নির্মাণে নারীর পদচারণ

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২২, ০৬: ৪৩
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ০৯: ৩৯

প্রথম নারী নির্মাতা:  বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তির প্রায় ১৩ বছর পরে ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়েছিল। এটিই এ দেশের প্রথম নারী চিত্রনির্মাতা নির্মিত চলচ্চিত্র। সেই নির্মাতার নাম রেবেকা। বাংলাদেশের প্রথম নারী পরিচালক। প্রকৃত নাম মনজন আরা বেগম। বিন্দু থেকে বৃত্ত পরিচালনা করলেন ১৯৭০ সালে। নিজেকে কেবল একজন নারী নয় বরং মানুষ হিসেবেই ভেবেছেন সব সময়।

মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে করেছেন রাজনীতি। তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করছেন আরেক নারী নির্মাতা মেহজাদ গালিব। মেহজাদ বলেন, ‘রেবেকা আমাদের গর্ব। সত্তরের দশকে নারীর চলার পথ একবারেই মসৃণ ছিল না। যাঁরা চলচ্চিত্রে কাজ করতেন, তাঁদের ভিন্ন চোখে দেখা হতো। সেই সময়ে রেবেকা নির্মাণ করলেন একটি নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্র। নারী পরিচালক হিসেবে আমার কাছে রেবেকা একটি অনুপ্রেরণার নাম।

আমি মনে করি, নারী নির্মাতাদের পথিকৃৎ হিসেবে তাঁর জীবনসংগ্রাম, চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সেই সময় চলচ্চিত্র অঙ্গনে তাঁর অবদান নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি। আমার তৈরি তথ্যচিত্রটিতে আমি রেবেকার ব্যক্তিগত জীবন, চলচ্চিত্রজীবন এবং শিল্পসত্তাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’ প্রামাণ্যচিত্রটির নাম ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত: একজন বকুলের আখ্যান’। শিগগিরই এর শুটিং শেষ হবে। রেবেকা এখন বেঁচে নেই। ২০০৬ সালে মারা গেছেন তিনি। 

NARGIS-AKTERচলচ্চিত্রে এগিয়ে নারগিস আক্তার: নারী নির্মাতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন নারগিস আক্তার—৮টি। তাঁর পরিচালিত ‘মেঘলা আকাশ’, ‘মেঘের কোলে রোদ’, ‘চার সতীনের ঘর’ সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। নারগিস আক্তার বহু টিভি নাটকও পরিচালনা করেছেন। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। নারগিস আক্তার বলেন, ‘প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ আর সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই আমি শুটিং ফ্লোরে দাঁড়িয়েছি। প্রথম সিনেমায় আমার সঙ্গে ৪৬ জন পুরুষ ক্রু কাজ করেছেন। আমি একাই নারী ছিলাম। আমি তাঁদের ডিরেকশন দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করেছি। আমার প্রথম সিনেমা ‘মেঘলা আকাশ’ ছয়টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার পায়। সে বছর ৪০টা চলচ্চিত্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়েছে। ৩৯টা ছিল পুরুষ নির্মাতার সিনেমা। আমি মোট আটটি সিনেমা নির্মাণ করেছি। এর মধ্যে তিনটি সিনেমার প্রযোজক ছিলাম আমি। প্রযোজকেরা সাধারণত নারী নির্মাতাকে দিয়ে সিনেমা নির্মাণ করতে চান না। তাঁরা ধরেই নেন নারীরা দুর্বল, কম মেধাবী, ধীরগতিতে কাজ করেন। তাই নারীদের কোণঠাসা করে রাখা হয়। ফলে নারীরা নির্মাণে আগ্রহ হারাচ্ছেন।’  নারী নির্মাতাদের মাঝে সামিয়া জামান, শবনম ফেরদৌসী, শামীম আকতার, ফৌজিয়া খান, শাহনেওয়াজ কাকলী, রওশন আরা নিপা, রুবাইয়াত হোসেন, জেসমিন আক্তার নদী, মারিয়া তুষার সিনেমা নির্মাণ করে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছেন। রুবাইয়াতের ‘শিমু’ সিনেমাটি মুক্তি পাবে ১১ মার্চ। মুক্তির অপেক্ষায় আছে শবনম ফেরদৌসী পরিচালিত ‘আজব সুন্দর’।

চয়নিকা চৌধুরীটেলিভিশনে এগিয়ে চয়নিকা: টেলিভিশন নাটক নির্মাণে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে চয়নিকা চৌধুরী। নাট্যজগতে নারী নির্মাতা হিসেবে ৪ শতাধিক নাটক পরিচালনা করেছেন তিনি। নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র ‘বিশ্বসুন্দরী’। ৮টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে এই সিনেমা। প্রস্তুতি শুরু করেছেন দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘প্রহেলিকা’ নির্মাণের। চয়নিকা বলেন, ‘আমি যদি মনে করি, আমি এই কাজটি করব, তাহলে আমি সেটা করি। যত্ন এবং ভালোবাসা যদি মনের মধ্যে থাকে, আন্তরিকতা যদি থাকে, তাহলে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। হয়তো অনেক বিপদ আসবে, কিন্তু ইচ্ছাশক্তিটা যদি প্রখর হয়, তাহলে মানুষ তার লক্ষ্যে পৌঁছাবে নিশ্চিত।’ 
টিভি নাটক নির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছেন এমন নির্মাতাদের মধ্যে রয়েছেন নিমা রহমান, নুজহাত আলভী আহমেদ, মতিয়া বানু শুকু, রোকেয়া প্রাচী, শ্রাবণী ফেরদৌস, প্রীতি দত্ত, ফাহমিদা ইরফান, রোকা নোশিন নাওয়ার প্রমুখ।

Suchondaঅভিনেত্রী থেকে নির্মাতা: জনপ্রিয় অনেক অভিনেত্রীই নাম লিখিয়েছেন নির্মাতার খাতায়। মেধার প্রমাণ দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন নির্মাতা হিসেবে। এই তালিকায় আছেন রোজী আফসারী ‘আশা নিরাশা’ (১৯৮৬), সুজাতা ‘অর্পণ’ (১৯৮৮), সুচন্দা ‘সবুজ কোট কালো চশমা’ (১৯৯৯) ও ‘হাজার বছর ধরে’ (২০০২), মৌসুমী ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ (২০০৩) ও ‘মেহের নিগার’ (২০০৫), কবরী ‘আয়না’ (২০০৬), মেহের আফরোজ শাওন ‘কৃষ্ণপক্ষ’ (২০১৬), তানিয়া আহমেদ ‘ভালোবাসা এমনই হয়’ (২০১৭)। মুক্তির অপেক্ষায় আছে কবরীর ‘এই তুমি সেই তুমি’, রোজিনা ‘ফিরে দেখা’, অরুণা বিশ্বাস ‘অসম্ভব’, হৃদি হক ‘১৯৭১ সেই সব দিন’। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত