বেওয়ারিশ কুকুরের কামড় খাচ্ছে বছরে ৬ লাখ মানুষ

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪, ০৯: ৫৯
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪, ১১: ১৭

রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় রাত একটু গভীর হলেই বেড়ে যায় বেওয়ারিশ কুকুরের বিচরণ। গভীর রাতে এসব কুকুরের চিৎকার-চেঁচামেচি এখন নিয়মিত ঘটনা। অচেনা মানুষ দেখলেই তেড়ে যায় এরা। কাউকে কাউকে কামড়ও দিয়ে বসে। এই অবস্থা শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, শুধু ২০২৩ সালে সারা দেশে ৬ লাখের বেশি মানুষ কুকুরের কামড় খেয়ে জলাতঙ্ক রোগের টিকা নিয়েছে। ধারণা করা হয়, কুকুরের কামড় খাওয়া মানুষের সংখ্যা আরও বেশি। এই সময়ে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৪৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কুকুরকে টিকাদান ও বন্ধ্যত্বকরণ কর্মসূচিতে ঢিল পড়ায় বেড়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমণ। ২০১২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে কুকুর, বিড়াল, বেজি, শিয়াল, বানরসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী ৩৪ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি মানুষকে কামড়েছে। এই সময়ে কুকুরের কামড়ে মারা গেছে ৭৭১ জন। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় একজন বৃদ্ধাকে বেওয়ারিশ কুকুর কামড়ে রক্তাক্ত করেছে। এর আগে গত জানুয়ারিতে একটি বাচ্চা কুকুরের আঁচড়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের সিডিএ বায়তুল আমিন জামে মসজিদের ইমামের মৃত্যু হয়।

সম্প্রতি রাজধানীর আজিমপুর সরকারি কলোনির বি জোন ও আশপাশের এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ২০-২৫টি কুকুর ঘোরাঘুরি করছে। কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রাতে এসব কুকুরের চিৎকারে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি কলোনির এক বাসিন্দা জানান, তাঁদের কলোনিতে আট-নয়টি কুকুর সারাক্ষণ ঘোরাঘুরি করে। নতুন কেউ কলোনিতে ঢুকলেই তেড়ে যায় এসব কুকুর।

কুকুর টিকাদান কর্মসূচির তথ্যমতে, সারা দেশে কুকুরের সংখ্যা ১৬ লাখ ৯২ হাজার ৩৬২ টি। রাজধানীতেই আছে ৭০ হাজারের বেশি কুকুর। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আছে ৩৭ হাজার ৬১১ টি। আর উত্তর সিটিতে আছে ৩৩ হাজার ২৮৭টি। রাজধানীতে ২০২২ সালে দুজন জলাতঙ্ক রোগী শনাক্ত হয়। ওই বছর এই শহরে কুকুরের কামড় খেয়ে টিকা নিয়েছে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। গত বছর কোনো জলাতঙ্ক রোগী শনাক্ত না হলেও টিকা নিয়েছে ৬৩ হাজার ২৩২ জন।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হওয়ায় এখন টিকাদানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আগে কুকুরে কামড়ালে অনেকেই টিকা নিত না। এতে জলাতঙ্ক হয়ে মারা যেত। কিন্তু এখন অনেকেই টিকা নিচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্য বলছে, স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রাণিসম্পদ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ২০১১-১২ সাল থেকে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূলে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচি পরিচালনা করছে অধিদপ্তর। কর্মসূচির শুরু থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সারা দেশে টিকাদানের আওতায় এসেছে ১৬ লাখ ৯২ হাজার ৩৬২টি কুকুর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কুকুরকে টিকাদানের সঙ্গে কুকুরে কামড়ানোর পরিসংখ্যানের একটি যোগসূত্র রয়েছে। কর্মসূচির শুরু থেকেই যে বছর কুকুরের টিকাদান কম হয়েছে, সে বছরই কামড়ানোর হার বেড়েছে। দেশে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কুকুরকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। ওই বছর ৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৫৯টি কুকুরকে টিকা দেওয়া হয়। এর আগের বছরও সাড়ে ৪ লাখের বেশি কুকুরকে টিকা দেওয়া হয়। এর ভালো ফলাফলও পাওয়া গেছে। আগের ও পরের বছরগুলোর তুলনায় এই দুই বছরে কমসংখ্যক মানুষ কুকুরের কামড় খেয়েছে। একই চিত্র দেখা যায় ২০২১ সালেও। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে টিকাদানে যেমন ঢিল পড়েছিল, ঘরবন্দী থাকায় মানুষও কম কুকুরের কামড় খেয়েছে। ২০২১ সালে ৪ লাখের বেশি কুকুরকে টিকা দেওয়া হয়। ওই বছর কুকুরের কামড় খেয়েছে পৌনে ৩ লাখ মানুষ। কিন্তু এরপর আবার টিকাদান কর্মসূচিতে ঢিল পড়ে। বেড়ে যায় কুকুরে কামড়ানোর হার।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত ৯০৯টি বেওয়ারিশ কুকুরকে বন্ধ্যত্বকরণ ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০টি।

টিকাদানে ধীরগতির বিষয়ে দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁদের জনবলের তীব্র সংকট। ১০টি অঞ্চলে তিনজন ভেটেরিনারি কর্মকর্তা রয়েছেন। ১০টি পরিদর্শকের পদে কর্মরত আছেন তিনজন। লোকবল নিয়োগে চেষ্টা চলছে।

ঢাকা উত্তর সিটির অবস্থা আরও খারাপ। সিটি করপোরেশনের জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, তাঁদের ১০টি অঞ্চলে কোনো ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ও পরিদর্শক নেই। এই কর্মসূচির জন্য রাজধানীর কল্যাণপুরে দুই বিঘা জমি নেওয়া হয়েছে। লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জলাতঙ্ক রোগ নির্মূল কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এস এম গোলাম কায়সার আজকের পত্রিকাকে বলেন, জলাতঙ্ক রোগ নির্মূলে দেশের উপজেলা পর্যায়ে বিনা মূল্যে টিকা দেওয়া হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছাড়াও চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত