Ajker Patrika

বিদ্রোহীরা নৌকার গলার কাঁটা

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ১৫ মে ২০২২, ১১: ৩৫
বিদ্রোহীরা নৌকার গলার কাঁটা

বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রত্যেক ইউপিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। দুই উপজেলার ৮টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ৩০ জন। সাংসদ পঙ্কজ নাথের অনুসারী হওয়ায় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানরা দলীয় মনোনয়ন পাননি। গতবারও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোট করে চেয়ার‍ম্যান হন তাঁরা। এবারও দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় বিদ্রোহীরা এখন নৌকার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছেন।

বিদ্রোহীদের অভিযোগ—যোগ্য প্রার্থীরা স্থানীয় নেতাদের কারণে বঞ্চিত হয়েছেন। তবে স্থানীয় সাংসদ পঙ্কজ নাথের ইশারায় তাঁরা নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বলে দাবি আওয়ামী লীগের নেতাদের।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৫ জুন হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের ৮ ইউপিতে ভোট। এ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নেই। এতে একচেটিয়া আওয়ামী লীগের নেতারা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। অবশ্য প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। অপর দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও বিভিন্ন ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী দিয়েছে।

মেহেন্দীগঞ্জ রিটার্নিং কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম গতকাল শনিবার বলেন, ‘এ উপজেলার ৬টি ইউপির মধ্যে জয়নগরে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৮, আন্ধারমানিকে ৩, গোবিন্দপুরে ৩, লতা ইউপিতে ৪, বিদ্যানন্দপুরে ২, চর একচেটিয়া ইউপিতে ৩ জন করে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।’

হিজলা রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘হিজলা উপজেলার হিজলা-গৌরবদী ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী চারজন ও ধুলখোলা ইউপিতে তিনজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।’

জানা গেছে, মেহেন্দীগঞ্জে ছয় ইউপির মধ্যে জয়নগরে সর্বোচ্চ আটজন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী হলেন সেকেন্দার আলী আবু জাফর। তবে সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মনির হোসেন হাওলাদারও প্রার্থী হয়েছেন।

গোবিন্দপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আমিরুল ইসলাম বেলাল মোল্লা। এই ইউপির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মহিউদ্দিন তালুকদার মনোনয়নপত্র তুলেছেন। স্থানীয় সংসদ পঙ্কজ নাথের অনুসারী মহিউদ্দিন। তিনি জানান, নৌকার প্রার্থী বেলাল হত্যা মামলার আসামি। এই ইউপির জনগণ তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এলাকাবাসী আমাকে আবারও চেয়ারম্যান দেখতে চান।’

জবাবে নৌকার প্রার্থী আমিরুল ইসলাম বেলাল মোল্লা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে, তা ষড়যন্ত্রমূলক। সাংসদ পঙ্কজ নাথের নির্দেশে তাঁর লোকজন ওই মামলা করেন।’

বিদ্যানন্দপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জব্বার খান। এ ইউনিয়নেও সাংসদ পঙ্কজের অনুসারী সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মিয়া। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ভোটে লড়তে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

আন্ধারমানিক ইউনিয়নে নৌকার মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলাউদ্দিন কবিরাজ। এ ইউনিয়নের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান সাংসদের অনুসারী কাজী শহিদুল ইসলাম। তিনিও এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি।

কাজীর হাট থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান মিয়া বলেন, ‘যাঁরা গত নির্বাচনে বিদ্রোহী ছিলেন, এবারও বিদ্রোহী তাঁরা। তাঁরা মনোনয়ন না পেয়ে সাংসদ পঙ্কজের সমর্থনে প্রার্থী হচ্ছেন।’

এদিকে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী জসীম উদ্দীন। তবে গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থী ও দলের বহিষ্কৃত ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক জামাল ঢালী এবারও ভোটের মাঠে থাকতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই-ভাগনের খুনিদের ভোটের মাধ্যমে পরাজিত করে প্রতিশোধ নিতে এবারও প্রার্থী হয়েছি।’

বরিশাল-৪ আসনে সাংসদ পঙ্কজ নাথবিরোধী গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনুসুর আহমেদ। তিনি জানান, নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নৌকার মনোনীত প্রার্থী মেহেন্দীগঞ্জের ছয়জন অ্যাডভোকেট মুনসুর আহমেদ ও হিজলার দুজন সাংসদের অনুসারী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত