সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
আমার জন্মের ঠিক দুই বছর আগের গল্পগুলো শুনেছিলাম বড়দের কাছে। সময়টা ১৯৮৮ সাল। সেবার নাকি স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যাগুলোর একটি দেখেছিল এ দেশের মানুষ। মুরব্বিরা গল্প করতেন ‘অষ্টআশির’ বন্যার। কারও জন্মতারিখ মনে করতে না পারলে বলতেন, ‘অষ্টআশির’ বন্যার আগে বা পরে কিংবা সেই বছরে। অথবা ‘অষ্টআশির’ বন্যার সময় কেউ হাঁটে কিংবা হামাগুড়ি দেয়।
তবে সবচেয়ে যে কথাটা শুনে ভালো লেগেছিল তা হলো, মানুষের জন্য মানুষের এগিয়ে আসা। ওই বছর সারা দেশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের ১৫-২০ দিন ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে হয়েছিল মানুষকে। বৃষ্টির দোসর ছিল একই সময়ে প্রধান তিনটি নদীর পানি প্রবাহের ঘটনা, যা ছিল নদীগুলোর বহনক্ষমতার অতিরিক্ত। রাজধানী ঢাকাসহ ডুবে গিয়েছিল পুরো দেশের শতকরা ৬০ ভাগের বেশি এলাকা। বন্যায় আক্রান্ত মানুষের পাশে তখনো শিক্ষার্থী আর সাধারণ মানুষেরা দাঁড়িয়েছিল। জেনেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এসে অনেকেই নিজ হাতে রুটি বানিয়েছেন ত্রাণের খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করার জন্য।
প্রায় একই রকম দৃশ্য কি আমরা ২০২৪ সালে এসে দেখছি না? এবারও ভয়াবহ বন্যায় যখন দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল নিমজ্জিত, তখন ওই একই টিএসসিতে হাজারো মানুষ জমায়েত হচ্ছেন ত্রাণ দিতে, শিক্ষার্থীরা অর্থ জমা করছেন তহবিলে, তাঁরা গুছিয়ে নিচ্ছেন নানা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ত্রাণ সাহায্য, পৌঁছে দিচ্ছেন বন্যাকবলিত এলাকায়। অনেকে আছেন উদ্ধারকাজে ব্যস্ত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও সব সময়কার মতো বন্যার্তদের সাহায্য করে প্রশংসা পাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে বলছে, এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখেনি। দেখবে কী করে? আগে তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এত দাপট ছিল না! আটাশির বন্যার কথা যেমন শুনেছি, তেমনি নিজ চোখে দেখেছি ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০২২ সালে মনে রাখার মতো ভয়াবহ বন্যাগুলো। ১৯৮৮ সালে ছিল না ইন্টারনেট, ১৯৯৮ সালে ছিল না ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, ২০০৪ সালে ছিল না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপকতা। তখন মূলধারার গণমাধ্যম—রেডিও, টিভি চ্যানেল, পত্রপত্রিকা—এগুলোই ছিল তথ্যের উৎস। এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যোগাযোগটাও আজকের মতো এত সহজ ছিল না। সে সময় মানুষ ওই স্বল্প তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যে যেভাবে যেখান থেকে যতটুকু পেরেছেন, বন্যায় আক্রান্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, ওই সময়টায় ফেসবুকের মতো অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থাকলে তখনো কেউ ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলে ‘ভাইরাল’ হতে পারতেন। আবার এই যে এখন সারা দেশের মানুষ একযোগে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে আর এসব খবর সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে, সেটাও তখন সম্ভব হতো, শুধু ওই ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থাকলেই। আরেকটি কথা সত্য যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণেই সারা দেশের মানুষ খুব দ্রুত বন্যার খবরাখবর পাচ্ছে, জনমত সংগঠিত করতে পারছে, মতামত অনুযায়ী উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছে এবং সে অনুযায়ী দ্রুত উদ্ধারকাজ ও ত্রাণসহায়তা করতে পারছে। পাঠক তো জানেনই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুধু ‘গুজব’ ছড়ায় না, কিংবা কেউ অযথা ‘ভাইরাল’ হয় না, ভালো কাজও হয়!
২০২২ সালের বন্যায়ও সারা দেশ থেকে সিলেট অঞ্চলে অর্থ সাহায্য ও ত্রাণ পৌঁছে গিয়েছিল। তখনো মানুষ সোচ্চার ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং সরাসরি। তবে ২০২৪ সালে এসে কেন অনেকে বলছেন যে এর আগে কোনো বন্যায় সারা দেশের মানুষকে এ রকম অভাবনীয়ভাবে এগিয়ে আসতে দেখেননি? এর একটা কারণ হতে পারে, আন্দোলনের যে ঢেউ গত জুলাই মাসে শুরু হয়েছিল, তা এখনো বইছে। শিক্ষার্থীরা যে স্লোগান দিয়েছিল—‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’—সেই আগুন নেভেনি এখনো।
বসন্তে দ্বিগুণ হওয়ার হাওয়া বলুন আর রক্তের আগুন বলুন, দুটোর গতিই প্রবলভাবে সারা দেশের মানুষকে জাপটে ধরেছে। আবার এটাও অনেকে বুঝে নিচ্ছে যে সদ্যোজাত এই শিশু সরকারকে সবাই মিলে সাহায্য করতে হবে। তাই জনগণ তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যা আক্রান্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে এবং অন্যান্য বারের চেয়ে তাদের সংখ্যাটা এবার হয়তো কয়েক গুণ বেশি।
মনে পড়ে, ২০০৪ সালের বন্যায় একটি চ্যানেলে বারবার আমাদের এলাকার একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হতো—বন্যার্তদের সাহায্য করছে এলাকার মানুষ, আবহসংগীত ছিল ভূপেন হাজারিকার গাওয়া ‘মানুষ মানুষের জন্যে’ গানটি। মাইকিং করা হতো সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে, ওই একই গান বাজিয়ে। ২০২৪ সালে এ কাজটা অনেক বেশি সহজ করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। মানুষ তাহলে কেন এগিয়ে আসবে না মানুষের জন্য? এটাই তো মানুষের ‘মানুষ’ হওয়ার বৈশিষ্ট্য।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আমার জন্মের ঠিক দুই বছর আগের গল্পগুলো শুনেছিলাম বড়দের কাছে। সময়টা ১৯৮৮ সাল। সেবার নাকি স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যাগুলোর একটি দেখেছিল এ দেশের মানুষ। মুরব্বিরা গল্প করতেন ‘অষ্টআশির’ বন্যার। কারও জন্মতারিখ মনে করতে না পারলে বলতেন, ‘অষ্টআশির’ বন্যার আগে বা পরে কিংবা সেই বছরে। অথবা ‘অষ্টআশির’ বন্যার সময় কেউ হাঁটে কিংবা হামাগুড়ি দেয়।
তবে সবচেয়ে যে কথাটা শুনে ভালো লেগেছিল তা হলো, মানুষের জন্য মানুষের এগিয়ে আসা। ওই বছর সারা দেশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের ১৫-২০ দিন ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে হয়েছিল মানুষকে। বৃষ্টির দোসর ছিল একই সময়ে প্রধান তিনটি নদীর পানি প্রবাহের ঘটনা, যা ছিল নদীগুলোর বহনক্ষমতার অতিরিক্ত। রাজধানী ঢাকাসহ ডুবে গিয়েছিল পুরো দেশের শতকরা ৬০ ভাগের বেশি এলাকা। বন্যায় আক্রান্ত মানুষের পাশে তখনো শিক্ষার্থী আর সাধারণ মানুষেরা দাঁড়িয়েছিল। জেনেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এসে অনেকেই নিজ হাতে রুটি বানিয়েছেন ত্রাণের খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করার জন্য।
প্রায় একই রকম দৃশ্য কি আমরা ২০২৪ সালে এসে দেখছি না? এবারও ভয়াবহ বন্যায় যখন দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল নিমজ্জিত, তখন ওই একই টিএসসিতে হাজারো মানুষ জমায়েত হচ্ছেন ত্রাণ দিতে, শিক্ষার্থীরা অর্থ জমা করছেন তহবিলে, তাঁরা গুছিয়ে নিচ্ছেন নানা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ত্রাণ সাহায্য, পৌঁছে দিচ্ছেন বন্যাকবলিত এলাকায়। অনেকে আছেন উদ্ধারকাজে ব্যস্ত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও সব সময়কার মতো বন্যার্তদের সাহায্য করে প্রশংসা পাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে বলছে, এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখেনি। দেখবে কী করে? আগে তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এত দাপট ছিল না! আটাশির বন্যার কথা যেমন শুনেছি, তেমনি নিজ চোখে দেখেছি ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০২২ সালে মনে রাখার মতো ভয়াবহ বন্যাগুলো। ১৯৮৮ সালে ছিল না ইন্টারনেট, ১৯৯৮ সালে ছিল না ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, ২০০৪ সালে ছিল না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপকতা। তখন মূলধারার গণমাধ্যম—রেডিও, টিভি চ্যানেল, পত্রপত্রিকা—এগুলোই ছিল তথ্যের উৎস। এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যোগাযোগটাও আজকের মতো এত সহজ ছিল না। সে সময় মানুষ ওই স্বল্প তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যে যেভাবে যেখান থেকে যতটুকু পেরেছেন, বন্যায় আক্রান্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, ওই সময়টায় ফেসবুকের মতো অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থাকলে তখনো কেউ ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলে ‘ভাইরাল’ হতে পারতেন। আবার এই যে এখন সারা দেশের মানুষ একযোগে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে আর এসব খবর সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে, সেটাও তখন সম্ভব হতো, শুধু ওই ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থাকলেই। আরেকটি কথা সত্য যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণেই সারা দেশের মানুষ খুব দ্রুত বন্যার খবরাখবর পাচ্ছে, জনমত সংগঠিত করতে পারছে, মতামত অনুযায়ী উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছে এবং সে অনুযায়ী দ্রুত উদ্ধারকাজ ও ত্রাণসহায়তা করতে পারছে। পাঠক তো জানেনই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুধু ‘গুজব’ ছড়ায় না, কিংবা কেউ অযথা ‘ভাইরাল’ হয় না, ভালো কাজও হয়!
২০২২ সালের বন্যায়ও সারা দেশ থেকে সিলেট অঞ্চলে অর্থ সাহায্য ও ত্রাণ পৌঁছে গিয়েছিল। তখনো মানুষ সোচ্চার ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং সরাসরি। তবে ২০২৪ সালে এসে কেন অনেকে বলছেন যে এর আগে কোনো বন্যায় সারা দেশের মানুষকে এ রকম অভাবনীয়ভাবে এগিয়ে আসতে দেখেননি? এর একটা কারণ হতে পারে, আন্দোলনের যে ঢেউ গত জুলাই মাসে শুরু হয়েছিল, তা এখনো বইছে। শিক্ষার্থীরা যে স্লোগান দিয়েছিল—‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’—সেই আগুন নেভেনি এখনো।
বসন্তে দ্বিগুণ হওয়ার হাওয়া বলুন আর রক্তের আগুন বলুন, দুটোর গতিই প্রবলভাবে সারা দেশের মানুষকে জাপটে ধরেছে। আবার এটাও অনেকে বুঝে নিচ্ছে যে সদ্যোজাত এই শিশু সরকারকে সবাই মিলে সাহায্য করতে হবে। তাই জনগণ তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যা আক্রান্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে এবং অন্যান্য বারের চেয়ে তাদের সংখ্যাটা এবার হয়তো কয়েক গুণ বেশি।
মনে পড়ে, ২০০৪ সালের বন্যায় একটি চ্যানেলে বারবার আমাদের এলাকার একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হতো—বন্যার্তদের সাহায্য করছে এলাকার মানুষ, আবহসংগীত ছিল ভূপেন হাজারিকার গাওয়া ‘মানুষ মানুষের জন্যে’ গানটি। মাইকিং করা হতো সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে, ওই একই গান বাজিয়ে। ২০২৪ সালে এ কাজটা অনেক বেশি সহজ করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। মানুষ তাহলে কেন এগিয়ে আসবে না মানুষের জন্য? এটাই তো মানুষের ‘মানুষ’ হওয়ার বৈশিষ্ট্য।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে