লোকসান গোনেন খামারি মুনাফা লোটেন ব্যবসায়ী

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২২, ০৭: ২৩
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২২, ১৬: ০০

খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ময়মনসিংহের মুরগির খামারিরা। অনেকে খামার বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছেন। তারা খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি লোডশেডিং কমিয়ে পোলট্রি শিল্পকে বাঁচানোর দাবি জানান।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস বলছে, ব্রয়লার এবং লেয়ার সবসময় নির্দিষ্ট তাপমাত্রার মধ্যে রাখতে হয়। তাপমাত্রা আপডাউন করলে উৎপাদনও আপডাউন করে। অতিরিক্ত গরমে খামারের সমস্যা হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে জানা গেছে, জেলায় নিবন্ধনকৃত বাণিজ্যিক খামারের সংখ্যা ব্রয়লার মুরগি ৪৩৮টি অনিবন্ধিত ৫ হাজার ২২৭টি, লেয়ার মুরগি নিবন্ধনকৃত ৩১৫টি, অনিবন্ধনকৃত ৪ হাজার ৭৮৩টি, কক মুরগি নিবন্ধনকৃত ৩৭টি, অনিবন্ধনকৃত ১ হাজার ২১৩টি, হাঁসের নিবন্ধনকৃত ৬১টি এবং অনিবন্ধনকৃত ১ হাজার ৬৫টি রয়েছে।

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের চরশ্রীরামপুরে অবস্থিত নাফিসা অ্যাগ্রো লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি থেকে কিছুদিন আগেও প্রতিদিন ৮৫ হাজার ডিম উৎপাদন করা হতো। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ৬০ হাজার লেয়ার মুরগি অন্যত্র বিক্রি করে দেন খামারি। সম্প্রতি ময়মনসিংহসহ সারা দেশে ঊর্ধ্বগতির বাজারে অস্বাভাবিক হারে ডিমের দাম বৃদ্ধি পেলেও সেখানকার খামারি বলছেন, তাদের উৎপাদন খরচ বাড়লেও তারা ডিমের দাম তেমন বৃদ্ধি করেননি। এক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা নিচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

খামার থেকে প্রতি হালি ডিম ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায় তারা বিক্রি করছেন। কিন্তু তাদের বিক্রি করা ডিম বাজারে ৫০ টাকা হালি দরে বিক্রি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন খামারিরা।

খামারি আল আমিন বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছি। সম্প্রতি অতিরিক্ত লোডশেডিং এবং খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাপ নিতে না পেরে ৬৫ হাজার মুরগি বিক্রি করে দিয়েছি। এখন ২০ হাজারের মতো লেয়ার মুরগি আছে। সেগুলো লালন-পালনে বেগ পোহাতে হচ্ছে। বাজারে ডিমের দাম বাড়তি থাকলেও আমাদের বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা হালি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এমনও দিন যায় ৪৫ বার লোডশেডিং হয়। বেশি লোডশেডিং হলে গরমে ডিম উৎপাদন কম হয়।

ফুলবাড়িয়ার খামারি সাইফুল ইসলাম বলেন, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ থাকে না বললেই চলে। মুরগি লালন-পালন করতে হলে সব বিষয়ে সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকতে হয়। অতিরিক্ত গরমে বেশ কয়েকটি পোলট্রি মুরগি মারা গেছে। লেয়ার মুরগির ডিম অর্ধেকে নেমে এসেছে। তিনি আরও বলেন, বাজারে শুনি ডিমের হালি ৫০ টাকা আর পোলট্রি ২০০ টাকা কেজি। কিন্তু আমাদের ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা হালিতে আর পোলট্রি ১৩০ টাকা কেজিতে। এত টাকা বিনিয়োগ করে প্রতিটি ডিমে এক থেকে দেড় টাকা লাভ করাটাও খুব কঠিন হয়ে পড়ে।

ডিম ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, খামার মালিকেরা ডিমের যে দাম নির্ধারণ করে দেন সে দামেই আমরা ক্রয় করে থাকি। প্রতিদিন ডিমের বাজার ওঠানামা করছে, আমাদের ওপর শুধু দোষ দিয়ে লাভ নেই।

ময়মনসিংহ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘ব্রয়লার এবং লেয়ার সব সময় নির্দিষ্ট তাপমাত্রার মধ্যে রাখতে হয়। তাপমাত্রা আপডাউন করলে উৎপাদনও আপডাউন করে। অতিরিক্ত গরমে সমস্যা হচ্ছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে প্রত্যেক উপজেলার ইউএনও ও এসি ল্যান্ড নিয়মিত মনিটরিং করছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত