মযহারুল ইসলাম বাবলা
দুর্গাপূজার সূচনা হয়েছিল বহু আগে পশ্চিম বাংলার জমিদারদের উদ্যোগ ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে। নানা বিবর্তনে দুর্গাপূজা এখন বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। জানা যায়, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পূর্বপুরুষেরা তাঁদের প্রাসাদে পূজার প্রবর্তন করেছিলেন। কালের বিবর্তনে সামন্ত-সীমা অতিক্রম করে দুর্গাপূজা বারোয়ারি, অর্থাৎ সর্বজনীন পূজায় প্রবর্তিত হয়।
আমাদের পূর্ব বাংলায়ও দুর্গাপূজা সুদীর্ঘকাল ধরে হয়ে এসেছে। অতীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা-পার্বণে এবং মুসলমানদের ঈদে পরস্পর দুই সম্প্রদায়ের বন্ধু ও প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণের রীতি-রেওয়াজ ছিল। কিন্তু ব্রিটিশের ‘ভাগ কর এবং শাসন কর’ শঠতায় দুই সম্প্রদায়ের ঐক্যে প্রথম ফাটলের সৃষ্টি করে। পরবর্তী সময়ে দাঁড়ায় রক্তাক্ত দেশভাগ। দেশভাগের মধ্য দিয়ে দুই সম্প্রদায়ের যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছিল, আজ অবধি তার পরিসমাপ্তি ঘটেনি। বরং উত্তরোত্তর বেড়েছে, ধর্মীয় রাজনীতির সংকীর্ণতায়।
রাষ্ট্র ও শাসকশ্রেণির আনুকূল্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। যেমন প্রতিবেশী ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের রাষ্ট্রক্ষমতা প্রাপ্তিতে, তেমনি আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বাড়-বাড়ন্তে লক্ষ করা যাচ্ছে, যেটা মোটেও শুভফল বয়ে আনবে না। তার নমুনা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। ধর্ম নিশ্চয়ই যার যার, কিন্তু দেশ তো সবার।
দুর্গাপূজায় কলকাতায় বেশ কয়েকবার গিয়েছি। হতাশ হয়েছি পূজাকেন্দ্রিক নানা মৌলিক পরিবর্তনে। প্রায় ৩৫ বছর আগে কলকাতা এবং আশপাশের শহরতলি, জেলায়ও তখন ভ্রমণ করেছি। দেখেছি বারোয়ারি পূজামণ্ডপে সারাক্ষণ বেজে চলেছে বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পীদের জনপ্রিয় বাংলা গানগুলো। পাশাপাশি দেখেছি নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উপলক্ষ পূজা হলেও এ যেন সাক্ষাৎ সাংস্কৃতিক উৎসব। শারদীয় বিশেষ সংখ্যা, পূজার গানের রেকর্ড কিনছে সবাই লাইন দিয়ে। পাড়ায় পাড়ায় সন্ধ্যায় নাচ-গান, কৌতুক, নকশা ইত্যাদি আয়োজনকে সাংস্কৃতিক উৎসব ভিন্ন আর কী বলা যায়!
কয়েক বছর আগে দুর্গাপূজায় কলকাতায় ছিলাম। কৌতূহলবশত পূর্বের শহরতলি ও জেলার পূজা দেখতে গিয়ে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছি। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাঙালিয়ানাকে গ্রাস করে ফেলেছে হিন্দি সংস্কৃতি। সারাক্ষণ মণ্ডপগুলোতে বেজে চলেছে গান, তবে বাংলা গান নয়—হিন্দি গান। হিন্দি গানের আধিক্যে আমি প্রথম হোঁচট খাই। পোশাকে, রুচিতে ব্যাপক পরিবর্তন দেখে হতাশই হয়েছিলাম।
হিন্দির সাংস্কৃতিক আগ্রাসন কেবল পশ্চিম বাংলায় নয়, ছড়িয়ে পড়েছে সারা ভারতে। যে দক্ষিণ ভারত নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি আগলে হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যানের দৃঢ়তা দেখাতে পেরেছিল, দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল নিজ নিজ জাতীয়তার, সেখানেও ফাটল ধরেছে।
বিশ্বায়নের প্রভাব যেমন বিশ্বে ক্রমাগত আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক একইভাবে হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতি ভারতব্যাপী বিস্তারে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার আদা-জল খেয়ে নেমেছে। ভারতীয় শিক্ষার্থীরা নিজেদের পার্থিব সুযোগ ও সুবিধার জন্য নিজ নিজ জাতীয়তাকে প্রায় ত্যাগ করে হিন্দি ও ইংরেজি বলয়ের শিক্ষা গ্রহণে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিত্তবানেরা তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও। সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠা, কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি, করপোরেট সেক্টরে চাকরির মোহে পড়ে তারা জাতীয়তা বিসর্জনে বিলম্ব করছে না।
প্রাদেশিক ভাষা প্রদেশের বাইরে আঞ্চলিক ভাষা। ধর্মীয় প্রধান পূজা-পার্বণও জাতিভেদে ভিন্নতা লক্ষ করেছি। দুর্গাপূজা কেবল বাঙালিদের প্রধান পূজারূপে পালিত হয়। কালীপূজা, গণেশপূজা, ছাটপূজা এমনকি দক্ষিণ ভারতে রাবণের পূজাও জাতিভেদে প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
একই ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় পার্বণের এরূপ ভিন্নতা কেবল ভারতেই রয়েছে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এমনটি কিন্তু নেই। বহু জাতি ও সম্প্রদায়ের দেশ ভারতের এই বৈচিত্র্য নিশ্চয় অভূতপূর্ব। মহাত্মা গান্ধী এই বৈচিত্র্যকে ভারতের সৌন্দর্য বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
দুঃখজনক হচ্ছে, বর্তমান বিজেপি শাসনামলে ভারতের বহুত্ববাদ নির্মূল করে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নানা কর্মকাণ্ড বহুত্ববাদকে নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। অহিন্দু জনগোষ্ঠীর খাদ্য-রুচিতে পর্যন্ত অন্যায় হস্তক্ষেপ থেকেও তারা বিরত থাকেনি। বহু জাতি ও সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভারতকে ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা ভারতের জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে না।
অখণ্ডিত বাংলা দেশভাগে দুই খণ্ডে দুই পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হলেও পূর্ব বাংলা (বাংলাদেশ) ও পশ্চিম বাংলার ভাষা-সংস্কৃতি কিছু হেরফেরে অভিন্নই বটে। দুই বাংলার বাঙালিদের মধ্যকার সাংস্কৃতিক যুগলবন্ধন হাজার বছরের এবং কখনো সেটা বিলোপ হয়নি। দেশভাগের পরে পাকিস্তানি শাসনামলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হলেও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর দুই বাংলার আরও নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আমলাতন্ত্র, অর্থাৎ ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী দুই বাংলার মানুষের মধ্যকার সংযোগ-সম্প্রীতিকে কখনো সুনজরে দেখেনি, আজও দেখে বলে মনে করা যাবে না। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী পশ্চিম বাংলাকে নিয়ে একপ্রকার শঙ্কার মধ্যেই ছিল এবং আছেও।
উদ্দেশ্যমূলক উপায়ে জাতিগত ঐক্য-সংহতি জলাঞ্জলি দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-সংঘাতে দেশভাগ সম্পন্ন করা সহজ হয়েছিল ব্রিটিশদের কারসাজি এবং ক্ষমতালিপ্সু লীগ-কংগ্রেসের ক্ষমতার ভাগাভাগিতে। কিন্তু সম্প্রদায়গত ঐক্য যে জাতিগত ঐক্যের চেয়ে দৃঢ় নয়, এটা ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী খুব ভালো করেই জানে। না হলে বৃহৎ ভারতের তুলনায় ক্ষুদ্র ও দুর্বল বাংলাদেশের সীমান্তজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার প্রয়োজন হলো কেন? মূল উদ্দেশ্য বাঙালিদের পরস্পরকে বিচ্ছিন্ন রাখা।
এ ছাড়া যে মন্ত্রটি ভারতীয় জনগণের মনোজগতে উদ্দেশ্যমূলক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা হচ্ছে—সব ভারতীয় এক জাতি। বহুজাতির ভারতে শঠতার নজরকাড়া এমন মন্ত্রের দীক্ষা যেমন হাস্যকর, তেমনি নজিরবিহীন। ভারতীয় জনগণও সেই মন্ত্র হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত করে নিয়েছে। তারা জাতি পরিচয়ে ‘ভারতীয়’ পরিচয় দিতেই অধিক গর্বিত ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, জাতীয়তা বিসর্জনে।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
দুর্গাপূজার সূচনা হয়েছিল বহু আগে পশ্চিম বাংলার জমিদারদের উদ্যোগ ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে। নানা বিবর্তনে দুর্গাপূজা এখন বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। জানা যায়, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পূর্বপুরুষেরা তাঁদের প্রাসাদে পূজার প্রবর্তন করেছিলেন। কালের বিবর্তনে সামন্ত-সীমা অতিক্রম করে দুর্গাপূজা বারোয়ারি, অর্থাৎ সর্বজনীন পূজায় প্রবর্তিত হয়।
আমাদের পূর্ব বাংলায়ও দুর্গাপূজা সুদীর্ঘকাল ধরে হয়ে এসেছে। অতীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা-পার্বণে এবং মুসলমানদের ঈদে পরস্পর দুই সম্প্রদায়ের বন্ধু ও প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণের রীতি-রেওয়াজ ছিল। কিন্তু ব্রিটিশের ‘ভাগ কর এবং শাসন কর’ শঠতায় দুই সম্প্রদায়ের ঐক্যে প্রথম ফাটলের সৃষ্টি করে। পরবর্তী সময়ে দাঁড়ায় রক্তাক্ত দেশভাগ। দেশভাগের মধ্য দিয়ে দুই সম্প্রদায়ের যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছিল, আজ অবধি তার পরিসমাপ্তি ঘটেনি। বরং উত্তরোত্তর বেড়েছে, ধর্মীয় রাজনীতির সংকীর্ণতায়।
রাষ্ট্র ও শাসকশ্রেণির আনুকূল্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। যেমন প্রতিবেশী ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের রাষ্ট্রক্ষমতা প্রাপ্তিতে, তেমনি আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বাড়-বাড়ন্তে লক্ষ করা যাচ্ছে, যেটা মোটেও শুভফল বয়ে আনবে না। তার নমুনা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। ধর্ম নিশ্চয়ই যার যার, কিন্তু দেশ তো সবার।
দুর্গাপূজায় কলকাতায় বেশ কয়েকবার গিয়েছি। হতাশ হয়েছি পূজাকেন্দ্রিক নানা মৌলিক পরিবর্তনে। প্রায় ৩৫ বছর আগে কলকাতা এবং আশপাশের শহরতলি, জেলায়ও তখন ভ্রমণ করেছি। দেখেছি বারোয়ারি পূজামণ্ডপে সারাক্ষণ বেজে চলেছে বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পীদের জনপ্রিয় বাংলা গানগুলো। পাশাপাশি দেখেছি নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উপলক্ষ পূজা হলেও এ যেন সাক্ষাৎ সাংস্কৃতিক উৎসব। শারদীয় বিশেষ সংখ্যা, পূজার গানের রেকর্ড কিনছে সবাই লাইন দিয়ে। পাড়ায় পাড়ায় সন্ধ্যায় নাচ-গান, কৌতুক, নকশা ইত্যাদি আয়োজনকে সাংস্কৃতিক উৎসব ভিন্ন আর কী বলা যায়!
কয়েক বছর আগে দুর্গাপূজায় কলকাতায় ছিলাম। কৌতূহলবশত পূর্বের শহরতলি ও জেলার পূজা দেখতে গিয়ে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছি। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাঙালিয়ানাকে গ্রাস করে ফেলেছে হিন্দি সংস্কৃতি। সারাক্ষণ মণ্ডপগুলোতে বেজে চলেছে গান, তবে বাংলা গান নয়—হিন্দি গান। হিন্দি গানের আধিক্যে আমি প্রথম হোঁচট খাই। পোশাকে, রুচিতে ব্যাপক পরিবর্তন দেখে হতাশই হয়েছিলাম।
হিন্দির সাংস্কৃতিক আগ্রাসন কেবল পশ্চিম বাংলায় নয়, ছড়িয়ে পড়েছে সারা ভারতে। যে দক্ষিণ ভারত নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি আগলে হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যানের দৃঢ়তা দেখাতে পেরেছিল, দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল নিজ নিজ জাতীয়তার, সেখানেও ফাটল ধরেছে।
বিশ্বায়নের প্রভাব যেমন বিশ্বে ক্রমাগত আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক একইভাবে হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতি ভারতব্যাপী বিস্তারে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার আদা-জল খেয়ে নেমেছে। ভারতীয় শিক্ষার্থীরা নিজেদের পার্থিব সুযোগ ও সুবিধার জন্য নিজ নিজ জাতীয়তাকে প্রায় ত্যাগ করে হিন্দি ও ইংরেজি বলয়ের শিক্ষা গ্রহণে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিত্তবানেরা তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও। সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠা, কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি, করপোরেট সেক্টরে চাকরির মোহে পড়ে তারা জাতীয়তা বিসর্জনে বিলম্ব করছে না।
প্রাদেশিক ভাষা প্রদেশের বাইরে আঞ্চলিক ভাষা। ধর্মীয় প্রধান পূজা-পার্বণও জাতিভেদে ভিন্নতা লক্ষ করেছি। দুর্গাপূজা কেবল বাঙালিদের প্রধান পূজারূপে পালিত হয়। কালীপূজা, গণেশপূজা, ছাটপূজা এমনকি দক্ষিণ ভারতে রাবণের পূজাও জাতিভেদে প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
একই ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় পার্বণের এরূপ ভিন্নতা কেবল ভারতেই রয়েছে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এমনটি কিন্তু নেই। বহু জাতি ও সম্প্রদায়ের দেশ ভারতের এই বৈচিত্র্য নিশ্চয় অভূতপূর্ব। মহাত্মা গান্ধী এই বৈচিত্র্যকে ভারতের সৌন্দর্য বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
দুঃখজনক হচ্ছে, বর্তমান বিজেপি শাসনামলে ভারতের বহুত্ববাদ নির্মূল করে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নানা কর্মকাণ্ড বহুত্ববাদকে নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। অহিন্দু জনগোষ্ঠীর খাদ্য-রুচিতে পর্যন্ত অন্যায় হস্তক্ষেপ থেকেও তারা বিরত থাকেনি। বহু জাতি ও সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভারতকে ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা ভারতের জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে না।
অখণ্ডিত বাংলা দেশভাগে দুই খণ্ডে দুই পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হলেও পূর্ব বাংলা (বাংলাদেশ) ও পশ্চিম বাংলার ভাষা-সংস্কৃতি কিছু হেরফেরে অভিন্নই বটে। দুই বাংলার বাঙালিদের মধ্যকার সাংস্কৃতিক যুগলবন্ধন হাজার বছরের এবং কখনো সেটা বিলোপ হয়নি। দেশভাগের পরে পাকিস্তানি শাসনামলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হলেও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর দুই বাংলার আরও নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আমলাতন্ত্র, অর্থাৎ ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী দুই বাংলার মানুষের মধ্যকার সংযোগ-সম্প্রীতিকে কখনো সুনজরে দেখেনি, আজও দেখে বলে মনে করা যাবে না। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী পশ্চিম বাংলাকে নিয়ে একপ্রকার শঙ্কার মধ্যেই ছিল এবং আছেও।
উদ্দেশ্যমূলক উপায়ে জাতিগত ঐক্য-সংহতি জলাঞ্জলি দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-সংঘাতে দেশভাগ সম্পন্ন করা সহজ হয়েছিল ব্রিটিশদের কারসাজি এবং ক্ষমতালিপ্সু লীগ-কংগ্রেসের ক্ষমতার ভাগাভাগিতে। কিন্তু সম্প্রদায়গত ঐক্য যে জাতিগত ঐক্যের চেয়ে দৃঢ় নয়, এটা ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী খুব ভালো করেই জানে। না হলে বৃহৎ ভারতের তুলনায় ক্ষুদ্র ও দুর্বল বাংলাদেশের সীমান্তজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার প্রয়োজন হলো কেন? মূল উদ্দেশ্য বাঙালিদের পরস্পরকে বিচ্ছিন্ন রাখা।
এ ছাড়া যে মন্ত্রটি ভারতীয় জনগণের মনোজগতে উদ্দেশ্যমূলক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা হচ্ছে—সব ভারতীয় এক জাতি। বহুজাতির ভারতে শঠতার নজরকাড়া এমন মন্ত্রের দীক্ষা যেমন হাস্যকর, তেমনি নজিরবিহীন। ভারতীয় জনগণও সেই মন্ত্র হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত করে নিয়েছে। তারা জাতি পরিচয়ে ‘ভারতীয়’ পরিচয় দিতেই অধিক গর্বিত ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, জাতীয়তা বিসর্জনে।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে