সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
‘এসেছ? এসো। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’ এ কথা বলে সাদি মহম্মদ সোজা নিয়ে গেলেন তাঁর হেঁশেলে। বললেন, ‘কিছু রান্না বাকি রেখেছি। সরাসরি দেখলে রেসিপি লিখতে সুবিধা হবে তোমার।’
তখন আমি প্রথম আলোর প্রদায়ক। অফিস থেকে অ্যাসাইনমেন্ট বর্তায় আমার ঘাড়ে—সাদি মহম্মদ রান্না করবেন, সেই রেসিপি টুকে আনতে হবে। সঙ্গে ফটোগ্রাফার যাবেন ছবি তুলতে। শুনে আরেক প্রদায়ক অলকাও বলল, ‘আমাকে সঙ্গে নে প্লিজ!’ আমরা গেলাম মোহাম্মদপুরে। গোরস্থানের উল্টো পাশের রাস্তায় গিয়ে পুরোনো একটা বাড়ি খুঁজে পেতে সময় লাগল না। সেদিনই আমার কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদকে কাছ থেকে দেখা। গানের পাশাপাশি খুব ভালো রান্নাও যে করতেন তিনি, সেটা ওই দিন প্রথম টের পেলাম।
তিনি রান্না করতে করতে গল্প শুরু করলেন, ‘বুঝলে, লইট্টা মাছটা টাটকা কিনতে হয়। নইলে ফ্রাইটা ভালো হয় না। আমি দেখে বড় আর টাটকা মাছগুলো এনেছি। ফ্রাইটা ভালো হবে।’ ময়দায় গড়িয়ে এক চুলায় লইট্টা মাছ ভাজতে ভাজতে আরেক চুলায় বসালেন আলু-ঝিঙে-পোস্তর একটা তরকারি। সময় লাগবে বলে আচারি খাসির মাংসটা আমি আসার আগেই রান্না করে ফেলেছিলেন।
রান্না শেষ হলে সবাই মিলে খাবারের টেবিল সাজালাম—আমি, বন্ধু অলকা, সাদি ভাই ও তাঁর এক সহকারী। খাবারের ছবি তোলা হলো—ক্লিক ক্লিক ক্লিক। সেদিন দুপুরটা স্নিগ্ধ ছিল। রোদ নেই, বৃষ্টিও নেই। খোলা বারান্দার মতো জায়গায় খাবারের টেবিল। আলোর দিকটায় সাদি ভাই গাছপালা লাগিয়ে রেখেছেন। যদি স্মৃতি ধোঁকা না দেয় তাহলে মনে করতে পারি, একটা বড় ড্রামে ড্রাগন ফ্রুটধারী ক্যাকটাস গাছ ডালপালা মেলেছে। অবাক হলাম তখন। কেননা, ওই সময়টায় বাণিজ্যিকভাবে আমাদের দেশে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়নি। হয়তো সাদি ভাই শখ করে গাছটা লাগিয়েছেন।
সবাই মিলে খেতে বসলাম। সাদি ভাই যেই না আমার পাতে লইট্টা মাছ তুলে দিতে গেছেন, আমি বললাম, ‘আমি তো লইট্টা মাছ খাই না। কখনো খাইনি।’ তিনি একপ্রকার জোর করেই দিলেন, ‘আরে একটা খেয়ে দেখ, আমি নিশ্চিত তুই আরও খেতে চাইবি।’ ঠিকই তো, মুখে নিতেই বুঝলাম, এ তো অমৃত! আর আলু-ঝিঙে-পোস্তর ব্যঞ্জনটা যেন আজও মুখে লেগে আছে। খাসিটাও কম কী! বেড়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বল তো, আচারি খাসিটা কীভাবে রান্না করেছি?’ বললাম, ‘আচার দিয়ে।’ একগাল হেসে সাদি ভাই জবাব দিলেন, ‘শোনো, আচারি মাংস মানেই আচার দিয়ে মাংস রান্না নয়। আচারের মসলা দিয়ে মাংসটা রান্না করতে হয়। আচারে যেসব মসলা ব্যবহার করা হয়, সেগুলো দিয়েই মাংসটা রান্না করলে এ রকম স্বাদ হয়। আচার দেওয়া লাগে না।’
আরামের একটা আহারের পর সাদি ভাই নিয়ে গেলেন তাঁর শোবারঘরে। আমরা নিচে পাতলা গালিচার ওপর বসলাম। রান্নার রেসিপিগুলো ঠিক ঠিক টুকে নেওয়া হবে তখন। সাক্ষাৎকার দেওয়ার আগে দেখিয়ে দিলেন, ‘ওই কোনা দিয়ে ছাদ বেয়ে পানি পড়ে। একাত্তরে দুবার বোমা মেরেছিল পাকিস্তানিরা। সংস্কার করা হয়েছে।’ তবু এই বাড়ি ছেড়ে কখনো যেতে চাননি সাদি ভাইয়েরা। এই বাড়িতে বাবার স্মৃতি। এখানেই মাকে নিয়ে থাকেন তখন। এর ফাঁকেই একবার বলে নিলেন মায়ের কথা। মায়ের হাতের রান্নার কথা। নিজের রান্নাপ্রীতির কথা। মাকে রান্না করে খাওয়াতে ভালোবাসেন। বুঝলাম, এই মানুষটার কাছে মা-ই তাঁর পৃথিবী। এখন মা নেই, তাই বুঝি মায়ের কাছেই যেতে চেয়েছেন তিনি।
এখন কি মাকে রান্না করে খাওয়াতে পারছেন, সাদি ভাই?
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
‘এসেছ? এসো। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’ এ কথা বলে সাদি মহম্মদ সোজা নিয়ে গেলেন তাঁর হেঁশেলে। বললেন, ‘কিছু রান্না বাকি রেখেছি। সরাসরি দেখলে রেসিপি লিখতে সুবিধা হবে তোমার।’
তখন আমি প্রথম আলোর প্রদায়ক। অফিস থেকে অ্যাসাইনমেন্ট বর্তায় আমার ঘাড়ে—সাদি মহম্মদ রান্না করবেন, সেই রেসিপি টুকে আনতে হবে। সঙ্গে ফটোগ্রাফার যাবেন ছবি তুলতে। শুনে আরেক প্রদায়ক অলকাও বলল, ‘আমাকে সঙ্গে নে প্লিজ!’ আমরা গেলাম মোহাম্মদপুরে। গোরস্থানের উল্টো পাশের রাস্তায় গিয়ে পুরোনো একটা বাড়ি খুঁজে পেতে সময় লাগল না। সেদিনই আমার কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদকে কাছ থেকে দেখা। গানের পাশাপাশি খুব ভালো রান্নাও যে করতেন তিনি, সেটা ওই দিন প্রথম টের পেলাম।
তিনি রান্না করতে করতে গল্প শুরু করলেন, ‘বুঝলে, লইট্টা মাছটা টাটকা কিনতে হয়। নইলে ফ্রাইটা ভালো হয় না। আমি দেখে বড় আর টাটকা মাছগুলো এনেছি। ফ্রাইটা ভালো হবে।’ ময়দায় গড়িয়ে এক চুলায় লইট্টা মাছ ভাজতে ভাজতে আরেক চুলায় বসালেন আলু-ঝিঙে-পোস্তর একটা তরকারি। সময় লাগবে বলে আচারি খাসির মাংসটা আমি আসার আগেই রান্না করে ফেলেছিলেন।
রান্না শেষ হলে সবাই মিলে খাবারের টেবিল সাজালাম—আমি, বন্ধু অলকা, সাদি ভাই ও তাঁর এক সহকারী। খাবারের ছবি তোলা হলো—ক্লিক ক্লিক ক্লিক। সেদিন দুপুরটা স্নিগ্ধ ছিল। রোদ নেই, বৃষ্টিও নেই। খোলা বারান্দার মতো জায়গায় খাবারের টেবিল। আলোর দিকটায় সাদি ভাই গাছপালা লাগিয়ে রেখেছেন। যদি স্মৃতি ধোঁকা না দেয় তাহলে মনে করতে পারি, একটা বড় ড্রামে ড্রাগন ফ্রুটধারী ক্যাকটাস গাছ ডালপালা মেলেছে। অবাক হলাম তখন। কেননা, ওই সময়টায় বাণিজ্যিকভাবে আমাদের দেশে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়নি। হয়তো সাদি ভাই শখ করে গাছটা লাগিয়েছেন।
সবাই মিলে খেতে বসলাম। সাদি ভাই যেই না আমার পাতে লইট্টা মাছ তুলে দিতে গেছেন, আমি বললাম, ‘আমি তো লইট্টা মাছ খাই না। কখনো খাইনি।’ তিনি একপ্রকার জোর করেই দিলেন, ‘আরে একটা খেয়ে দেখ, আমি নিশ্চিত তুই আরও খেতে চাইবি।’ ঠিকই তো, মুখে নিতেই বুঝলাম, এ তো অমৃত! আর আলু-ঝিঙে-পোস্তর ব্যঞ্জনটা যেন আজও মুখে লেগে আছে। খাসিটাও কম কী! বেড়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বল তো, আচারি খাসিটা কীভাবে রান্না করেছি?’ বললাম, ‘আচার দিয়ে।’ একগাল হেসে সাদি ভাই জবাব দিলেন, ‘শোনো, আচারি মাংস মানেই আচার দিয়ে মাংস রান্না নয়। আচারের মসলা দিয়ে মাংসটা রান্না করতে হয়। আচারে যেসব মসলা ব্যবহার করা হয়, সেগুলো দিয়েই মাংসটা রান্না করলে এ রকম স্বাদ হয়। আচার দেওয়া লাগে না।’
আরামের একটা আহারের পর সাদি ভাই নিয়ে গেলেন তাঁর শোবারঘরে। আমরা নিচে পাতলা গালিচার ওপর বসলাম। রান্নার রেসিপিগুলো ঠিক ঠিক টুকে নেওয়া হবে তখন। সাক্ষাৎকার দেওয়ার আগে দেখিয়ে দিলেন, ‘ওই কোনা দিয়ে ছাদ বেয়ে পানি পড়ে। একাত্তরে দুবার বোমা মেরেছিল পাকিস্তানিরা। সংস্কার করা হয়েছে।’ তবু এই বাড়ি ছেড়ে কখনো যেতে চাননি সাদি ভাইয়েরা। এই বাড়িতে বাবার স্মৃতি। এখানেই মাকে নিয়ে থাকেন তখন। এর ফাঁকেই একবার বলে নিলেন মায়ের কথা। মায়ের হাতের রান্নার কথা। নিজের রান্নাপ্রীতির কথা। মাকে রান্না করে খাওয়াতে ভালোবাসেন। বুঝলাম, এই মানুষটার কাছে মা-ই তাঁর পৃথিবী। এখন মা নেই, তাই বুঝি মায়ের কাছেই যেতে চেয়েছেন তিনি।
এখন কি মাকে রান্না করে খাওয়াতে পারছেন, সাদি ভাই?
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে