আয়ের চেয়ে বেশি সম্পদ সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর

রিমন রহমান, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ২৪
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ০৯

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নিজের এবং স্ত্রীর নামে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ২৪ জানুয়ারি তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র অনুমোদন হয়। তদন্ত কর্মকর্তা এখন যেকোনো সময় এটি আদালতে দাখিল করবেন।

রমজান আলী ২০১৯ সালের দিকে পশ্চিম রেলের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বেড়ার ভিটাপাড়া গ্রামে। পরে পশ্চিম রেল থেকে সরিয়ে খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক করা হয়েছিল তাঁকে। এ ছাড়া আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন ডুয়েল গেজ প্রকল্পেরও পরিচালক ছিলেন রমজান আলী। ২০২০ সালের আগস্টে রমজান আলী ও তাঁর স্ত্রী আগা দিলরুবা পারভীন ইলোরার বিরুদ্ধে দুদক দুটি মামলা করলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে তাঁকে প্রকল্প পরিচালকের পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর তাঁকে রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (প্রকৌশল) পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। পদটি ছিল তৃতীয় গ্রেডভুক্ত।

তবে গত ৩০ ডিসেম্বর রমজান আলীকে তৃতীয় গ্রেডের পদমর্যাদায় চলতি দায়িত্বে সরকারি রেল পরিদর্শক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রেলওয়েতে এই পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রেলের নতুন লাইন কিংবা নতুন বগি সরকারি রেল পরিদর্শক পরিদর্শন না করা পর্যন্ত তা ব্যবহারের সুযোগ নেই। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা কর্মকর্তাকে পদায়ন করায় খোদ রেলের কর্মকর্তারাই বিস্ময় প্রকাশ করছেন। বিস্মিত দুদকও।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, রমজান আলীর বিরুদ্ধে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ২৮৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। আর তাঁর স্ত্রী দিলরুবা পারভীন ইলোরার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮ হাজার ৬৫৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদক দেখেছে, ইলোরার নামে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক তিন কাঠা জমি কেনা হয়েছে। বর্তমান বাজারমূল্য ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৩০০ টাকা। বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের অন্য আরেকটি প্লটে আরও তিন কাঠা জমি কেনা হয়েছে ইলোরার নামে। এর বর্তমান বাজার মূল্য ২৬ লাখ টাকা।

এ ছাড়া জামালপুরের সিংজানি মৌজায় ৭৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০৭ টাকা মূল্যের ৪ শতাংশ জমি আছে। একই মৌজায় আরও ৬ শতাংশ জমি কিনে পাঁচতলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছেন রমজান আলী। পাবনার সরিষাফরিদ মৌজায় ২১ শতাংশ জমি রয়েছে রমজানের স্ত্রী ইলোরার নামে। রমজান ও ইলোরার নামে-বেনামে কয়েকটি ব্যাংকে অর্থ জমা রয়েছে। এ ছাড়া স্বর্ণালংকার, দামি আসবাবপত্র ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রীও রয়েছে তাঁদের।

দুদক অনুসন্ধানে আরও দেখেছে, রেল কর্মকর্তা রমজান আলী নিজের নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এইচ ব্লকে তিন কাঠা জমিতে আটতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়িটির বর্তমান মূল্য এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। রমজান আলী একটি প্রাইভেট কার ব্যবহার করেন। এর দাম ১২ লাখ টাকা। বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য বৈধ খাতের আয় থেকে পারিবারিক সব খরচ বাদ দিলে তাঁর হাতে জমা থাকার কথা মাত্র ২৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫০ টাকা। বাড়তি ২ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ২৮৬ টাকার সম্পদ তিনি অবৈধভাবে অর্জন করেছেন বলে দুদক অনুসন্ধানে পেয়েছে।

রমজানের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকলে সেসব নিয়ে অনুসন্ধান করে দুদক। অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট দুদকের উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিক রেল কর্মকর্তা রমজান আলী ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন। তিনি একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও ছিলেন। এই মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন হয়েছে ২৪ জানুয়ারি।

রমজান আলী এ মামলায় জামিন নিয়ে আছেন। তবে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম কে এম ইমরুল কায়েশ রমজানের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আটতলা বাড়িটি ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমজান আলীর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বকর সিদ্দিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রেল কর্মকর্তা রমজান আলী ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তদন্তে এসবের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই দুদকের প্রধান কার্যালয় চার্জশিট অনুমোদন করেছে।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রমজান আলীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও ধরেননি। সাড়া দেননি এসএমএস পাঠানো হলেও। তাই এ বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত