দুশ্চিন্তায় নিম্ন আয়ের মানুষ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২২, ০৭: ১৮
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ১১: ৪৭

ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। কিন্তু আয় বাড়ছে না । তাই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। লাগামহীনভাবে পণ্যের দাম বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ায় সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় দিনমজুর শ্রেণির মানুষ।

জেলা বণিক সমিতির সভাপতি বলেছেন, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য বড় বড় কোম্পানিগুলো দায়ী। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে সরকারকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা শাখার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছেন। কেউ যদি সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম রাখে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নেত্রকোনা শহরের দিনমজুর আক্তার, খোকন, ভ্যানচালক মাসুম ও রিকশা চালক বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের বেঁচে থাকাই কঠিন। কেননা প্রতিদিনই সব কিছুর দাম বাড়ছে। সে অনুযায়ী তাদের আয় বাড়ছে না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুবই কষ্টে আছেন বলে তাঁরা জানান। নেত্রকোনা শহরের ছোটবাজার ও বড়বাজার এলাকার কয়েকটি দোকান ঘুরে জানা গেছে, প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল ১৮০ টাকায় প্রতিলিটার বিক্রি হচ্ছে। সরিষার তেল ২২০ টাকায়। যা গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি। পোলট্রি মুরগির ডিম হালি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৩৫ টাকায়। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে ৪০-৪৫ টাকা ছিল। শুধু সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, ডিমই নয় অন্যান্য পণ্যের দামও আকাশছোঁয়া।

শহরের চকপাড়া এলাকার বাসিন্দা আক্তার হোসেন। কাজ করেন দিনমজুরের। তাঁর সঙ্গে কথা হয় শহরের তেরী বাজার মোড়ে। তিনি বলেন, প্রতিদিন কাজ পান না। কাজ পেলে ৪০০ টাকা পান। কিন্তু পাঁচ মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাসা ভাড়া দিয়ে তার দিন কোনোভাবেই চলে না। সেই সঙ্গে ভোজ্যতেলে দাম বৃদ্ধির কারণে তিনি দুই চোখে অন্ধকার দেখছেন।

শহরের সাতপাই এলাকার বাসিন্দা মাসুম মিয়া। স্ত্রী ও চার ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। তিনি বলেন, এক ছেলেকে কাজে দিয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন ক্লাসে পড়াশোনা করে। ভ্যান চালিয়ে দিনে তিনি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কামাই করলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দুচোখে অন্ধকার দেখছেন মাসুম মিয়া। তিনি আরও বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে মরণ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

রিকশা চালক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে তিনি ৬০০ টাকা রোজগার করেন। রিকশার মালিককে দিতে হয় ২৩০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে তাঁর কোনো রকম চলতে হয়। তাঁর সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে কিনা জানতে চাইলে বিল্লাল বলেন, ‘পড়াশোনা করব কি? অভাবে দুই বেলা তাদের ভালো করে খাবারেই দিতে পারি না। এখনতো যেভাবে দ্রব্যের দাম বাড়ছে। তাতে করে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের এসব মানুষের আবেদন সরকার যেন গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রব্যমূল্যের দাম কমায়।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলা চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আব্দুল ওহেদ বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বড় বড় কোম্পানি দায়ী। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। মন্ত্রী বললেন, দাম কমাতে হবে। এমনি তেলের দাম আরও লিটার প্রতি ১০ টাকা বাড়ল। এসব কে করছে তা দেশের মানুষ জানে। আমি বললে তো আর কাজ হবে না। এজন্য সরকারকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।’

নেত্রকোনা জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। কেউ যদি সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম রাখে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত