চাকরি করেও পড়াশোনা সম্ভব

মারুফ হাসান প্রেমণ
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫: ০৫
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮: ২৮

অস্ট্রেলিয়ায় কমার্শিয়াল কুকারিজ বিষয়ে পড়াশোনা করছেন বাংলাদেশের মারুফ হাসান প্রেমণ। তিনি উৎসাহ দিয়েছেন, মধ্যম মানের ছাত্র হলেও এমন উন্নত দেশে পড়াশোনা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে যে পথে হাঁটলে পথটা সহজ হতে পারে বলে মনে করেন তাঁর অভিজ্ঞতায়—

লক্ষ্য স্থির

আমার জীবনে মূল লক্ষ্যই ছিল সিনেমা নির্মাণ করা। পরিবার থেকে চাপ ছিল উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর। সে ক্ষেত্রে ফিল্মের ওপর কোর্স করারই ইচ্ছে ছিল। আমার বোন-দুলাভাই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। তাঁরা বললেন, আগে তুমি আসো, এখানকার পরিবেশ দেখে সিদ্ধান্ত নাও—কোন বিষয়ে পড়বে। আমি প্রথমে টুরিস্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় আসি। এসে ঘোরাঘুরি করি। সেটা ২০১৭ সালের কথা। এরপর বাংলাদেশে গিয়ে মিনার, বাপ্পা মজুমদারের মতো খ্যাতিমান মিউজিশিয়ানদের মিউজিক ভিডিও বানাই। বিজ্ঞাপনও বানিয়েছিলাম। মনে হলো, আমার আরও কিছু শিখতে হবে। ফিল্ম স্কুলে পড়াটা জরুরি। অস্ট্রেলিয়ায় আসার প্রসেসিং শুরু করি।

মধ্যম মানের ছাত্র হলেও

ফিল্ম স্কুলে অ্যাডমিশন নিলে ভিসা পাওয়াটা সহজ নয়। আমার জন্য সহজ মনে হয়েছে কমার্শিয়াল কুকারিজ। অস্ট্রেলিয়ায় আইটিতে পড়তেই বেশি শিক্ষার্থী বিদেশ থেকে আসেন। আমার কাছে বিষয়টা কঠিন মনে হয়েছে। আমি মধ্যম মানের ছাত্র। মধ্যম মানের ছাত্র হলে বাইরে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখবেন না, ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়। সে ক্ষেত্রে কমার্শিয়াল কুকারিজ আমার জন্য অনেকটা সহজ মনে হয়েছে। আর ফিল্ম মেকিংয়ের পর যদি কিছু ভালোলাগা থাকে, সেটা হলো রান্না। তখন শেফের কোর্সে আসি।

কোথায় অ্যাডমিশন নিলাম

সিডনির অ্যাপেক্স ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন-এ ভর্তি হলাম। যাঁরা শেফের কোর্স করতে চান, তাঁদের জন্য বেশ ভালো। অস্ট্রেলিয়া বেশ নামকরাও। আন্তর্জাতিক অনেক শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করেন।

কী যোগ্যতা দেখেছে

আইইএলটিএসে ৫.৫ স্কোর দিয়ে আবেদন করা সম্ভব। ডিপ্লোমা ও অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা শেষ করতে দুই বছর সময় লাগে।

পড়াশোনার পাশাপাশি উপার্জন

অস্ট্রেলিয়া সরকার এই করোনার সময় যে সুযোগটা দিয়েছে, আগে ২০ ঘণ্টা শিক্ষার্থীরা কাজ করতে পারতেন, এখন ৪০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। কিন্তু ৪০ ঘণ্টা কাজ করে আইটিতে ভালো ফল করা মধ্যম মানের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাবে। আইটিতে পড়াশোনায় প্রচুর সময় দিতে হয়। আমার বর্তমানে তিন মাসে ২ হাজার ৩০০ ডলার টিউশন ফি দিতে হয়। তুলনামূলকভাবে এটা কমই বলা যায়। এমনও আছে, তিন মাসে ১০ হাজার ডলার টিউশন ফি দিতে হয়। আমি যে টিউশন ফি দিচ্ছি, এটা কিন্তু খুব সহজেই এখানে উপার্জন করা সম্ভব।

স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য

অস্ট্রেলিয়ায় পিআর পাওয়ার জন্য দুটি বিষয় সবাই প্রস্তাব করে। একটা আইটি, আরেকটা কমার্শিয়াল কুকারিজ। অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা শেষে আপনাকে দুই বছরের একটা ভিসা দেবে, যেটাকে বলে টিআর। ফুল টাইম কাজ করতে পারবেন। এই সময় সরকার দেখবে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হওয়ার জন্য আপনি কোন যোগ্যতা অর্জন করেছেন, স্কিল অ্যাসেসমেন্ট যাকে বলে। নিজেকে প্রমাণের জন্য কোনো একটা ভালো রেস্টুরেন্টে কাজ করতে হবে। তখন সরকার পিআরের প্রসেস করে দেবে। এ ক্ষেত্রে আইইএলটিএসের স্কোর করতে হবে ৬। অস্ট্রেলিয়ায় অনেক দিন থাকলে যেটা কঠিন বলে মনে হয় না।

চাকরি করে পড়াশোনা সম্ভব

চাকরি করে পড়াশোনা সম্ভব। তবে খুবই মেপে চলতে হবে। চাকরির জন্য রেফারেন্সের দরকার। পিআর পাওয়ার আগপর্যন্ত একটু কষ্ট হবে। এখানে বোনের কাছে থাকি। আমার যেটা মনে হয়েছে, স্টুডেন্টরা জবলেস অবস্থায় থাকা বেশ কঠিন। সে ক্ষেত্রে ফ্যামিলির অনেক টাকা থাকতে হবে। তা ছাড়া, এখানে খুবই রেয়ার—কেউ স্টুডেন্ট ভিসায় এসে কাজ করছেন না। সারভাইভ করার জন্য সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করতে হবে। আমি বর্তমানে মেক্সিকান রেস্টুরেন্ট ‘গুজম্যান ওয়াই গোমেজ’-এ শেফ হিসেবে কাজ করছি। এটা অস্ট্রেলিয়ায় এমনকি বিশ্বে অনেক জনপ্রিয় একটি রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টে কাজ করেই আমি টিউশন ফি দিচ্ছি। টিউশন ফি দেওয়ার পর পকেট মানি থাকছে। আমার যেটা সাহায্য হচ্ছে—পরিবারের সঙ্গে থাকছি। তবে পরিবার ছাড়া থাকলেও হিসাব করে থাকলে টিকে থাকা সম্ভব।

লেখক: মারুফ হাসান প্রেমণ

শিক্ষার্থী, সিডনির অ্যাপেক্স ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন, সিডনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত