তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, দুবাই থেকে ফিরে
সংসারের অভাব দূর করতে সাত মাস আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পাড়ি জমিয়েছিল ১৬-১৭ বছরের কিশোরীটি। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। কাঙ্ক্ষিত বেতন তো দূরের কথা, শুরু হয় একধরনের বন্দীজীবন। তার পাসপোর্টসহ কাগজপত্র হাতিয়ে নেয় চক্রটি। প্রথমে শিখতে দেওয়া হলো নাচ। রাজি না হলে চালানো হয় শারীরিক-মানসিক নির্যাতন।
সম্প্রতি দুবাইয়ের মতিনা এলাকায় এক নৈশ ক্লাবে কথা হয় ওই কিশোরীর সঙ্গে। কিশোরীটি বলে, ‘ঢাকার খিলগাঁও নন্দীপাড়া এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতাম। তিন বোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। বাবা মারা যাওয়ায় সংসার নিয়ে মা হিমশিম খাচ্ছিল। এলাকার এক লোক আমাকে দুবাই পাঠানোর প্রস্তাব দেয় মায়ের কাছে। পাসপোর্ট-ভিসা সব করে দেয় লোকটি। মায়ের হাতে অগ্রিম ৭০ হাজার টাকাও দেয়। লোকটি জানায়, একটি দোকানে বিক্রয় কর্মীর চাকরি, শুরুতে প্রতি মাসে বেতন হবে আড়াই হাজার দিরহাম (প্রায় ৭৫ হাজার টাকা)। থাকা-খাওয়া কোম্পানির। কিন্তু এসে দেখি অন্য জগৎ।’
কিশোরীটি আরও বলে, ‘দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পর আমাকে একজন রিসিভ করে। গাড়িতে তুলে আমার সব কাগজপত্র নিয়ে নেয়। এরপর একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি আরও অনেক মেয়ে। একপর্যায়ে আমাকে নাচ শিখতে বলে। প্রথমে রাজি ছিলাম না, কান্নাকাটি করেছি। পাশের মেয়েরা বুঝিয়ে বলল, সবাই আমার মতো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। পরে সব মেনে নিতে হয়েছে। তাদের কথায় চলেও মাসে ৩০ হাজার টাকার বেশি দেশে পাঠাতে পারি না। সব কথা বাড়িতে বলিও না।’
চাকরির কথা বলে ভ্রমণ ভিসায় নারী পাচার
জানা যায়, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে গত কয়েক বছরে কয়েক হাজার কিশোরী-তরুণী পাচার হয়েছে দুবাইয়ে। একটি শক্তিশালী চক্র এই পাচারে জড়িত। অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস এমন এলাকাকে তারা টার্গেট করে। পাচারকারীচক্রের দালালেরা দরিদ্র পরিবারের কমবয়সী নারীদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে দুবাইয়ে ভালো চাকরির প্রস্তাব দেয়। পাসপোর্ট, ভিসা নিজ খরচে করে দিয়ে নগদ টাকাও ধরিয়ে দেয় অভিভাবকদের হাতে। পরে দালালেরা ভ্রমণ ভিসায় মেয়েদের দুবাই পাঠায়। এর সঙ্গে বিমানবন্দরে কর্মরত কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারও যোগসাজশ আছে।
সিআইডির বিশেষ সুপার মো. নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এ ধরনের অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছি। বিমানবন্দরে পুলিশের টিম আছে, সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও রোধ করা যাচ্ছে না। কারণ ভিকটিম না হলে কেউ কিছু বলে না।’
অপরাধ-বিশৃঙ্খলায় ভাবমূর্তির সংকট
একাধিক ভুক্তভোগী ছাড়াও বানিয়াস রোডের দোকানি মইনুল ইসলামসহ কয়েকজন প্রবাসী জানান, মেয়েদের দুবাই নেওয়ার পর নির্ধারিত কক্ষে আটকে রেখে নাচ শেখানো হয়। কেউ রাজি না হলে নির্যাতন চালানো হয়। অনেকে চাইলেও পালাতে পারেনি। কারণ মেয়েদের পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আটকে রাখে চক্রটি। এই চক্রের হোতা দুবাইয়ে বাংলাদেশি নৈশ ক্লাব আর ‘সাদা বারের’ (ড্যান্স ক্লাব) মালিকেরা। দুবাই শহরে এমন অন্তত ২০টি গ্যাং আছে; যারা বাংলাদেশ থেকে মেয়ে নিয়ে ক্লাবে ব্যবহার করে। ক্লাবগুলো দিন দিন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে। ক্লাব ঘিরে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। প্রবাসী যুবকেরা রাস্তায় মারামারি করছে। এতে প্রবাসীরা ভাবমূর্তির সংকটে পড়ছেন।
দুবাইয়ে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে (দুবাই) ১০ লাখের ওপরে বৈধ প্রবাসীর কথা জানা থাকলেও ভিজিট ভিসায় এসে অবস্থান করেছে এমন সংখ্যাও ২ লাখের কম না। সেখানে মেয়েরাও রয়েছে। ক্লাবকেন্দ্রিক মেয়েদের ব্যবহারের অভিযোগ আছে। সবচেয়ে বেশি মুশকিল হলো এসব নিয়ে প্রায়ই মারামারিও হচ্ছে। তা নিয়ে আমরা খুবই বিব্রতকর অবস্থায় আছি।’
দেশের অপরাধীদের জমজমাট চক্র দুবাইয়ে
দুবাইয়ের দেরা এলাকায় ফলের ব্যবসা করেন প্রবাসী জামাল উদ্দিন। তিনিসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রবাসী জানান, বাংলাদেশ থেকে অনেক অপরাধী দুবাইয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তারা সেখানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে অর্থ উপার্জনও করছে। এ রকম উপার্জনের প্রধান মাধ্যম নৈশ ক্লাব। চাকরির লোভ দেখিয়ে তারা দেশ থেকে কমবয়সী নারীদের নিয়ে এসব নৈশ ক্লাবে ব্যবহার করছে। কোনোটির নাম দেওয়া হয়েছে সাদা বার। দুবাইয়ের দেরা, মতিনা, বানিয়াস এলাকাসহ পুরো শহরে এমন ক্লাব আছে কমপক্ষে ২০টি।
জানা যায়, প্রবাসী মহিউদ্দিন ১৭ কিশোরীকে নিয়ে দেরায় ফরচুন হোটেল খুলেছেন ‘বাংলাবার’। তিনি দেরা প্লাম হোটেলে ১৫-১৬ জন মেয়েকে রেখে অংশীদার সজলকে দিয়ে চালাচ্ছেন ‘নাইট ক্লাব’। নাজিম, জিয়া, হারুন ও রিপনের তত্ত্বাবধানে চলছে মার্কো পোলো হোটেলে আরেকটি ‘সাইলেন বার’। সেখানে বাংলাদেশি কিশোরী ৪০ জন। ঢাকা চলচিত্রের ড্যান্স মাস্টার হিসেবে পরিচিত সজীবের আছে দুটি নৈশ ক্লাব ‘সাফরান বুটিক’ ও ‘বাংলা ডান্স বার’-এ কিশোরীর সংখ্যা ৭০।
মিনা ও ফুজায়ইরা হোটেলে সজীবের আরও দুটি ড্যান্স বার আছে। বানিয়াস এলাকায় আবদুল মান্নানের ‘সান অ্যান্ড সান’ ও ‘রামী বাংলাবার’ ড্যান্স ক্লাবে আছে ২০ কিশোরী। বানিয়াসে পনেসিয়া হোটেলের আড়ালে ছয় বছর ধরে ড্যান্স ক্লাব চালাচ্ছেন রাসেল। তাঁর ক্লাবে মেয়ের সংখ্যা ১৫। পরিচয় গোপন রেখে কথা হয় রাসেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মেয়েদের আমরা সরাসরি পাই না, বিভিন্ন মাধ্যমে আসে। আসার পর তো কেউ কোনো অভিযোগ করে না। দেশেও যেতে চায় না।’
জানা যায়, সুমির ‘সাইলেন বারে’ ২৫ জন কিশোরী আছে। কামরুলের মিডলিস্ট হোটেল ও গোল্ডেন টিউলিপে আছে ৩২ কিশোরী। গালফ-ইন ফরচুন প্লাজায় ‘মারকোপলো’ নৈশ ক্লাবটি ফটিকছড়ির নাজিমের। তাতে মেয়ে আছে ১৬-১৭ জন। নাজিমের বড় ভাই আজম কয়েক বছর আগে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নারী পাচারের অভিযোগে। নাজিমের ব্যবসায়িক অংশীদার চাঁদপুরের জিয়ার সিটি স্টারে একটি বার আছে। তাতে মেয়ের সংখ্যা ২০। জাজ মাল্টিমিডিয়ার পরিচালক দাবিদার অনিকের মুতিনা এলাকায় আছে একটি বড় নৈশ ক্লাব। সেলিমের বেন্টা হোটেল ও আজমান এলাকায় ড্যান্স ক্লাব ‘হাতা রিসোর্ট’ ও ‘বৈশাখী’। এ ছাড়া বাস-আল-খাইমা এলাকায় মুর্শেদের এসএইচ হোটেলে এবং কাউয়ুমের জুলফার হোটেলে আছে ড্যান্স ক্লাব। ইমরামের ক্যালিফোর্নিয়া হোটেলে মেয়ের সংখ্যা ২০। ফিরোজের দোরুস হোটেলে আছে ৩০ কিশোরী। ফেনীর সাইফুলের মালিকানাধীন ক্লারিজ হোটেলে মেয়ে আছে ১৫ জন। ইমরানের বেন্টা হোটেল আছে ৪০ কিশোরী।
পাসপোর্টে দেখানো হয় প্রাপ্তবয়স্ক
একাধিক সূত্রে জানা যায়, ওসব ক্লাব থেকে মাঝেমধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি মেয়েদের উদ্ধার করে থাকে দুবাই পুলিশ। পরে দেখা যায়, তাদের পাসপোর্টে ভুল তথ্য দিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক দেখানো হয়। তরুণী সংগ্রহ, পাসপোর্ট করানো, ভিসা সংগ্রহ, বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পার করানো এবং দুবাইয়ে ক্লাবে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সবখানে পাচারকারী চক্রের লোকজন আছে। কিশোরীদের উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ফাঁদে ফেলে দালালেরা। বিদেশে যেতে রাজি হওয়া পর কিশোরীদের ছবি পাঠানো হয় ক্লাব পরিচালনাকারীদের কাছে। এরপর ভ্রমণ ভিসায় দুবাই নেওয়া হয়। আবার ঢাকার যেসব এলাকায় নিম্ন আয়ের লোকজন থাকে, সেখানে নাচের প্রতিষ্ঠান খুলেও মেয়েদের দুবাই পাঠানো হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নাচের মিথ্যা তথ্য দিয়ে।
বাংলাদেশ ট্র্যাভেল অ্যান্ড টুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের (ইইউ আই) সাধারণ সম্পাদক এইচ এম শওকত আলী মোল্লা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি সংঘবদ্ধচক্র বাংলাদেশ থেকে মেয়ে পাচার করে দুবাই আনছে। তাদের বিভিন্ন অনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে।’
সংসারের অভাব দূর করতে সাত মাস আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পাড়ি জমিয়েছিল ১৬-১৭ বছরের কিশোরীটি। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। কাঙ্ক্ষিত বেতন তো দূরের কথা, শুরু হয় একধরনের বন্দীজীবন। তার পাসপোর্টসহ কাগজপত্র হাতিয়ে নেয় চক্রটি। প্রথমে শিখতে দেওয়া হলো নাচ। রাজি না হলে চালানো হয় শারীরিক-মানসিক নির্যাতন।
সম্প্রতি দুবাইয়ের মতিনা এলাকায় এক নৈশ ক্লাবে কথা হয় ওই কিশোরীর সঙ্গে। কিশোরীটি বলে, ‘ঢাকার খিলগাঁও নন্দীপাড়া এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতাম। তিন বোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। বাবা মারা যাওয়ায় সংসার নিয়ে মা হিমশিম খাচ্ছিল। এলাকার এক লোক আমাকে দুবাই পাঠানোর প্রস্তাব দেয় মায়ের কাছে। পাসপোর্ট-ভিসা সব করে দেয় লোকটি। মায়ের হাতে অগ্রিম ৭০ হাজার টাকাও দেয়। লোকটি জানায়, একটি দোকানে বিক্রয় কর্মীর চাকরি, শুরুতে প্রতি মাসে বেতন হবে আড়াই হাজার দিরহাম (প্রায় ৭৫ হাজার টাকা)। থাকা-খাওয়া কোম্পানির। কিন্তু এসে দেখি অন্য জগৎ।’
কিশোরীটি আরও বলে, ‘দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পর আমাকে একজন রিসিভ করে। গাড়িতে তুলে আমার সব কাগজপত্র নিয়ে নেয়। এরপর একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি আরও অনেক মেয়ে। একপর্যায়ে আমাকে নাচ শিখতে বলে। প্রথমে রাজি ছিলাম না, কান্নাকাটি করেছি। পাশের মেয়েরা বুঝিয়ে বলল, সবাই আমার মতো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। পরে সব মেনে নিতে হয়েছে। তাদের কথায় চলেও মাসে ৩০ হাজার টাকার বেশি দেশে পাঠাতে পারি না। সব কথা বাড়িতে বলিও না।’
চাকরির কথা বলে ভ্রমণ ভিসায় নারী পাচার
জানা যায়, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে গত কয়েক বছরে কয়েক হাজার কিশোরী-তরুণী পাচার হয়েছে দুবাইয়ে। একটি শক্তিশালী চক্র এই পাচারে জড়িত। অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস এমন এলাকাকে তারা টার্গেট করে। পাচারকারীচক্রের দালালেরা দরিদ্র পরিবারের কমবয়সী নারীদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে দুবাইয়ে ভালো চাকরির প্রস্তাব দেয়। পাসপোর্ট, ভিসা নিজ খরচে করে দিয়ে নগদ টাকাও ধরিয়ে দেয় অভিভাবকদের হাতে। পরে দালালেরা ভ্রমণ ভিসায় মেয়েদের দুবাই পাঠায়। এর সঙ্গে বিমানবন্দরে কর্মরত কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারও যোগসাজশ আছে।
সিআইডির বিশেষ সুপার মো. নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এ ধরনের অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছি। বিমানবন্দরে পুলিশের টিম আছে, সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও রোধ করা যাচ্ছে না। কারণ ভিকটিম না হলে কেউ কিছু বলে না।’
অপরাধ-বিশৃঙ্খলায় ভাবমূর্তির সংকট
একাধিক ভুক্তভোগী ছাড়াও বানিয়াস রোডের দোকানি মইনুল ইসলামসহ কয়েকজন প্রবাসী জানান, মেয়েদের দুবাই নেওয়ার পর নির্ধারিত কক্ষে আটকে রেখে নাচ শেখানো হয়। কেউ রাজি না হলে নির্যাতন চালানো হয়। অনেকে চাইলেও পালাতে পারেনি। কারণ মেয়েদের পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আটকে রাখে চক্রটি। এই চক্রের হোতা দুবাইয়ে বাংলাদেশি নৈশ ক্লাব আর ‘সাদা বারের’ (ড্যান্স ক্লাব) মালিকেরা। দুবাই শহরে এমন অন্তত ২০টি গ্যাং আছে; যারা বাংলাদেশ থেকে মেয়ে নিয়ে ক্লাবে ব্যবহার করে। ক্লাবগুলো দিন দিন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে। ক্লাব ঘিরে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। প্রবাসী যুবকেরা রাস্তায় মারামারি করছে। এতে প্রবাসীরা ভাবমূর্তির সংকটে পড়ছেন।
দুবাইয়ে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে (দুবাই) ১০ লাখের ওপরে বৈধ প্রবাসীর কথা জানা থাকলেও ভিজিট ভিসায় এসে অবস্থান করেছে এমন সংখ্যাও ২ লাখের কম না। সেখানে মেয়েরাও রয়েছে। ক্লাবকেন্দ্রিক মেয়েদের ব্যবহারের অভিযোগ আছে। সবচেয়ে বেশি মুশকিল হলো এসব নিয়ে প্রায়ই মারামারিও হচ্ছে। তা নিয়ে আমরা খুবই বিব্রতকর অবস্থায় আছি।’
দেশের অপরাধীদের জমজমাট চক্র দুবাইয়ে
দুবাইয়ের দেরা এলাকায় ফলের ব্যবসা করেন প্রবাসী জামাল উদ্দিন। তিনিসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রবাসী জানান, বাংলাদেশ থেকে অনেক অপরাধী দুবাইয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তারা সেখানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে অর্থ উপার্জনও করছে। এ রকম উপার্জনের প্রধান মাধ্যম নৈশ ক্লাব। চাকরির লোভ দেখিয়ে তারা দেশ থেকে কমবয়সী নারীদের নিয়ে এসব নৈশ ক্লাবে ব্যবহার করছে। কোনোটির নাম দেওয়া হয়েছে সাদা বার। দুবাইয়ের দেরা, মতিনা, বানিয়াস এলাকাসহ পুরো শহরে এমন ক্লাব আছে কমপক্ষে ২০টি।
জানা যায়, প্রবাসী মহিউদ্দিন ১৭ কিশোরীকে নিয়ে দেরায় ফরচুন হোটেল খুলেছেন ‘বাংলাবার’। তিনি দেরা প্লাম হোটেলে ১৫-১৬ জন মেয়েকে রেখে অংশীদার সজলকে দিয়ে চালাচ্ছেন ‘নাইট ক্লাব’। নাজিম, জিয়া, হারুন ও রিপনের তত্ত্বাবধানে চলছে মার্কো পোলো হোটেলে আরেকটি ‘সাইলেন বার’। সেখানে বাংলাদেশি কিশোরী ৪০ জন। ঢাকা চলচিত্রের ড্যান্স মাস্টার হিসেবে পরিচিত সজীবের আছে দুটি নৈশ ক্লাব ‘সাফরান বুটিক’ ও ‘বাংলা ডান্স বার’-এ কিশোরীর সংখ্যা ৭০।
মিনা ও ফুজায়ইরা হোটেলে সজীবের আরও দুটি ড্যান্স বার আছে। বানিয়াস এলাকায় আবদুল মান্নানের ‘সান অ্যান্ড সান’ ও ‘রামী বাংলাবার’ ড্যান্স ক্লাবে আছে ২০ কিশোরী। বানিয়াসে পনেসিয়া হোটেলের আড়ালে ছয় বছর ধরে ড্যান্স ক্লাব চালাচ্ছেন রাসেল। তাঁর ক্লাবে মেয়ের সংখ্যা ১৫। পরিচয় গোপন রেখে কথা হয় রাসেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মেয়েদের আমরা সরাসরি পাই না, বিভিন্ন মাধ্যমে আসে। আসার পর তো কেউ কোনো অভিযোগ করে না। দেশেও যেতে চায় না।’
জানা যায়, সুমির ‘সাইলেন বারে’ ২৫ জন কিশোরী আছে। কামরুলের মিডলিস্ট হোটেল ও গোল্ডেন টিউলিপে আছে ৩২ কিশোরী। গালফ-ইন ফরচুন প্লাজায় ‘মারকোপলো’ নৈশ ক্লাবটি ফটিকছড়ির নাজিমের। তাতে মেয়ে আছে ১৬-১৭ জন। নাজিমের বড় ভাই আজম কয়েক বছর আগে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নারী পাচারের অভিযোগে। নাজিমের ব্যবসায়িক অংশীদার চাঁদপুরের জিয়ার সিটি স্টারে একটি বার আছে। তাতে মেয়ের সংখ্যা ২০। জাজ মাল্টিমিডিয়ার পরিচালক দাবিদার অনিকের মুতিনা এলাকায় আছে একটি বড় নৈশ ক্লাব। সেলিমের বেন্টা হোটেল ও আজমান এলাকায় ড্যান্স ক্লাব ‘হাতা রিসোর্ট’ ও ‘বৈশাখী’। এ ছাড়া বাস-আল-খাইমা এলাকায় মুর্শেদের এসএইচ হোটেলে এবং কাউয়ুমের জুলফার হোটেলে আছে ড্যান্স ক্লাব। ইমরামের ক্যালিফোর্নিয়া হোটেলে মেয়ের সংখ্যা ২০। ফিরোজের দোরুস হোটেলে আছে ৩০ কিশোরী। ফেনীর সাইফুলের মালিকানাধীন ক্লারিজ হোটেলে মেয়ে আছে ১৫ জন। ইমরানের বেন্টা হোটেল আছে ৪০ কিশোরী।
পাসপোর্টে দেখানো হয় প্রাপ্তবয়স্ক
একাধিক সূত্রে জানা যায়, ওসব ক্লাব থেকে মাঝেমধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি মেয়েদের উদ্ধার করে থাকে দুবাই পুলিশ। পরে দেখা যায়, তাদের পাসপোর্টে ভুল তথ্য দিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক দেখানো হয়। তরুণী সংগ্রহ, পাসপোর্ট করানো, ভিসা সংগ্রহ, বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পার করানো এবং দুবাইয়ে ক্লাবে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সবখানে পাচারকারী চক্রের লোকজন আছে। কিশোরীদের উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ফাঁদে ফেলে দালালেরা। বিদেশে যেতে রাজি হওয়া পর কিশোরীদের ছবি পাঠানো হয় ক্লাব পরিচালনাকারীদের কাছে। এরপর ভ্রমণ ভিসায় দুবাই নেওয়া হয়। আবার ঢাকার যেসব এলাকায় নিম্ন আয়ের লোকজন থাকে, সেখানে নাচের প্রতিষ্ঠান খুলেও মেয়েদের দুবাই পাঠানো হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নাচের মিথ্যা তথ্য দিয়ে।
বাংলাদেশ ট্র্যাভেল অ্যান্ড টুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের (ইইউ আই) সাধারণ সম্পাদক এইচ এম শওকত আলী মোল্লা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি সংঘবদ্ধচক্র বাংলাদেশ থেকে মেয়ে পাচার করে দুবাই আনছে। তাদের বিভিন্ন অনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে।’
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২১ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে