সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট দাবি দুটির একটি ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, অপরটি সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন চাই। পেছনে ফিরে তাকালে প্রশ্ন উঠতে পারে, দুটি দাবি কেন তোলা হলো, একটিই তো যথেষ্ট হওয়ার কথা। রাষ্ট্রভাষা যদি বাংলা হয় তাহলেও সর্বস্তরে এর যে প্রচলন ঘটবে কি ঘটবে না, সে বিষয়ে কোনো সংশয় ছিল কি? জবাব হচ্ছে, হ্যাঁ, ছিল। প্রথমত, পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা যে বাংলা হবে—এমন দাবি পূর্ববঙ্গের মানুষ তোলেনি, তারা চেয়েছে বাংলা হবে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা, অর্থাৎ দুটির একটি; তাই বাংলাকে যদি রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে মেনে নেওয়াও হয়, তাহলেই যে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত হয়ে যাবে, এমন ভরসা কোথায়? ভরসা নেই বলেই বোধ হয় রাষ্ট্রভাষা দাবির সঙ্গে বাংলা প্রচলনের দাবিটাও উঠেছিল।
অখণ্ড পাকিস্তানে বাংলাকে শেষ পর্যন্ত অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছিল; কিন্তু নতুন জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ বাঙালি ওই মেনে নেওয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি, যে জন্য ধাপে ধাপে এগিয়ে এবং পূর্ণ স্বাধীনতাপ্রাপ্তির প্রয়োজনে তারা এমন একটি রাষ্ট্রই প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে যার অন্যতম নয়, একমাত্র রাষ্ট্রভাষাই বাংলা। কিন্তু তারপর? বাংলা কি সর্বস্তরে প্রচলিত হয়েছে? হয়নি যে সেটা তো পরিষ্কার।
ছবিটা আমাদের সবারই জানা। তবু তার দিকে চকিতে তাকানো যেতে পারে। বাংলা উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হয়নি। তদুপরি শিক্ষা তিন ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। তিনটির মধ্যে যে ধারাটি ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করছে, যার ভেতরে থেকে বিত্তবান পরিবারের সন্তানেরা লেখাপড়া করছে এবং আগামী দিনে যে ধারায় শিক্ষিতরাই সমাজে কর্তৃত্ব করবে বলে ধরে নেওয়া যায়, সেই ধারাটির মাধ্যম অবশ্যই বাংলা নয়। সেটি ইংরেজি। আর বাংলা মাধ্যমে যারা লেখাপড়া করে, তাদের ভেতরও ইংরেজির প্রতি আগ্রহ যে কমছে না বরং বাড়ছে, এতেও নিশ্চয়ই সন্দেহ নেই। উচ্চস্তরে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা না দেওয়ার ব্যর্থতার দরুন শিক্ষা গভীর হচ্ছে না, এমনকি তাকে যথার্থ শিক্ষাও বলা যাচ্ছে না। কেননা মাতৃভাষা ছাড়া কোনো শিক্ষাই যথার্থ হয় না। উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার কার্যকর ব্যবহার নেই, অথচ সেখানে বাদী, বিবাদী, আইনজীবী, বিচারক সবাই বাঙালি। এটিও বাংলার অপ্রচলনের একটি করুণ দৃষ্টান্ত বৈকি।
কিন্তু এসবের কারণ কী? কারণটা স্পষ্ট, সেটা হলো দেশের শাসকশ্রেণি বাংলা ব্যবহারে আগ্রহী নয়। আমাদের দুর্ভাগ্য যে এ দেশের শাসকশ্রেণি বাংলা ভাষার ব্যাপারে কখনোই উৎসাহী ছিল না। অতীতে আমরা পরাধীন ছিলাম, বিদেশিরা আমাদের শাসন করেছে, তারা বাংলা ভাষা ব্যবহার করবে না; বরং তাদের নিজেদের ভাষা চাপিয়ে দিতে চাইবে—এটাই ছিল স্বাভাবিক। এ জন্য আমরা দেখেছি সংস্কৃত, ফারসি এবং পরে ইংরেজি হয়েছে সরকারি ভাষা, বাংলা ভাষা সে মর্যাদা পায়নি। পাকিস্তানিরা চেয়েছিল উর্দুকে চাপিয়ে দেবে। শেষ পর্যন্ত পারেনি। কিন্তু এখন তো দেশ শাসন করছে স্বদেশিরা, তাহলে এখনো কেন বাংলা সর্বত্র প্রচলিত হচ্ছে না? না হওয়ার ঘটনা এই মর্মান্তিক সত্যের প্রতিই ইঙ্গিত করে যে, আমাদের শাসকশ্রেণি এ দেশেরই যদিও, তবু তারা ঠিক দেশি নয়। তারা জনগণের সঙ্গে নেই। নিজেদের তারা জাতীয়তাবাদী বলে দাবি করে, কিন্তু তাদের ভেতর দেশপ্রেমের নিদারুণ অভাব। এককথায় এ দেশে তাদের অবস্থানও আগের বিদেশিদের মতোই; তারা কেবল যে জনবিচ্ছিন্ন তা নয়, জনবিচ্ছিন্নতার দরুন তাদের ভেতর গোপন অহংকার রয়েছে।
অপরদিকে তাদের সংযোগ যে পুঁজিবাদী বিশ্বের সঙ্গে তার ভাষা স্পষ্টরূপে ইংরেজি। বাংলা জনগণের ভাষা, চিরকালই তাই ছিল, এখনো সে রকমই আছে; কিন্তু শাসকেরা জনগণের থেকে দূরেই রয়ে গেছে, যেমন তারা আগে ছিল। শাসকশ্রেণির সন্তানেরা ইংরেজি শেখে, তারা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে, বিদেশে ঘরবাড়ি কেনে এবং তাদের সন্তানেরা বিদেশমুখো হয়। তা ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ঘটছে। শাসকশ্রেণি তাতে বাধা দেবে কি, তাদের তোয়াজ করে চলে।
বাংলা প্রচলনের অন্তরায় অন্য কেউ ঘটাচ্ছে না, জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে দেশের বিদেশমুখো ও বিদেশপ্রভাবিত শাসকেরাই ঘটাচ্ছে। শাসকশ্রেণির ভেতর রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, আমলা পেশাজীবী, সবাই আছে। তাদের প্রধান যোগ্যতা তারা ধনী। তারা ইংরেজি ব্যবহার করতে পারলে খুশি হয় এবং যখন বাংলা ব্যবহার করে, তখন মনমরা থাকে এবং ভাষাকে বিকৃত করে। রাজনীতিকেরাই প্রধান, তারাই সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান, তাদের বক্তব্যই আমরা শুনি; লোকে তাদেরই দৃষ্টান্ত বলে মানে, প্রভাবিত হয়, অনুকরণ করে। জাতীয় সংসদে, সভা-সমিতিতে রাজনীতিকেরা যে ভাষা ব্যবহার করে, তাতে অনেক সময় কানে আঙুল দিতে ইচ্ছা করে। যারা রাজনীতিক নয়, তারাও বাংলা ব্যবহার করে বেশ স্বাধীনভাবে; উচ্চারণ ও ব্যাকরণের তোয়াক্কা করে না, আঞ্চলিকতার সঙ্গে ইংরেজি শব্দ মিলিয়ে জগাখিচুড়ি তৈরি করে। যেসব ভুল ইংরেজির ব্যবহার ঘটালে তারা লজ্জায় ম্রিয়মাণ হতো, সেগুলো নির্বিচারে ঘটাতে থাকে। লজ্জা পাবে কী, অনেক সময় তারা গর্ব অনুভব করে, ভাবে বাংলা ভালোভাবে না জানাটাই তাদের আভিজাত্যের প্রমাণ। দেশের পরিস্থিতিতে যে নৈরাজ্য বিরাজমান, তার ছবি ভাষার প্রতি এই দুর্ব্যবহারের মধ্যে চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে। ওদিকে জনসাধারণের বড় একটা অংশ অশিক্ষিত; যাদের শিক্ষিত বলে গণ্য করা হয়, তাদেরও অনেকেই অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মাত্র, যথার্থ অর্থে শিক্ষিত নয়। তাদের পক্ষে বাংলা ভাষার যথার্থ ব্যবহার সম্ভব নয়।
বাঙালি তার ভাষা নিয়ে গৌরব করে থাকে। গৌরবের কারণ আছে। একটি কারণ বাংলা ভাষায় উচ্চারণের সঙ্গে লিখিতরূপের নৈকট্য। আমরা যেভাবে উচ্চারণ করি, সেভাবেই লিখে থাকি। কিন্তু অধুনা দেখা যাচ্ছে কেবল উচ্চারণে নয়, লিখিত রূপের ওপরও নিদারুণ হস্তক্ষেপ ঘটছে। প্রমিতকরণের নাম করে দীর্ঘ ঈ-কারগুলোকে যাবজ্জীবন নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে। সর্বাধিক অগ্রহণযোগ্য ‘শ্রেণি’ বানানে হ্রস্ব ই-কারের প্রয়োগ। শাসকশ্রেণি মনে হয় শাসিত শ্রেণিকে অন্যদিক থেকে তো বটেই, বানানের ক্ষেত্রেও হ্রস্ব করে ছাড়বে, কোনো ক্ষেত্রেই রেহাই দেবে না। হায় দরিদ্রশ্রেণির মানুষ, তোমরা পালাবে কোথায়? হরফ বিতাড়নের উদ্যোগটা পাকিস্তানি শাসকেরাও নিয়েছিল, সফল হয়নি; কেননা শিক্ষিত বাঙালি সেদিন রুখে দাঁড়িয়েছিল। এখন শিক্ষিত বাঙালিদের বিত্তবান অংশ শাসকশ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে বিতাড়নের কাজটি নিজেরাই সিদ্ধ করছে। বাঙালির দুর্দশা ও বাংলার দুর্দশা যে এক ও অভিন্ন, তাতে সন্দেহ কী!
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট দাবি দুটির একটি ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, অপরটি সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন চাই। পেছনে ফিরে তাকালে প্রশ্ন উঠতে পারে, দুটি দাবি কেন তোলা হলো, একটিই তো যথেষ্ট হওয়ার কথা। রাষ্ট্রভাষা যদি বাংলা হয় তাহলেও সর্বস্তরে এর যে প্রচলন ঘটবে কি ঘটবে না, সে বিষয়ে কোনো সংশয় ছিল কি? জবাব হচ্ছে, হ্যাঁ, ছিল। প্রথমত, পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা যে বাংলা হবে—এমন দাবি পূর্ববঙ্গের মানুষ তোলেনি, তারা চেয়েছে বাংলা হবে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা, অর্থাৎ দুটির একটি; তাই বাংলাকে যদি রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে মেনে নেওয়াও হয়, তাহলেই যে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত হয়ে যাবে, এমন ভরসা কোথায়? ভরসা নেই বলেই বোধ হয় রাষ্ট্রভাষা দাবির সঙ্গে বাংলা প্রচলনের দাবিটাও উঠেছিল।
অখণ্ড পাকিস্তানে বাংলাকে শেষ পর্যন্ত অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছিল; কিন্তু নতুন জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ বাঙালি ওই মেনে নেওয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি, যে জন্য ধাপে ধাপে এগিয়ে এবং পূর্ণ স্বাধীনতাপ্রাপ্তির প্রয়োজনে তারা এমন একটি রাষ্ট্রই প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে যার অন্যতম নয়, একমাত্র রাষ্ট্রভাষাই বাংলা। কিন্তু তারপর? বাংলা কি সর্বস্তরে প্রচলিত হয়েছে? হয়নি যে সেটা তো পরিষ্কার।
ছবিটা আমাদের সবারই জানা। তবু তার দিকে চকিতে তাকানো যেতে পারে। বাংলা উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হয়নি। তদুপরি শিক্ষা তিন ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। তিনটির মধ্যে যে ধারাটি ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করছে, যার ভেতরে থেকে বিত্তবান পরিবারের সন্তানেরা লেখাপড়া করছে এবং আগামী দিনে যে ধারায় শিক্ষিতরাই সমাজে কর্তৃত্ব করবে বলে ধরে নেওয়া যায়, সেই ধারাটির মাধ্যম অবশ্যই বাংলা নয়। সেটি ইংরেজি। আর বাংলা মাধ্যমে যারা লেখাপড়া করে, তাদের ভেতরও ইংরেজির প্রতি আগ্রহ যে কমছে না বরং বাড়ছে, এতেও নিশ্চয়ই সন্দেহ নেই। উচ্চস্তরে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা না দেওয়ার ব্যর্থতার দরুন শিক্ষা গভীর হচ্ছে না, এমনকি তাকে যথার্থ শিক্ষাও বলা যাচ্ছে না। কেননা মাতৃভাষা ছাড়া কোনো শিক্ষাই যথার্থ হয় না। উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার কার্যকর ব্যবহার নেই, অথচ সেখানে বাদী, বিবাদী, আইনজীবী, বিচারক সবাই বাঙালি। এটিও বাংলার অপ্রচলনের একটি করুণ দৃষ্টান্ত বৈকি।
কিন্তু এসবের কারণ কী? কারণটা স্পষ্ট, সেটা হলো দেশের শাসকশ্রেণি বাংলা ব্যবহারে আগ্রহী নয়। আমাদের দুর্ভাগ্য যে এ দেশের শাসকশ্রেণি বাংলা ভাষার ব্যাপারে কখনোই উৎসাহী ছিল না। অতীতে আমরা পরাধীন ছিলাম, বিদেশিরা আমাদের শাসন করেছে, তারা বাংলা ভাষা ব্যবহার করবে না; বরং তাদের নিজেদের ভাষা চাপিয়ে দিতে চাইবে—এটাই ছিল স্বাভাবিক। এ জন্য আমরা দেখেছি সংস্কৃত, ফারসি এবং পরে ইংরেজি হয়েছে সরকারি ভাষা, বাংলা ভাষা সে মর্যাদা পায়নি। পাকিস্তানিরা চেয়েছিল উর্দুকে চাপিয়ে দেবে। শেষ পর্যন্ত পারেনি। কিন্তু এখন তো দেশ শাসন করছে স্বদেশিরা, তাহলে এখনো কেন বাংলা সর্বত্র প্রচলিত হচ্ছে না? না হওয়ার ঘটনা এই মর্মান্তিক সত্যের প্রতিই ইঙ্গিত করে যে, আমাদের শাসকশ্রেণি এ দেশেরই যদিও, তবু তারা ঠিক দেশি নয়। তারা জনগণের সঙ্গে নেই। নিজেদের তারা জাতীয়তাবাদী বলে দাবি করে, কিন্তু তাদের ভেতর দেশপ্রেমের নিদারুণ অভাব। এককথায় এ দেশে তাদের অবস্থানও আগের বিদেশিদের মতোই; তারা কেবল যে জনবিচ্ছিন্ন তা নয়, জনবিচ্ছিন্নতার দরুন তাদের ভেতর গোপন অহংকার রয়েছে।
অপরদিকে তাদের সংযোগ যে পুঁজিবাদী বিশ্বের সঙ্গে তার ভাষা স্পষ্টরূপে ইংরেজি। বাংলা জনগণের ভাষা, চিরকালই তাই ছিল, এখনো সে রকমই আছে; কিন্তু শাসকেরা জনগণের থেকে দূরেই রয়ে গেছে, যেমন তারা আগে ছিল। শাসকশ্রেণির সন্তানেরা ইংরেজি শেখে, তারা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে, বিদেশে ঘরবাড়ি কেনে এবং তাদের সন্তানেরা বিদেশমুখো হয়। তা ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ঘটছে। শাসকশ্রেণি তাতে বাধা দেবে কি, তাদের তোয়াজ করে চলে।
বাংলা প্রচলনের অন্তরায় অন্য কেউ ঘটাচ্ছে না, জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে দেশের বিদেশমুখো ও বিদেশপ্রভাবিত শাসকেরাই ঘটাচ্ছে। শাসকশ্রেণির ভেতর রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, আমলা পেশাজীবী, সবাই আছে। তাদের প্রধান যোগ্যতা তারা ধনী। তারা ইংরেজি ব্যবহার করতে পারলে খুশি হয় এবং যখন বাংলা ব্যবহার করে, তখন মনমরা থাকে এবং ভাষাকে বিকৃত করে। রাজনীতিকেরাই প্রধান, তারাই সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান, তাদের বক্তব্যই আমরা শুনি; লোকে তাদেরই দৃষ্টান্ত বলে মানে, প্রভাবিত হয়, অনুকরণ করে। জাতীয় সংসদে, সভা-সমিতিতে রাজনীতিকেরা যে ভাষা ব্যবহার করে, তাতে অনেক সময় কানে আঙুল দিতে ইচ্ছা করে। যারা রাজনীতিক নয়, তারাও বাংলা ব্যবহার করে বেশ স্বাধীনভাবে; উচ্চারণ ও ব্যাকরণের তোয়াক্কা করে না, আঞ্চলিকতার সঙ্গে ইংরেজি শব্দ মিলিয়ে জগাখিচুড়ি তৈরি করে। যেসব ভুল ইংরেজির ব্যবহার ঘটালে তারা লজ্জায় ম্রিয়মাণ হতো, সেগুলো নির্বিচারে ঘটাতে থাকে। লজ্জা পাবে কী, অনেক সময় তারা গর্ব অনুভব করে, ভাবে বাংলা ভালোভাবে না জানাটাই তাদের আভিজাত্যের প্রমাণ। দেশের পরিস্থিতিতে যে নৈরাজ্য বিরাজমান, তার ছবি ভাষার প্রতি এই দুর্ব্যবহারের মধ্যে চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে। ওদিকে জনসাধারণের বড় একটা অংশ অশিক্ষিত; যাদের শিক্ষিত বলে গণ্য করা হয়, তাদেরও অনেকেই অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মাত্র, যথার্থ অর্থে শিক্ষিত নয়। তাদের পক্ষে বাংলা ভাষার যথার্থ ব্যবহার সম্ভব নয়।
বাঙালি তার ভাষা নিয়ে গৌরব করে থাকে। গৌরবের কারণ আছে। একটি কারণ বাংলা ভাষায় উচ্চারণের সঙ্গে লিখিতরূপের নৈকট্য। আমরা যেভাবে উচ্চারণ করি, সেভাবেই লিখে থাকি। কিন্তু অধুনা দেখা যাচ্ছে কেবল উচ্চারণে নয়, লিখিত রূপের ওপরও নিদারুণ হস্তক্ষেপ ঘটছে। প্রমিতকরণের নাম করে দীর্ঘ ঈ-কারগুলোকে যাবজ্জীবন নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে। সর্বাধিক অগ্রহণযোগ্য ‘শ্রেণি’ বানানে হ্রস্ব ই-কারের প্রয়োগ। শাসকশ্রেণি মনে হয় শাসিত শ্রেণিকে অন্যদিক থেকে তো বটেই, বানানের ক্ষেত্রেও হ্রস্ব করে ছাড়বে, কোনো ক্ষেত্রেই রেহাই দেবে না। হায় দরিদ্রশ্রেণির মানুষ, তোমরা পালাবে কোথায়? হরফ বিতাড়নের উদ্যোগটা পাকিস্তানি শাসকেরাও নিয়েছিল, সফল হয়নি; কেননা শিক্ষিত বাঙালি সেদিন রুখে দাঁড়িয়েছিল। এখন শিক্ষিত বাঙালিদের বিত্তবান অংশ শাসকশ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে বিতাড়নের কাজটি নিজেরাই সিদ্ধ করছে। বাঙালির দুর্দশা ও বাংলার দুর্দশা যে এক ও অভিন্ন, তাতে সন্দেহ কী!
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে