সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আনসার সদস্যদের মারধরে আহত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্র নুর হোসেনের মেরুদণ্ডের দুটি হাড় স্থানচ্যুত হয়েছে। তাঁর সুস্থ হতে বেশ কিছু দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

এদিকে নুর হোসেনকে মারধরের প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার মানববন্ধন ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রায় আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তাঁকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত আনসার সদস্যদের স্থায়ী বহিষ্কারের কথা জানিয়েছেন আনসার ও ভিডিপির ঢাকা জেলা কমান্ড্যান্ট।

নুর হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বর্তমানে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, গত সোমবার বিকেলে তিনি দুই ভাগনেসহ জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঘুরতে যান। সেখানে কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা অনেককে অর্থের বিনিময়ে ঢুকতে দিচ্ছিলেন। তিনি এর প্রতিবাদ করলে তাঁকে ধরে একটি ঘরে নিয়ে সাত-আটজন আনসার সদস্য বেদম মারধর করেন। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পা থেঁতলে দেন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন শুরু করেন। পরে প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা। তাঁরা আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় বহন করা, দোষীদের স্থায়ী বহিষ্কার ও গ্রেপ্তার, স্মৃতিসৌধে অনৈতিক কাজ বন্ধ করার দাবি জানান।

মানববন্ধনে মার্কেটিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের ছাত্র ইমরান শাহারিয়ার বলেন, আনসার সদস্যরা একজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে গুরুতর আহত করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাসায় বসে তামাশা দেখেছে। তাঁরা একবারের জন্যও আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে যাননি। অবিলম্বে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মানববন্ধনে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন।

মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে সেখানে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান। তাঁরা শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে প্রায় আধা ঘণ্টা পর অবরোধ স্থগিত করা হয়।

আশুলিয়া থানার ওসি বলেন, আহত শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনাম মেডিকেলের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বি কারিম বলেন, নুর হোসেনের মেরুদণ্ডের দুটি হাড়ের স্থানচ্যুতি হয়েছে। তাঁর সারা শরীরে ব্যথা রয়েছে। সুস্থ হতে বেশ কিছু দিন লাগবে।

আনসার ও ভিডিপির ঢাকা জেলা কমান্ড্যান্ট আফজাল হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যাতে পরবর্তীতে অন্য কোথাও চাকরি না পান। এছাড়া আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ব্যয় বহনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে কর্তব্যরত গণপূর্ত বিভাগের ইনচার্জ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে চারজন আনসার সদস্য শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। পরে আমি সেখানে যাই।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘আমরা আহত শিক্ষার্থীর সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূর্ণ আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের ছাত্র জহির ফয়সাল জানান, রাতের মধ্যেই নুরের পক্ষ থেকে আশুলিয়া থানায় মামলা করা হবে।

এদিকে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ছাত্র ইউনিয়ন। এক যৌথ বিবৃতিতে জাবি সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তুষার ধর ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এবং আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান।