ক্রেতার পাতে বাসি খাবার তৈরি নোংরা পরিবেশে

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০৮
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৪৩

ডুমুরিয়ায় বেশির ভাগ হোটেল রেস্তোরাঁয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করা হচ্ছে। সম্প্রতি একাধিকবার অভিযান চালানোর পরও এসব রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করা হচ্ছে বাসি ও নিম্নমানের খাবার। এর প্রতিকার হিসেবে আবারও অভিযানের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

চুকনগর গ্রামের আব্দুস সবুর সরদার জানান, এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই হোটেলগুলোতে বাসি ও নিম্নমানের খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করছে। এসব খাবার খেয়ে প্রতারিত ও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তা ছাড়া বেশির ভাগ হোটেল মালিকেরা খোলামেলা পরিবেশে হোটেল খোলা রেখে খাবার বিক্রয় করছে।

উপজেলার চুকনগর বাজারটি হোটেলের বাজার নামে পরিচিত। এটি উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক নগরী। এটি খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর জেলার সংযোগস্থল হওয়ায় অন্যান্য বাজারের চেয়ে এ বাজারের গুরুত্ব অনেক বেশি। তা ছাড়া বিভাগীয় শহর খুলনার প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে এ বাজারের ওপর দিয়ে। তারা এসব হোটেলে খায়। হোটেল মালিকেরা নিম্নমানের খাবার দিয়ে অধিক মুনাফা করছেন।

মিষ্টির দোকানগুলোতে কয়েক দিনের বাসি মিষ্টি রেখে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া খোলা বাজারে রং মিশ্রিত ভেজাল ও নিম্নমানের পেঁয়াজি, শিঙাড়া, বিভিন্ন ধরনের চপ, ছোলাসহ হরেক রকমের অনুপযোগী খাদ্য বিক্রয় করা হচ্ছে। ভাতের হোটেলগুলোতে ভেজাল মরিচ ও মসলার গুঁড়ো দিয়ে মাছ, মাংস ও তরিতরকারি রান্না করা হয়।

প্রায় প্রতিদিনই রান্না করা বাসি মাছ ও মাংসের ঝোল পরের দিন নতুনভাবে রান্না করা মাছ ও মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। এসব খাবার খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে পেটের পীড়া, আমাশয়, জন্ডিস ও গ্যাস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধিতে। অনেকে সেনেটারির কোনো লাইসেন্স ছাড়াই অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ভেজাল কারবার।

এ ব্যাপারে এনামুল হোসেন গাজী নামে একজন ক্রেতা বলেন, বাইরে থেকে দেখতে ভালো ও উন্নতমানের আসবাবপত্রসমৃদ্ধ হোটেল রেস্তোরাঁগুলোর পেছনের দিকে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ একেবারে খোলামেলা হয়ে গেছে।

খুলনার নগরীর আইনজীবী মতিয়ার রহমান বলেন, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৯৬৯ সালের বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশের ২৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে দুধ, কেক, রুটি, পরোটা, সমুছা, লুচি, শিঙাড়া, ডাল, পরোটা, ভাত, মিষ্টান্ন ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য বাসি করে বিক্রি করা যাবে না। আবার ২৪ নম্বর ধারার ৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, হোটেল রেস্তোরাঁ ও কনফেকশনারির ছাদ, মেঝে, জানালা-দরজা ও অন্যান্য অংশ অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ৪ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, এসব স্থান কোনো মানুষের বসবাসের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারবে না। ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, হোটেল-রেস্তোরাঁ কনফেকশনারি কাজে নিয়োজিত লোকদের অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বস্ত্র পরিধান করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ হোটেলে এসব নিয়ম-কানুন মানা হয় না।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আমরা জানি প্রতিটি হোটেল রেস্তোরাঁয় পচাবাসি ও নিম্নমানের খাবার বিক্রয় করা হচ্ছে। এজন্য আমরা ইতিমধ্যে ডুমুরিয়া, শাহাপুর, খর্নিয়া, আঠারমাইল ও চুকনগরসহ কয়েকটি বাজারে বেশ কয়েকবার স্বল্পপরিসরে অভিযান চালিয়েছি। এরপরও কেউ অনিয়মের আশ্রয় নিলে আমরা আবারও অভিযান পরিচালনা করব। এসব অসাধু হোটেল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত