পিঠে রোগ, পেটে ক্ষুধা সম্বল তাঁর রিকশা

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ২২
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ০৫

ডান কাঁধের ওপর জন্ম নেওয়া টিউমার সদৃশ ফোড়াটা বড় হতে হতে ঝুলে গেছে কোমর পর্যন্ত। শরীরে এই অযাচিত ভার বহনে এমনিতেই অস্বস্তিতে আছেন মোহাম্মদ রানা। এর ওপর পুরো শরীরে দেখা দিচ্ছে অসংখ্য ফোড়া। খানিক পর পর ওই সব ফোড়ায় শুরু হয় চুলকানি। এই রোগে ভুগে স্বাস্থ্যের দশা করুণ, শরীরের উচ্চতাও বাড়েনি। তবুও যন্ত্রণা-কষ্ট সয়েও চট্টগ্রাম শহরে রিকশা চালিয়ে যাচ্ছেন এই তরুণ।

দরিদ্র রানার রিকশা চালানোর পেছনের কারণও ওই টিউমার। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে টাকা জমাচ্ছেন তিনি। এর একটি অংশ পাঠিয়ে দেন মা-বাবার কাছে। বাকি টাকা থেকে নিজের খরচ বাদে জমা করছেন। লক্ষ্য অন্তত এক লাখ টাকা জমা করা। এই পরিমাণ টাকা জমা হলেই টিউমার অপসারণে করাতে চান অস্ত্রোপচার।

নীলফামারী সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ রানা। এলাকার এক বড় ভাইয়ের সহায়তায় মাস দু-এক আগে তিনি চট্টগ্রাম শহরে আসেন। এরপর এক মালিকের কাছ থেকে রিকশা ভাড়া নিয়ে চালাতে শুরু করেন। চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার মাঝির দোকান এলাকায় বেশি থাকেন তিনি।

সোমবার রাতে রানাকে পাওয়া গেল নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে। পিঠের টিউমারটা বড় হওয়ায় শার্ট ফুঁড়েই যেন বেরিয়ে আসছিল। চার ফুটের একটু বেশি উচ্চতার কারণে ভালো করে রিকশার প্যাডেলে পা ছুঁতে পারেন না রানা। রিকশা চালাতে তাই তাঁকে আসনে ছেড়ে বসতে হয় সামনের লোহার পাতে। জানতে চাইলে ৩০ বছর বয়সী এই তরুণ খুলে বলেন তাঁর দুঃখের গল্প।

রানার বয়স তখন ১০ কিংবা ১১। পড়তেন পঞ্চম শ্রেণিতে। ওই বয়সে একদিন শরীরে ফোড়ার মতো কিছু একটার উপস্থিতি ধরা পড়ে। সময় যত গড়াতে থাকে তত সেটি বড় হতে থাকে। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তাঁরা এটিকে টিউমার হিসেবে চিহ্নিত করেন। ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও এ রকম ছোট ছোট টিউমার হতে থাকে। এ কারণে আর পড়ালেখা করাও হয়নি রানার।

রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভাবের সংসার। নুন-আনতে পান্তা ফুরায় দশা। বড় ভাই আর বোন বিয়ে করে সংসারী হন। টাকার কারণে ভালো চিকিৎসাও করাতে পারিনি। আবার টিউমারের কারণে কোথাও চাকরিও হচ্ছিল না। সবাই একই কথা বলেন ‘‘তুমি আনফিট’’। সে জন্য দেড় বছর আগে একজন ভালো চিকিৎসকের কাছে যাই। তিনি জানান, এই টিউমার অপসারণ করতে অস্ত্রোপচার করাতে হবে। তাতে অন্তত এক লাখ টাকা খরচ পড়বে বলে জানান।’

তবে এরপর করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় কোনো কাজ করতে পারেননি রানা। করোনা কিছুটা কমতেই নেমে পড়েছেন রিকশা নিয়ে। কত টাকা জমালেন? এমন প্রশ্নে রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাড়ে পাঁচ হাজার জমা হয়েছে। অনেকে বলেন, মানুষের কাছে ধরনা দিতে। কিন্তু আমার এভাবে টাকা তুলতে লজ্জা লাগে। অনেক কষ্ট হলেও তাই রিকশা চালাচ্ছি। আশা করছি, আগামী এক বছরের মধ্যে এক লাখ টাকা জমিয়ে অস্ত্রোপচার করতে পারব। তারপর ইনশা আল্লাহ ভালো কোনো চাকরি করব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত