হুব্বা: সবকিছু ছাপিয়ে জ্বলজ্বলে মোশাররফের অভিনয়

মোস্তফা মনন
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১১: ২৭
Thumbnail image

হুব্বা কি ডাব্বা মারবে, নাকি ছক্কা? হুব্বা কেমন সিনেমা? এই সিনেমায় ত্রিফলা রয়েছে। একটি হলো, পশ্চিমবঙ্গের গ্যাংস্টার হুব্বা শ্যামলের গল্প থেকে নেওয়া; দ্বিতীয়টি হলো, পরিচালনা করেছেন অত্যন্ত গুণী ও সমাদৃত পরিচালক ব্রাত্য বসু এবং তৃতীয় ফলা হলো, নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। তাহলে কেমন হলো ত্রিফলার মিশ্রণ? আলোচনা করা যাক।  

ভালো লাগল
হুগলির গ্যাংস্টার ছিল হুব্বা শ্যামল, সিনেমায় হয়ে গেছে হুব্বা বিমল। সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। মোশাররফ করিম যখন এন্ট্রি নেন, তখন সিনেমা হলের ৪০০-র  মতো দর্শক হইহুল্লোড় করে ওঠে। ভালো ছিল সিনেমার লোকেশন এবং নির্মাণকৌশল। ক্যামেরা মুভমেন্ট করে লং টেকে দৃশ্যের গল্প, গল্পের পারিপার্শ্বিকতা, চরিত্রগুলো মুভমেন্ট ঠিকঠাকমতো করতে পেরেছে। সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, দৃশ্যে আবহের সঙ্গে বেশ মানানসই। দৃশ্য থেকে আরেক দৃশ্যে যাওয়ার ট্রানজিকশনগুলো বেশ অর্থবহ। কিছু কিছু দৃশ্যের কমিক টাইমিং ছিল অসাধারণ। গোয়েন্দা অফিসার চরিত্রে ইন্দ্রনীল ভালো করেছেন। আরও ভালো করেছে, মানসিক সমস্যায় ভোগা ইন্দ্রনীলের স্ত্রী। ছোট্ট চরিত্র, কিন্তু ভালো। এ ছাড়া সেই সময়ের জনপ্রিয় গানগুলো কোথাও না কোথাও বাজতে শোনা গেছে, চরিত্ররাও গাইছিল। গ্যাংস্টার ধরনের সিনেমা দেখত হুব্বা। সেখানে থেকে সে কিছু পরিকল্পনাও রপ্ত করে। এই সব মিলিয়ে ২০০০ সালের আশপাশের সময়টা সতর্কতার সঙ্গে দেখানো হয়েছে।   

খারাপ লাগল
সবচেয়ে বড় ঝামেলা ছিল চিত্রনাট্যে। হুব্বার চিত্রনাট্য নড়বড়ে এবং এলোমেলো। প্রথম ২০-২৫ মিনিট দারুণ লেগেছে। সেকেন্ড অ্যাক্টে গিয়ে গল্প কিছুটা ঝুলতে থাকে। লন্ডনের ঝুলন্ত ঘণ্টাখানার মতো ধীরে ধীরে নেতিয়ে পড়তে পড়তে থেমে যায় তৃতীয় অ্যাক্টে গিয়ে। শেষ দিকে গল্প আর চাঙা হয়নি। গল্পের ক্লাইমেক্সও জমেনি। বালক হুব্বার গল্প দেখানোর পর যুবক হুব্বার গল্পটা যখনই আসে, তখনই একটা ছোট ধাক্কা লাগে। যেখানে মোশাররফ করিমের অতি দানবীয় অভিনয় দেখে ফেলেছি, সেখানে এই হুব্বা চরিত্রে অন্য কাউকে গ্রহণ করা কষ্টকর। আরেকটা দুর্বল দিক ছিল, গোয়েন্দা অফিসার ইন্দ্রনীলের বয়ান। হুব্বাকে ধরার সময় তার সহকারীর সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে তোতা পাখির মতো।  

যেমন ছিলেন মোশাররফ
হুব্বা চরিত্রের পা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত ছিল মোশাররফ করিমের নিয়ন্ত্রণে। তিনি জানেন, কীভাবে একটি চরিত্রকে তাজা এবং গতিশীল করতে হয়। সিনেমায় তাঁর চরিত্রটা একটু লাউড। অঙ্গভঙ্গি ব্যাপক। তাঁর হাঁটা, চলা, কথা বলা, হাসি, মুহূর্তে মুহূর্তে মুখের অভিব্যক্তি বদল করা—সব ছিল নিখুঁত। বিশেষ করে মোশাররফের চোখের ব্যবহার ছিল বহুমাত্রিক। তাঁর সংলাপ বলার সময় শারীরিক ভাষা, সংলাপ প্রক্ষেপণ, পজের ব্যবহার, কোথায় থামতে হবে, কোন শব্দকে জোড় দিতে হবে, কখন দ্রুত বলবে, কখন বলার পর চুপ থাকবে—এ সবকিছুই ছিল ঢাকাই জামদানির মতো নিখুঁত কারুকাজ। তাঁর কমিক সেন্স নিয়ে আলাদা গবেষণা হতে পারে। হুব্বা সিনেমাটা অনেক জায়গায় ছক্কা মারলেও কিছু কিছু জায়গায় ডাব্বা মেরেছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে একজন অভিনেতা পুরো সিনেমাজুড়ে জ্বলজ্বল করছে।
 
লেখক: নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত