বিদ্যালয়ে ‘ঘরসংসার’ প্রধান শিক্ষকের

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০: ০২

কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০১০ সালে যোগ দেন প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন। যোগদানের পর থেকেই তিনি স্কুলটিকে নিজের রাজত্বে পরিণত করেছেন। বিজ্ঞানাগারে স্বামীর বিশ্রামের জন্য বিছানা পেতে তৈরি করেছেন বিশ্রামাগার। বানিয়ে নিয়েছেন রান্নাঘরও। স্কুল যেন তাঁদের দ্বিতীয় সংসার।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয়তলায় বিজ্ঞান ল্যাবের ভেতরে ব্যবহারিক উপকরণ রাখার আলমারি দিয়ে পার্টিশন বানিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশ্রামাগার। সেখানে বিছানা পেতে পাশে রাখা হয়েছে টেলিভিশন ও আলনা। রাখা হয়েছে স্ট্যান্ড ফ্যান। শিক্ষক মিলনায়তনের পাশে তৈরি করা হয়েছে রান্নাঘর। এতে ফ্রিজ, গ্যাসের চুলা, রাইসকুকার ও শোকেসে রাখা আছে প্লেট-বাটি-গ্লাস।

স্কুলের সহকারী শিক্ষক ও আয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক রুখসানার পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জে। স্বামীর বাড়ি লালমনিরহাট সদরে। তিনি লালমনিরহাট থেকে প্রাইভেট কারে স্বামী রেজাউল করিমসহ নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করতেন। স্কুল চলাকালে তাঁর স্বামী দিনভর এখানে থাকতেন এবং বিশ্রামাগারে অবস্থান করতেন। এই দম্পতির জন্য স্কুলে তৈরি করা রান্নাঘরে নিয়মিত দুপুরের খাবার রান্না করা হতো। এ জন্য পিয়ন বাজারের কাজ এবং আয়া রান্না করতেন। শুধু দুপুরের রান্নাই নয়, বাড়িতে রাতের রান্নার উপকরণ স্কুলের রন্ধনশালা থেকেই প্রস্তুত করে নিয়ে যেতেন প্রধান শিক্ষক।

সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক রুখসানার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে।

বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দুই দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। গত বৃহস্পতিবারও দিনভর আন্দোলন করেছে তারা। ওই দিন বিকেলে স্কুলের প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আঁচ করতে পেরে গা ঢাকা দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক রুখসানা। গত দুই দিন তিনি স্কুলে অনুপস্থিত।

স্কুলের সহকারী শিক্ষকেরা বলছেন, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্কুলে একর কম ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন প্রধান শিক্ষক। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ায় তিনি সব সময় শিক্ষকদের হুমকির ওপর রাখতেন। বদলির ভয় দেখাতেন। ফলে ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না। তিনি গত ১৫ বছরে স্কুল তহবিলের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ভর্তি-বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেছেন জেলার কিছু সাংবাদিক নেতা ও রাজনীতিবিদ। ভয়ে সাধারণ শিক্ষকেরা কিছু বলতে পারতেন না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর শিক্ষকেরা সাহস ফিরে পেয়েছেন।

স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক (প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত) তুষার কুমার রক্ষিত বলেন, ‘স্কুলের ভেতরে স্বামীর জন্য বিশ্রামাগার আর রন্ধনশালা তৈরি বিধিসম্মত নয়। কিন্তু আমাদের সবার মুখ এত দিন বন্ধ ছিল। আমাদের কিছু বলার ক্ষমতা ছিল না। কথা বললেই বদলির হুমকি, মর্নিং থেকে দিবা, দিবা থেকে মর্নিং শিফটে দেওয়াসহ নানা ধরনের হয়রানি-হুমকি দিয়ে দমিয়ে রেখেছিলেন। এখন আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসক ও উপপরিচালককে লিখিত আকারে জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন বলেন, ‘বিজ্ঞানাগারে বিশ্রামাগার তৈরি হয়তো বিধিসম্মত হয়নি; কিন্তু সেখানে শুধু আমার স্বামী নন, আমিও বিশ্রাম নিতাম, নামাজ পড়তাম। নিরাপত্তার জন্য স্বামী আমার সঙ্গে আসতেন। আমি প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে ৫০০ টাকার বাজার করতাম। কী রান্না হতো তাও জানতাম না। শিক্ষক ও সব পিয়নকে খেতে দিতাম। এখন সবাই আমার বিপক্ষে।’ 
দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ চাইলে আমি সব হিসাব দিতে প্রস্তুত। অভিযোগের সত্যতা পেলে তাঁরা যে ব্যবস্থা নেবেন তা মেনে নেব।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুলিশের ভিন্ন বক্তব্যের পরও সালমা হত্যায় নিজ ভাষ্য়ে অনড় র‍্যাব

ফারুকীরা কীভাবে এই উপদেষ্টা পরিষদে আসে: সারজিস আলম

বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জন্য ডাক্তারের তদবিরের ঘোষণা

এই সরকারের সংবিধান সংশোধনের সুযোগ কি আছে, অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রশ্ন

বাংলাদেশ সিরিজের আগে ধাক্কা খেয়েই চলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত