মুখে সুর, পেটে ক্ষুধা

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ০৯: ০১
Thumbnail image

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত সাড়ে ১০টা পেরিয়ে ১১টার দিকে। মো. ইব্রাহীম কখনো বাঁশিতে সুর তুলছিলেন আইয়ুব বাচ্চুর গান। কখনো বা তাঁর বাঁশির সুরে স্বয়ং ‘হাজির’ লতা মঙ্গেশকর–রুনা লায়লার মতো উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পীরা। ক্লান্তিহীনভাবেই চলছিল বাঁশি বাজানো। আর হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো সেই সুরের জাদুতে মুগ্ধ মানুষ তাঁর চারপাশে ভিড় করতে থাকেন একে একে। এ দৃশ্যের অবশ্য প্রতিদিনই দেখা মিলবে চট্টগ্রামের জামালখানের লিচু বাগান এলাকায় গেলে।

সংসার চালাতে একসময় রিকশা চালাতেন মো. ইব্রাহীম। কাজের সময়টুকু ছাড়া তিনি তখন ডুবে থাকতেন তাঁর নেশায়। নেশা বলতে একটাই–বাঁশি বাজানো। এখন অবশ্য শারীরিক কারণে রিকশা চালাতে পারেন না। নেশা তাই হয়ে উঠেছে এখন পেশা। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই চলে আসেন লিচু বাগানের পাশের ফুটপাতে। সেখানে প্রায় অন্ধকার পথে মাদুর বিছিয়ে চলে তাঁর বাঁশি বাজানো।

কীভাবে বাঁশির প্রেমে পড়লেন এমন প্রশ্নে ইব্রাহীম ফিরে গেলেন দুই যুগ আগে। হাটহাজারীর নিজের গ্রামে তখন বাঁশি বাজাতে আসতেন এক ব্যক্তি। তাঁর সেই বাঁশির সুর মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনত বছর দশের ইব্রাহীম। সেই যে সুরের মায়ায় পড়া। তারপর এক দিন শখের বশে বাঁশের কঞ্চি কেটে নিজেই বানালেন বাঁশি। বাঁশি বাজানো সেই যে শুরু। এরপর গত ২০ বছরে এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি বাঁশিতে সুর তোলার রেওয়াজ। এখানে ওখানে শখের বসে বাজাতেন বাঁশি। লোকজন জড়ো হয়ে শুনত। তাতেই আনন্দে যেন স্বর্গ ছুঁয়ে ফেলতেন ইব্রাহীম।

তবে এখন সেই নেশার আয়ে চলতে হচ্ছে ইব্রাহীমকে। বলেন, ‘ভারী কাজ করতে পারি না। রিকশা চালাতাম, সেটি তাই এখন বন্ধ। কখনো চাইনি বাঁশি শুনিয়ে আয় করব। কিন্তু এখন বাধ্য হয়ে বাঁশির সুর শুনিয়েই মানুষের থেকে টাকা নিতে হচ্ছে। কী করব, বাড়িতে বাবা-মা আছেন। স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে আছে। নিজে না খেয়ে থাকতে পারব, তাঁদের না খাইয়ে কীভাবে রাখি।’

কারও থেকে অবশ্য টাকা খোঁজেন না। একটি লিফলেটে লিখে রেখেছেন ‘পেটের দায়ে বাঁশি শোনাই, আপনারা সাহায্যের হাত প্রসারিত করুন।’ সবাই বাঁশির সুর শুনতে সামনে রাখা পোঁটলায় রেখে যান, ১০-২০ টাকা করে।’ ইব্রাহীম বলেন, ‘প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। সেটি নিয়েই চলে সংসার।’

হতাশার গল্প শোনাতে শোনাতে আবার বাঁশি বাজানোয় মগ্ন হলেন ইব্রাহীম। একটু থেমে বলেন, ‘নিজেই চর্চা করে করে রপ্ত করেছি বাঁশির সুর। বাংলা, হিন্দি আর উর্দু ভাষার প্রায় ৫০০ গানের সুর বাঁশিতে তুলতে পারি। সারা জীবন এই বাঁশি নিয়েই বাঁচতে চাই। এটুকুই শুধু চাওয়া।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত