সরলা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২২, ১১: ২২
Thumbnail image

বাউল মানে তো বাউল। ঘরে কি আর মন টেকে। মন উদাস হলেই চলে যান গান গাইতে। গানই যখন ধ্যান-জ্ঞান, তখন স্ত্রী পড়ে থাকেন দূরে।

শাহ আবদুল করিমের জীবনেও ব্যাপারটি ছিল সে রকম। গান গাওয়ার জন্য তিনি চলে যেতেন এদিক-ওদিক। গানের সঙ্গেই ছিল তাঁর সখ্য। তবে সরলা থাকতেন মনের কোণে।

স্ত্রীর নাম নিজেই রেখেছিলেন সরলা। তাঁর ‘কালনীর ঢেউ’ বইয়ে সরলার বর্ণনা ছিল এভাবে, ‘সরল, তুমি শান্ত, তুমি নুরের পুতুল। সরল জানিয়া আমি নাম রাখি সরলা।’

সরলা যখন বেঁচে ছিলেন, তখন বাউল কি বুঝেছিলেন, তাঁকে কতটা অধিকার করে রেখেছেন এই সহজ-সরল মেয়েটি?

বিয়ের পর বাংলা ১৩৯৭ সনে বাউলের ঘরে জন্ম নিয়েছিল একমাত্র সন্তান শাহ নূরজালাল। সেই নূরজালাল তখন পড়াশোনা করছে সিলেটে। সরলা তখন উজানধলায়। বাউল গেছেন সিলেটে গান করতে। সে রকম এক রাতে বাউলের উজানধলের বাড়িতে মৃত্যুবরণ করলেন সরলা। দুদিন পর খবর পেলেন বাউল। একবুক শূন্যতা নিয়ে উজানধলে ছুটে এলেন তিনি। এত দিন গানই ছিল তাঁর সুখ, আনন্দ আর সংসার। সরলা ছাড়া এগুলোর যে কোনো মানে নেই, সেটা বুঝতে পারলেন তিনি। সারা জীবন তিনি সরলাকে সময় দিতে পারেননি। তাই গানে গানে তাঁকে অমর করে রাখলেন। ‘কেমনে ভুলিব আমি বাঁচি না তারে ছাড়া, আমি ফুল বন্ধু ফুলের ভ্রমরা...’, ‘সখী কুঞ্জ সাজাও গো’ গানগুলো আসলে সরলার জন্য।

এক সাক্ষাৎকারে বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম তো বলেছিলেন, ‘সরলা না থাকলে আমি বাউল আবদুল করিম হতে পারতাম না। সরলা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আমার বাউলজীবনের মুর্শিদ জ্ঞান সরলা।’

সূত্র: গোলাম রব্বানী, শাহ আব্দুল করিম স্মারকগ্রন্থ, পৃষ্ঠা ৮৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত