মহিউদ্দিন খান মোহন
এ লেখাটি যখন তৈরি করছি, বাইরে তখন চতুর্থ দিনের কারফিউ চলছে। সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছেন। কদিন আগের তুলনায় পরিস্থিতি শান্ত। সংঘাত-সংঘর্ষ একেবারেই নেই।
মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরে আসছে। তবে সবাই উৎকণ্ঠিত আবার কখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ, নেই ফেসবুক-ইউটিউবের উৎপাত।কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। বাসায় অলস সময় পার করতে হচ্ছে টেলিভিশনে খবর দেখে।
কেন এবং কী কারণে হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো, তা এখন কারও জানতে বাকি নেই। সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ বা সংস্কার নিয়ে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন যখন সাধারণ মানুষের সমর্থন-সহানুভূতি পেতে শুরু করেছিল, তখনই তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরীহ আন্দোলনে পক্ষভুক্ত হয়ে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরিস্থিতিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যায়। অপর একটি শক্তি নিবন্ধনহীন দল জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে ঘোষণা না দিলেও দলটির কর্মী-ক্যাডাররা অনুপ্রবেশ করেছিল এই ঘটনায়।
কোটাবিরোধী (পরে বলা হয়েছে সংস্কার) আন্দোলন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথাবার্তার মধ্যে অনেকেই দায়িত্বশীলতার অভাব লক্ষ করেছেন। তিনি আন্দোলনের শুরু থেকেই বলছিলেন, এর পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে; যদিও তখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে পক্ষভুক্ত হয়নি। অনেকেই বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের কথায় মনে হয়েছে, তিনি বিরোধী দলকে ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য উসকে দিচ্ছেন। উপরন্তু তিনি যখন ছাত্রলীগকে মাঠে নামার কথা বললেন, তখনই সবাই শঙ্কিত হয়ে পড়েন আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে কি না, এই ভয়ে।
শাসক দলের এই অবস্থান বিএনপিকে উসকে দিল। তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাদের ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সর্বাত্মক সমর্থন ও পরদিন থেকে মাঠে থাকার কথা জানাল। ছাত্রদলের ওই সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতা রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন। ফলে কারও বুঝতে বাকি থাকেনি শীর্ষ নেতৃত্বের ইশারায়ই ছাত্রদল মাঠে নেমেছিল।
এক দিন পরেই বিএনপির মহাসচিব ছাত্রদের আন্দোলনে তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করার পাশাপাশি দেশবাসী সবাইকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান। এরপরও তিনি বললেন, শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় এবং সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, আন্দোলন শিক্ষার্থীদের, আর তা কত দিন চলবে তার ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব। তা ছাড়া, কোটাসংক্রান্ত আন্দোলনের সঙ্গে সরকার পতনের কী সম্পর্ক আছে, তা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই ভালো বলতে পারবেন। একটি অরাজনৈতিক ইস্যুতে গড়ে ওঠা অহিংস ছাত্র আন্দোলনে এমন প্রকাশ্য সমর্থন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলটির দায়িত্বশীলতার অভাব বলেই সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন।তবে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে জামায়াত। তাদের কর্মী-ক্যাডাররা আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করলেও প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা দেয়নি।
সরকারের অবজ্ঞা ও উদাসীনতা এবং বিরোধী দলের হঠকারিতা একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কতটা সহিংস করে তুলতে পারে, সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলন তার উদাহরণ। আন্দোলন যে এতটা সহিংস ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে, তা বোধকরি সরকার ভাবতে পারেনি। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদকের পুরোপুরি আস্থা ছিল তাঁদের ছাত্রসংগঠনের ওপর। তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন, অতীতের কোনো কোনো আন্দোলনের মতো ছাত্রলীগের ডান্ডাই এ আন্দোলনকে ঠান্ডা করার জন্য যথেষ্ট। সে মতে, অ্যাকশনও শুরু করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু হয়েছে হিতে বিপরীত।
যেদিন ছাত্রলীগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হলো, সেদিন থেকেই সহিংসতার পথে আন্দোলনের যাত্রা শুরু। এর আগে আমরা দেখেছি, হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাজপথে মিছিল করেছে, শাহবাগ মোড় এবং অন্যান্য স্থানে অবস্থান নিয়েছে, কিন্তু একটা ঢিলও কেউ ছোড়েনি। শিক্ষার্থীদের মিছিলের স্রোতকে বাধা দেওয়ার চেষ্টাও করেনি পুলিশ; বরং কিছুটা সম্ভ্রমের সঙ্গেই যেন পথ ছেড়ে দিয়েছে।
পুলিশের বাধায় শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হলেও উচ্ছৃঙ্খল হয়নি। তবে শেষতক তারা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারেনি। এখন তাদের নেতারা (সমন্বয়ক) যতই বলুক, এসব সহিংস ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই, তা সর্বাংশে মেনে নেওয়ার উপায় নেই। কেননা, ঘটনাগুলো ঘটেছে তাদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই। তাই এর দায় তারা এড়াতে পারে না। তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি।
আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠার শুরুতেই যদি তারা ‘আপিল বিভাগের রায়’ পর্যন্ত অপেক্ষার কথা বলে আন্দোলন স্থগিত করে দিত, তাহলে পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটত না। কিন্তু তারা সেটা করেনি; বরং বড় বড় রাজনৈতিক দল সমর্থন দিচ্ছে—এটা ভেবে একধরনের আত্মপ্রসাদ লাভ করে থাকবে। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, তাদের দাবি অনুযায়ী আপিল বিভাগের রায় এবং সেই মোতাবেক সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পরও তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেনি; বরং নতুন কিছু দাবি উত্থাপন করেছে। এটা কিসের লক্ষণ? তারা কি বিশেষ কোনো মহল দ্বারা চালিত হচ্ছে?
দেশজুড়ে যখন সহিংসতা চলছিল, তখন অনেকেই ফোনে আমার কাছে জানতে চাইত এর শেষ কোথায়? সরকার কি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে? আর বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলতেন, এবার সরকারকে ‘গদি ছেড়ে ভাগতে’ হবে। আমি প্রথমোক্তদের বলেছি, আমার বিশ্বাস সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে। কীভাবে? আমি তাদের বলেছিলাম, যেকোনো সরকারের হাতে বিশেষ কিছু ইনস্ট্রুমেন্ট থাকে, যেগুলোকে এ ধরনের পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক. জনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন।
দুই. কারফিউ জারি। যদি তাতেও কাজ না হয়, তাহলে ‘স্টেট ইমারজেন্সি’, অর্থাৎ জরুরি অবস্থা জারি করা। যেহেতু সংসদ বিদ্যমান, তাই জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকার এটা করতে পারবে। যাদের এসব বলেছি, তাদের মধ্যে আমার এলাকার স্নেহভাজন এক বিএনপি কর্মী পরে আমাকে বলেছে, ‘দাদা, সরকার কি আপনার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়? আপনি যা বলছিলেন তা-ই তো ঘটল!’ মেয়েটিকে বললাম, সরকারের আমার পরামর্শ নেওয়ার দরকার পড়ে না। তাদের এসব জানা এবং এসব পদক্ষেপ আইন ও বিধিসম্মত। শুধু তোমাদের নেতারা বোঝে না ‘কী করিলে কী হয়’। আর বিএনপি কর্মী-সমর্থক যারা বলত সরকার ভাগবে, তাদের বলতাম, সরকার নয়, এরপর তোমাদের নেতারা এবং তোমাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আবার ভাগতে হবে। কেননা, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে যে অর্বাচীনতার পরিচয় তোমাদের নেতারা দিয়েছেন, তাতে কপালে দুর্ভোগ আছে। পরিস্থিতি একটু নিয়ন্ত্রণে আনার পরে সরকার যে অ্যাকশনে নামবে, তাতে তোমাদের কলিজার পানি শুকিয়ে যাবে।
এ নিবন্ধটি যখন লিখছি, একজন ফোন করে বললেন, ‘আপনি যা যা বলেছিলেন তার সবই ঘটছে। এ কয়দিনে প্রায় হাজারের ওপরে বিএনপির নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। সামনে আরও হয়তো হবে। আপনি যেটা অনুমান করতে পারলেন, আমাদের নেতারা কেন তা পারল না?’ বললাম, অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত রাজনীতিতে কখনোই শুভ ফল বয়ে আনে না। বিএনপির নেতাদের বোঝা উচিত ছিল, আদালতের বিবেচনাধীন একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সোডার বোতলের বুদ্বুদের মতো; যা বাতাসের সংস্পর্শে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই হারিয়ে যাবে। তাদের আরও বোঝা উচিত ছিল, এই আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না এবং তা থেকে কোনো রাজনৈতিক ফায়দা লোটার সুযোগ সৃষ্টি হবে না। এখন কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করা আর খেসারত দেওয়া ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই।
বস্তুত, একটি নিরীহ আন্দোলন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হিংস্র আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। আর তাতে সংশ্লিষ্ট সবগুলো পক্ষের দায়িত্বশীলতার অভাব প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। এই অভাবের দায় তাঁরা কীভাবে এড়াবেন?
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
এ লেখাটি যখন তৈরি করছি, বাইরে তখন চতুর্থ দিনের কারফিউ চলছে। সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছেন। কদিন আগের তুলনায় পরিস্থিতি শান্ত। সংঘাত-সংঘর্ষ একেবারেই নেই।
মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরে আসছে। তবে সবাই উৎকণ্ঠিত আবার কখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ, নেই ফেসবুক-ইউটিউবের উৎপাত।কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। বাসায় অলস সময় পার করতে হচ্ছে টেলিভিশনে খবর দেখে।
কেন এবং কী কারণে হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো, তা এখন কারও জানতে বাকি নেই। সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ বা সংস্কার নিয়ে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন যখন সাধারণ মানুষের সমর্থন-সহানুভূতি পেতে শুরু করেছিল, তখনই তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরীহ আন্দোলনে পক্ষভুক্ত হয়ে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরিস্থিতিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যায়। অপর একটি শক্তি নিবন্ধনহীন দল জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে ঘোষণা না দিলেও দলটির কর্মী-ক্যাডাররা অনুপ্রবেশ করেছিল এই ঘটনায়।
কোটাবিরোধী (পরে বলা হয়েছে সংস্কার) আন্দোলন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথাবার্তার মধ্যে অনেকেই দায়িত্বশীলতার অভাব লক্ষ করেছেন। তিনি আন্দোলনের শুরু থেকেই বলছিলেন, এর পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে; যদিও তখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে পক্ষভুক্ত হয়নি। অনেকেই বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের কথায় মনে হয়েছে, তিনি বিরোধী দলকে ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য উসকে দিচ্ছেন। উপরন্তু তিনি যখন ছাত্রলীগকে মাঠে নামার কথা বললেন, তখনই সবাই শঙ্কিত হয়ে পড়েন আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে কি না, এই ভয়ে।
শাসক দলের এই অবস্থান বিএনপিকে উসকে দিল। তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাদের ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সর্বাত্মক সমর্থন ও পরদিন থেকে মাঠে থাকার কথা জানাল। ছাত্রদলের ওই সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতা রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন। ফলে কারও বুঝতে বাকি থাকেনি শীর্ষ নেতৃত্বের ইশারায়ই ছাত্রদল মাঠে নেমেছিল।
এক দিন পরেই বিএনপির মহাসচিব ছাত্রদের আন্দোলনে তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করার পাশাপাশি দেশবাসী সবাইকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান। এরপরও তিনি বললেন, শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় এবং সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, আন্দোলন শিক্ষার্থীদের, আর তা কত দিন চলবে তার ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব। তা ছাড়া, কোটাসংক্রান্ত আন্দোলনের সঙ্গে সরকার পতনের কী সম্পর্ক আছে, তা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই ভালো বলতে পারবেন। একটি অরাজনৈতিক ইস্যুতে গড়ে ওঠা অহিংস ছাত্র আন্দোলনে এমন প্রকাশ্য সমর্থন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলটির দায়িত্বশীলতার অভাব বলেই সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন।তবে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে জামায়াত। তাদের কর্মী-ক্যাডাররা আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করলেও প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা দেয়নি।
সরকারের অবজ্ঞা ও উদাসীনতা এবং বিরোধী দলের হঠকারিতা একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কতটা সহিংস করে তুলতে পারে, সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলন তার উদাহরণ। আন্দোলন যে এতটা সহিংস ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে, তা বোধকরি সরকার ভাবতে পারেনি। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদকের পুরোপুরি আস্থা ছিল তাঁদের ছাত্রসংগঠনের ওপর। তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন, অতীতের কোনো কোনো আন্দোলনের মতো ছাত্রলীগের ডান্ডাই এ আন্দোলনকে ঠান্ডা করার জন্য যথেষ্ট। সে মতে, অ্যাকশনও শুরু করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু হয়েছে হিতে বিপরীত।
যেদিন ছাত্রলীগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হলো, সেদিন থেকেই সহিংসতার পথে আন্দোলনের যাত্রা শুরু। এর আগে আমরা দেখেছি, হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাজপথে মিছিল করেছে, শাহবাগ মোড় এবং অন্যান্য স্থানে অবস্থান নিয়েছে, কিন্তু একটা ঢিলও কেউ ছোড়েনি। শিক্ষার্থীদের মিছিলের স্রোতকে বাধা দেওয়ার চেষ্টাও করেনি পুলিশ; বরং কিছুটা সম্ভ্রমের সঙ্গেই যেন পথ ছেড়ে দিয়েছে।
পুলিশের বাধায় শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হলেও উচ্ছৃঙ্খল হয়নি। তবে শেষতক তারা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারেনি। এখন তাদের নেতারা (সমন্বয়ক) যতই বলুক, এসব সহিংস ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই, তা সর্বাংশে মেনে নেওয়ার উপায় নেই। কেননা, ঘটনাগুলো ঘটেছে তাদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই। তাই এর দায় তারা এড়াতে পারে না। তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি।
আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠার শুরুতেই যদি তারা ‘আপিল বিভাগের রায়’ পর্যন্ত অপেক্ষার কথা বলে আন্দোলন স্থগিত করে দিত, তাহলে পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটত না। কিন্তু তারা সেটা করেনি; বরং বড় বড় রাজনৈতিক দল সমর্থন দিচ্ছে—এটা ভেবে একধরনের আত্মপ্রসাদ লাভ করে থাকবে। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, তাদের দাবি অনুযায়ী আপিল বিভাগের রায় এবং সেই মোতাবেক সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পরও তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেনি; বরং নতুন কিছু দাবি উত্থাপন করেছে। এটা কিসের লক্ষণ? তারা কি বিশেষ কোনো মহল দ্বারা চালিত হচ্ছে?
দেশজুড়ে যখন সহিংসতা চলছিল, তখন অনেকেই ফোনে আমার কাছে জানতে চাইত এর শেষ কোথায়? সরকার কি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে? আর বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলতেন, এবার সরকারকে ‘গদি ছেড়ে ভাগতে’ হবে। আমি প্রথমোক্তদের বলেছি, আমার বিশ্বাস সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে। কীভাবে? আমি তাদের বলেছিলাম, যেকোনো সরকারের হাতে বিশেষ কিছু ইনস্ট্রুমেন্ট থাকে, যেগুলোকে এ ধরনের পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক. জনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন।
দুই. কারফিউ জারি। যদি তাতেও কাজ না হয়, তাহলে ‘স্টেট ইমারজেন্সি’, অর্থাৎ জরুরি অবস্থা জারি করা। যেহেতু সংসদ বিদ্যমান, তাই জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকার এটা করতে পারবে। যাদের এসব বলেছি, তাদের মধ্যে আমার এলাকার স্নেহভাজন এক বিএনপি কর্মী পরে আমাকে বলেছে, ‘দাদা, সরকার কি আপনার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়? আপনি যা বলছিলেন তা-ই তো ঘটল!’ মেয়েটিকে বললাম, সরকারের আমার পরামর্শ নেওয়ার দরকার পড়ে না। তাদের এসব জানা এবং এসব পদক্ষেপ আইন ও বিধিসম্মত। শুধু তোমাদের নেতারা বোঝে না ‘কী করিলে কী হয়’। আর বিএনপি কর্মী-সমর্থক যারা বলত সরকার ভাগবে, তাদের বলতাম, সরকার নয়, এরপর তোমাদের নেতারা এবং তোমাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আবার ভাগতে হবে। কেননা, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে যে অর্বাচীনতার পরিচয় তোমাদের নেতারা দিয়েছেন, তাতে কপালে দুর্ভোগ আছে। পরিস্থিতি একটু নিয়ন্ত্রণে আনার পরে সরকার যে অ্যাকশনে নামবে, তাতে তোমাদের কলিজার পানি শুকিয়ে যাবে।
এ নিবন্ধটি যখন লিখছি, একজন ফোন করে বললেন, ‘আপনি যা যা বলেছিলেন তার সবই ঘটছে। এ কয়দিনে প্রায় হাজারের ওপরে বিএনপির নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। সামনে আরও হয়তো হবে। আপনি যেটা অনুমান করতে পারলেন, আমাদের নেতারা কেন তা পারল না?’ বললাম, অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত রাজনীতিতে কখনোই শুভ ফল বয়ে আনে না। বিএনপির নেতাদের বোঝা উচিত ছিল, আদালতের বিবেচনাধীন একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সোডার বোতলের বুদ্বুদের মতো; যা বাতাসের সংস্পর্শে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই হারিয়ে যাবে। তাদের আরও বোঝা উচিত ছিল, এই আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না এবং তা থেকে কোনো রাজনৈতিক ফায়দা লোটার সুযোগ সৃষ্টি হবে না। এখন কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করা আর খেসারত দেওয়া ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই।
বস্তুত, একটি নিরীহ আন্দোলন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হিংস্র আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। আর তাতে সংশ্লিষ্ট সবগুলো পক্ষের দায়িত্বশীলতার অভাব প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। এই অভাবের দায় তাঁরা কীভাবে এড়াবেন?
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে