কফি চাষে সফল মোখলেছুর

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ৪১
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ১৮: ০২

তারাগঞ্জের নিভৃত পল্লিতে কফিগাছের বাগান করে বছরে লাখ টাকা আয় করছেন মোখলেছুর রহমান। বাড়ির পাশে করেছেন অ্যারাবিকা জাতের কফির আবাদ। বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে ফল। শখ হিসেবে শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে এই চাষ করে তিনি অন্যদের জোগাচ্ছেন অনুপ্রেরণা।

উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে সয়ার ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামে মোখলেছুরের বাড়ি। কাঁচা-পাকা পথ ধরে বাড়িতে পৌঁছে দেখি তিনি নেই। খোঁজ করতেই একজন দেখিয়ে দেন, ওই যে মোখলেছুর কফিবাগানে কাজ করছেন। কিছু দূর এগোতেই দেখা যায় গাছ থেকে কফি ফল তুলছেন তিনি।

মোখলেছুর বলেন, তিনি ২০১৬ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন পার্বত্য অঞ্চলে কফির চাষ হচ্ছে। তিনি ভাবেন, পার্বত্য অঞ্চলে এই চাষ হলে, তারাগঞ্জে হবে না কেন? পার্বত্য অঞ্চলের মতো তারাগঞ্জেও উঁচু জমি আছে। এই জমিতে হয়তো কফি চাষ করা সম্ভব। এই ভাবনা থেকেই তিনি ২০১৭ সালের মে মাসে চট্টগ্রামের জাহানারা গ্রিন এগ্রো ফার্মের মাধ্যমে ভারত থেকে অ্যারাবিকা জাতের কফির চারা এনে রোপণ করেন।

মোখলেছুরের ২৫ শতক জমিতে ৪৫০টি কফিগাছ আছে। এ চাষ করতে তাঁর ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। দুই বছর পর প্রতিটি গাছেই ফল আসে। ফলনও ভালো হয়। বর্তমানে প্রতি গাছে সাড়ে তিন কেজি করে কফি ফল পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো বিক্রি করছেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি হিসেবে। ইতিমধ্যে আড়াই লাখ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে। এ বছর গাছে যে পরিমাণ ফল আছে তা বিক্রি হবে আরও ৪ লাখ টাকা।

মোখলেছুর বলেন, ‘কফির গাছ থেকে বছরে একবার ফল পাওয়া যায়। কৃষি বিভাগের লোকজন প্রতিনিয়ত এসে পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষি সচিব মেসবাহুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ বাগানটি পরিদর্শন করেছেন। শখের বসে এ বাগান গড়েছি। ভালোই সাফল্য এসেছে। আরও এক একরে বাগান করার পরিকল্পনা করছি। আমার হাত ধরে এলাকায় ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৫টি বাগান এ বছর গড়ে উঠেছে।’

১৯৮৭ সালে জন্ম নেওয়া মোখলেছুর রাষ্ট্র বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। দুই সন্তানের এই জনক পেশাগত জীবনে প্রাণ আরএফল গ্রুপের দিনাজপুর জেলার শোরুম পরিদর্শক।

মোখলেছুরের সফলতা দেখে উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের আজিজার রহমানও কফির বাগান করেছেন। আজিজার বলেন, ‘কফি চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে মোখলেছুর। তার কফি চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও বাগান করেছি। মোখলেছুর সব সময় পরামর্শ দিচ্ছে। বাগান অনেক সুন্দর আছে।’

অনন্তপুর গ্রামের শরিয়ত আহম্মেদ বলেন, ‘মোখলেছুরের পরামর্শে অনেকেই কফি বাগান করছেন। আমিও এবার ১৫ শতাংশ জায়গায় বাগান করেছি। তাঁর কাছ থেকে চারা নিয়েছি। মোখলেছুর সময় পেলে এসে বাগান দেখে যান, পরামর্শ দেন। আশা করছি এটা থেকে আমার সংসারে বাড়তি আয় হবে।’

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কফি সাধারণত পাহাড়ি ফসল। উঁচু এবং যেখানে পানি জমে থাকে না এমন সমতল জমিতে চাষ করা যায়। তারাগঞ্জের মাটি বেলে-দোআঁশ হওয়ায় তা কফি চাষের উপযোগী।

বাণিজ্যিক চাষের জন্য প্রতি হেক্টরে আড়াই থেকে ৩ হাজার কফিগাছ রোপণ করা হয়। প্রতিটি গাছের মধ্যে ৫ থেকে ৭ ফুট দূরত্ব রাখতে হবে। রোপণের সময় পর্যাপ্ত কম্পোস্ট সার দিতে হয়। এরপর প্রয়োজন মোতাবেক রাসায়নিক স্যার ব্যবহার করতে হবে। কফিগাছ ৪০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বেড়ে উঠতে পারে। তবে ফসল তোলা সহজ করার জন্য গাছগুলো ৬ থেকে ৯ ফুট পর্যন্ত রেখে ছাঁটাই করা হয়। গাছ ২০ থেকে ৩০ বছর বাঁচে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম বলেন, ‘মোখলেছুর একজন সফল কফিচাষি। তিনি দেখিয়েছেন, শুধু পাহাড়ি এলাকায় নয় তারাগঞ্জের মাটিতেও কফি চাষ করা যায়। তাঁর বাগানের গাছে কফি ফল থোকায় থোকায় ঝুলছে। তাঁকে দেখে এলাকার চাষিরা কফিবাগান করছেন। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা করছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত