বিড়াল-তেলাপোকার সঙ্গে রোগীদের বাস

অর্চি হক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২১, ০৬: ৫৪
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২১, ১৩: ১৪

অন্ধকারে চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছিল। বাসনপত্র, তরিতরকারি কিংবা জামাকাপড় রাখার স্থানে এলোমেলোভাবে কী যেন খুঁজছে। কালিপদ মণ্ডলের স্ত্রী ঠিকই বুঝতে পারেন, তন্নতন্ন করে ও আসলে খাবার খুঁজছে। যেই একটু বিছানা নাড়া দিলেন, সঙ্গে সঙ্গেই বের হয়ে এল কালো বিড়ালটি। ফের আশ্রয় নিল বেডে পড়ে থাকা মণ্ডলের স্ত্রীর চাদরে। মুহূর্তেই একে একে সাদাকালো মিলিয়ে তিনটি বিড়াল বের হয়ে এল। বুঝিয়ে দিল এটাই তাদের আবাসস্থল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের ওয়ার্ডেই থাকে বিড়ালগুলো। রোগীদের অভিযোগ, এখানে বিড়াল না থাকলেও আরেক সমস্যা। কারণ, বিড়াল গেলে ইঁদুর চলে আসে। তা ছাড়া, হাসপাতালের তোশক একটু নাড়া দিলেই বেরিয়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে তেলাপোকা।

গত শুক্রবার ঢামেকে গিয়ে কথা হয় রোগীদের সঙ্গে। ফরিদপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা কালিপদ মণ্ডলের ছেলে সুজন মণ্ডল বলেন, ‘বাবার অসুখ, ১ মাস ১২ দিন ধইরা হাসপাতালে আছি। শুরু থেকেই বিড়ালগুলারে দেখতেছি। মাঝেমধ্যেই রোগীদের খাবার নষ্ট করে ফেলে বিড়ালগুলো।’

চিকিৎসা নিতে আসা রোগী সোহেল আহমেদ বলেন, ‘১০ দিন ধইরা এখানে আছি। ইঁদুর, বিড়াল আর তেলাপোকার জ্বালায় অতিষ্ঠ। ফলমূল থেকে মাছ-ভাত কিছুই বাদ রাখে না এরা। তা ছাড়া, হাসপাতালের ওয়াশরুমগুলোও অপরিচ্ছন্ন; উৎকট গন্ধে বেশিক্ষণ থাকা যায় না।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিড়াল, ইঁদুর কিংবা তেলাপোকার মতো প্রাণীরা বিভিন্ন রোগের জীবাণু ছড়ায়। টিকা দেওয়া ছাড়া বিড়াল খুবই বিপজ্জনক। আর ইঁদুর-তেলাপোকা থাকা মানেই জায়গাটা অস্বাস্থ্যকর। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অসীম কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘বিড়াল ও ইঁদুরের পশম এবং লালা থেকে সংক্রামক বিভিন্ন রোগ হয়। তেলাপোকার কারণে হয় পেটের অসুখ।’

রোগীদের এমন ভোগান্তি নিয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘বিষয়টি ইতিমধ্যেই আমাদের নজরে এসেছে। পোকামাকড় এবং বিড়াল থেকে রোগীদের কীভাবে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটও ভাবতে হবে। তেলাপোকা মারলে দুদিন পর ফের আসে।’

ঢামেক পরিচালক অভিযোগ করে বলেন, রোগীদেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাঁরা খোলামেলাভাবে খাবার ফেলে রাখেন। আর তখনই বিড়াল আসে।

হাসপাতালের বাথরুমগুলোর অস্বাস্থ্যকর অবস্থা নিয়ে নাজমুল বলেন, ‘এটা ৮০ বছরের পুরোনো হাসপাতাল। একজন পরিষ্কার করে আর ২০ জন নোংরা করে। আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা আছে। তবে এখানে বড় প্রকল্প হবে। তখন হয়তো পরিকল্পনা করে বেশি ওয়াশরুম করা যাবে।’

পরিবেশ নিয়ে রোগীদের অস্বস্তি থাকলেও দালাল চক্রের প্রভাব কমেছে বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অনেক রোগী। জাহানারা খাতুন নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘কয়েক মাস আগেও যেখানে ঢামেকে এলে চিকিৎসা পেতে দালালের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখতে হতো, এখন সেই ঝামেলা নেই। ২৮ দিন ধরে হাসপাতালে আছি। ভর্তির সময় ১০ টাকা লাগছিল। আর কিছু দিতে হয় নাই।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত