রোজার বাজারে সংযমী ক্রেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩, ০৯: ৪১

সপ্তাহ পেরোলেই শুরু হচ্ছে রমজান। এ নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে সারিবদ্ধভাবে সাজানো আছে ছোলা, বেসন, বুটের ডালসহ রমজানের পণ্য। কিন্তু ক্রেতারা এবার বেশ সংযমী।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ক্রেতাদের অনেকেই রোজার পণ্য কিনছেন। তবে তা পরিমাণে খুব বেশি নয়। 
কারওয়ান বাজারে মালপত্র আনা-নেওয়ার কাজ করেন মুরাদ। তাঁর পর্যবেক্ষণ, বাজারে আসা প্রতি ১০ জনের ৩ জনই রমজানের পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর এই পর্যবেক্ষণের সত্যতাও মিলেছে কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে।

সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গতকাল কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক রুহুল আমিন। রমজান উপলক্ষে মুড়ি, ছোলা, ডাল, তেল, সেমাইসহ বিভিন্ন পণ্য কিনেছেন তাঁরা। রুহুল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অফিস স্টাফদের পরিবারকে আমরা রোজার পণ্য দেব। আমাদের অফিসে ৯ জন স্টাফ আছে। অফিস থেকেই এই টাকা দিয়েছে। প্রতিবছর আমরা এই উদ্যোগ নিয়ে থাকি।’

কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি ছোলা ৮০-৮৫ টাকা এবং বেসন ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে গতকাল। এই বাজারের জব্বার স্টোরের মালিক আবদুল জব্বার বলেন, ছোলার পর্যাপ্ত মজুত আছে। দাম কিছুদিন আগেও ৯০ টাকা ছিল। এখন কিছুটা কমেছে। রমজানের আগে ছোলার দাম আরও কমতে পারে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।

এদিকে রমজানের আগে বেড়ে গেছে টমেটো, শসা ও লেবুর দাম। টমেটো প্রতি কেজি ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসা প্রতি কেজি ৩০ টাকা এবং লেবুর হালি ৪০-৬০ টাকা। মরিচের দাম কিছুটা কমে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে রমজানের আগেই বেড়ে গেছে বেগুণের দাম। বেগুন বর্তমানে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জমে উঠেছে ফলের বাজারও। বাজারে কমলা, তরমুজ, আপেল, মাল্টা, পেয়ারা, আনারস, ডালিমসহ বিভিন্ন ফল কিনতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ক্রেতারা। ফল বিক্রেতারা বলছেন, ফলের বাজারের এমন ক্রেতার ভিড় স্বাভাবিক। এখনই উপলক্ষে ফল কিনছেন না কেউ। 

খেজুরের দোকানে ক্রেতা সবচেয়ে বাড়ে রমজানে। ক্রেতাদের অভিযোগ, রমজানের আগেই খেজুরের দাম বেড়ে গেছে এবার। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, খেজুরের দাম এখনই বরং কম, সামনে আরও বাড়তে পারে। কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, বাদামতলীতে খেজুরের মজুত কম৷

মো. হোসেন আলী শেখ নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘খেজুর কিনতে এসে বাজার ঘুরে দেখলাম খেজুরের দাম বাড়তি। ৫০০ টাকায় এক কেজি খেজুর কিনেছি। রমজানের এক সপ্তাহ আগেই এমন দাম হলে রমজান শুরু হলে কী অবস্থা হবে কে জানে?’

সারা দিন রোজা রেখে রাতে খাবার কিংবা সাহ্‌রিতে মাছ-মাংস পাতে রাখতে চায় মানুষ। সেই সুযোগে রোজায় মাছ-মাংসের দামও বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। রোজা এখনো শুরু না হলেও এবার পোলট্রি পণ্যের দাম বেশ আগে থেকেই বাড়তি। এ অবস্থায় আসন্ন রোজায় পোলট্রি পণ্যের দাম আর বাড়বে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন হলে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পোলট্রি প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে পোলট্রি পণ্যের দাম বেড়ে আছে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খাদ্য, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে।

এ সময় পোলট্রি পণ্যে দাম কমার জন্য ছয় থেকে সাত মাস অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।

কমছে চালের দাম
চাহিদা না থাকায় দাম কমতে শুরু হয়েছে বিভিন্ন ধরনের চালের। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন মোকাম ও পাইকারি বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ছয় টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে খুচরা পর্যায়ে দাম কমাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

পুরান ঢাকার বাবুবাজার ও বাদামতলী এলাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে মানভেদে প্রতি কেজি লতা (বিআর-২৮) চালের দাম ছিল ৫০-৫৬ টাকা। বর্তমানে তা ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৬৪-৮৫ টাকার নাজিরশাইল ৬৩-৮০ টাকা, ৬৩-৭৫ টাকার মিনিকেট ৬২-৭২ টাকা এবং ৪৫-৪৬ টাকার স্বর্ণা চাল এখন ৪২-৪৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাবুবাজারের মেসার্স মা-বাবার দোয়া রাইস এজেন্সির মালিক মনির হোসেন জমাদার জানান, দেশের মোকাম, পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিপুল পরিমাণ চালের মজুত রয়েছে। এক মাস পর দেশে বোরো মৌসুমের নতুন চাল উঠবে। এ ছাড়া রমজান মাসে ইফতারির কারণে চালের চাহিদা অনেকটা কমে যায়। সব মিলে বাজারে মন্দা চলছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত