাশ টানাই নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ

দ্রব্যমূল্যের রাশ টেনে ধরে জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে মানুষকে একটু স্বস্তি দেওয়া, ডলার-সংকট কাটিয়ে ওঠা আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো ভাবমূর্তি রক্ষা নতুন সরকারের জন্য আশু চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। 

এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারকে নতুন মেয়াদে শুরু থেকেই তৎপর ও সতর্ক থাকতে বলছেন তাঁরা। 

ভোটের পরদিন গতকাল সোমবার অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি সারা বছর বেড়েছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এটা কমিয়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা দরকার। এর পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা গত দুই বছরে অনেক দুর্বল হয়েছে। এই ক্ষেত্রেও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে।

মাত্র দুই দিন আগে ২০২৩ সালে বিশ্বে খাদ্যমূল্যের পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছে, গত বছর বিশ্ববাজারে চিনি ছাড়া অন্য খাদ্যের দাম বাড়েনি। বরং, কমেছে ১৩.৭ শতাংশ।

অথচ উল্টো চিত্র ছিল বাংলাদেশে। শুল্ক ও কর কমিয়ে সরকার ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিলেও চিনি, ভোজ্যতেল, আটা, ডাল, পেঁয়াজসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়িয়েছে তাঁরা। স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতির রেকর্ডও হয়েছে গত বছর। শুধু বিদেশ থেকে আনা পণ্যের নয়, দেশে উৎপাদিত শাকসবজি থেকে আলু, ডিমের দামও ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। কীভাবে বাজারকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা যায়, নতুন বাণিজ্যমন্ত্রীর জন্য এটি একটি বড় পরীক্ষা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

দেশে চলমান ডলার-সংকট কাটাতে হলে প্রবাসী আয় বাড়িয়ে ও রপ্তানিতে গতি এনে ডলারের জোগান বাড়ানো ছাড়া বিকল্প পথ নেই বলে মনে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা মিশনের সাবেক এই প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, চাহিদা ও আমদানি কমিয়ে সংকট মোচনের অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।

একসময়ের ৪৮ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে আসে ১৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। সামনে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে হলে, বেসরকারি খাতকে চাঙা করে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান বাড়িয়ে রাজস্ব আয়ের চাকা সচল করতে হলে, এ খাতে বেশ কিছু সংস্কার করার চাপ থাকবে।

আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতাও ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে, এমন পর্যবেক্ষণ দিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, এই ভঙ্গুরতা নতুন নয়। কিন্তু তা মোকাবিলার জন্য খেলাপি ঋণের রাশ টেনে ধরা, ব্যাংক পর্ষদ সদস্যদের যথেচ্ছ ঋণ নেওয়ায় রাশ টানাসহ এই খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো ও পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন তিনি। 

তৈরি পোশাকশিল্পসহ রপ্তানি খাত দুই বছর ধরে নানা সংকট পার করছে। ভূরাজনৈতিক নানা কারণে রপ্তানি বাজার নিয়ে নানা শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। আমেরিকা ও তার বন্ধুদেশগুলো কোনো বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেয় কি না, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। এটিও নতুন সরকারের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। 

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্রগুলো, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ উন্নয়ন-অংশীদার দেশগুলো, আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সংগঠন ও প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো সংসদ নির্বাচনকে কীভাবে দেখে, বৈশ্বিক রাজনীতিতে নতুন সরকার কী কৌশল অবলম্বন করবে, তার ওপর সরকারের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি অনেকটাই নির্ভর করবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন কবির। 

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশ ও সংস্থাগুলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়েছিল, এমনটা উল্লেখ করে হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তারা মনে করে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বাড়বে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে এরই মধ্যে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।’

রোহিঙ্গা সংকটে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বাংলাদেশের পাশে ছিল, এমন উদাহরণ দিয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘নতুন সরকার কীভাবে দেশের ভেতরকার রাজনীতিতে বিন্যাস ঘটাতে চায়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। সরকার ইতিবাচক পথে এগোলে ভাবমূর্তির সংকট কাটিয়ে ওঠার পথে তা সহায়ক হতে পারে।’ তবে আন্তর্জাতিক মহল কথায় নয়, বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ও কাজে ফল দেখতে চাইবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত