মাসুদ রানা
আজকের পত্রিকা: অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধক্ষমতা ফুরিয়ে যাওয়ার কারণ কী?
ডা. মো. সায়েদুর রহমান: প্রথমে একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধক্ষমতা আসলে থাকছে না, বিষয়টা সে রকম নয়। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এর প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে উঠছে না। প্রতিরোধক্ষমতার ব্যাপারটা হচ্ছে, অ্যান্টিবায়োটিক আগে ওই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসকে যেভাবে হত্যা বা নিষ্ক্রিয় করত, এখন সেটা করতে পারছে না। অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বেঁচে থাকার সামর্থ্য গড়ে উঠছে। ফলে এটাকে নিষ্ক্রিয় বা থামিয়ে রাখার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এটাকে বলা হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধক্ষমতা না থাকা। অ্যান্টিবায়োটিক ডেভেলপ করছে না ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের মধ্যে। এ কারণে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারাচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের পর বেশির ভাগ অ্যান্টিবায়োটিকেরই কার্যকারিতা থাকবে না। তাহলে আমরা কী করতে পারি?
ডা. রহমান: আসলে এ অবস্থাটা আরও খারাপ হয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৫০ সালের কথা বলেছে। কিন্তু দুই বছর আগে করোনা মহামারির সময় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে এর আগেই ঘটনাটি ঘটে যাবে। এর কিছু সমস্যা আছে। যেমন একদিকে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের প্রচলিত যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আবিষ্কার করা হয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার সামর্থ্য অর্জন করছে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলো। উল্টোদিকে বিজ্ঞানীরা ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস বা ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের যে জানাশোনা, সেই অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যত ধরনের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে, সে-সম্পর্কে জেনে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করা দরকার ছিল। কিন্তু পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করা যাবে, সেই সম্ভাবনা খুবই কম। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এবং বিজ্ঞানী মহল থেকে আগাম সতর্কতা দেওয়া হচ্ছে, ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে যে সঞ্চিত অস্ত্র ছিল, সেগুলোর বিরুদ্ধেও তারা বেঁচে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের পাইপলাইনে, মানে পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে ওষুধ আবিষ্কারের সম্ভাবনা সর্বোচ্চ দুই-তিনটির বেশি নয়।
সে ক্ষেত্রে মনে করা হচ্ছে, প্রতিরোধক্ষমতার অভাবে মানুষ সাধারণ ইনফেকশনের কারণে মারা যাবে। সাধারণ ইনফেকশন কথাটা হচ্ছে, অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আগে ছোটখাটো আঘাতের কারণে মানুষ যেভাবে মারা গেছে, অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারানোর কারণে মানুষ আসলে সেই আগের অবস্থায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমাদের হাতের কাছে থাকা অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে না। ঘটনাটি ইতিমধ্যে ঘটা শুরু হয়ে গেছে। এটা কোনো দেশে আগে এবং কোনো দেশে পরে ঘটবে—বিষয়টা সে রকম নয়। আবার কোনো ইনফেকশনের বিরুদ্ধে আগে এবং কোনো ইনফেকশনের বিরুদ্ধে পরে ঘটবে, ব্যাপারটা সে রকমও নয়। এ কারণে মানুষকে বোঝানোর জন্য ২০৫০ সালের কথা বলা হয়েছে। তাই হাসপাতাল, আইসিইউতে এখন এ কারণে অনেক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। কারণ কার্যকর ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যথার্থ অ্যান্টিবায়োটিক নেই বলে ঘটনাগুলো ঘটছে। তাই এটাকে চলমান মহামারি বলতে হবে।
আজকের পত্রিকা: তাহলে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি ঠেকানো যাচ্ছে না কেন?
ডা. রহমান: পৃথিবীর যেসব দেশে খুবই কার্যকরভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং কোর্স সম্পন্ন করা হয়, সেই সব দেশেও এ ঘটনা ঘটছে; মানে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। তাই কথা হচ্ছে, আপনি অ্যান্টিবায়োটিক যতই সঠিকভাবে ব্যবহার করেন না কেন, ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এর ব্যবহার করলেও প্রতিরোধক্ষমতা থাকবে না। এটা হলো মূল কথা। ধরুন, ১ লাখ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে টার্গেট করে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হলো, সেখান থেকে ৫০০ থেকে ১ হাজারের বিরুদ্ধে কাজ করল, বাকিগুলো বেঁচে গেল।
অ্যান্টিবায়োটিক কীভাবে আক্রমণ করে, সেই কৌশল জেনে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস পরবর্তী প্রজন্মকে জেনেটিক মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে। ফলে তাদের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে ৫০০ থেকে বেড়ে ৫ হাজার, সেখান থেকে বেড়ে ৫ লাখে দাঁড়াচ্ছে। এভাবে যে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে বাঁচতে পারে, তাদের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। এই সংখ্যাটা যখন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে থাকে, তখন অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। তাই অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার, অতিরিক্ত ব্যবহার এবং সঠিক ব্যবহার—যেকোনো ধরনের ব্যবহার তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারছে না। তবে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহারের সুবিধা হচ্ছে, ১ লাখ ব্যাকটেরিয়ার ১ লাখই মেরে ফেলতে পারলে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হবে। কিন্তু যখন অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ না করা, ভুল অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলো বেঁচে যাচ্ছে; তারা তখন বেঁচে থাকার কৌশলটা ধরে ফেলছে।
আমাদের মতো দেশে ভুল এবং অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুল মাত্রায় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। সে জন্য আমাদের দেশে এ ঘটনাটি আগে ঘটার আশঙ্কা বেশি। যে ঘটনাটি ২০ বছর পরে ঘটার কথা, সেটা ৫ বছর আগে ঘটতে পারে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরেকটা সমস্যা হলো, এখানে ২ লাখ ফার্মেসি আছে। যখন আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি, তখন ২ লাখ ফার্মেসির মধ্য থেকে ১ লাখ অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয়ে গেছে। এগুলো কোনো পরামর্শ ছাড়াই কেনা হচ্ছে। কথা হলো, যেখানে ডাক্তার ও হাসপাতাল থাকবে, সেখানে গেলে ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম আছে। হলেও সেটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকবে। কিন্তু যখন এর যথেচ্ছ ব্যবহার হয়, তখন ঘটনাটা তাড়াতাড়ি ঘটবে। শুধু মানুষের মধ্যে এর ব্যবহার হচ্ছে না; এখন পশু, মুরগি পালনের ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। যেগুলো পর্যায়ক্রমে প্রকৃতিতে থাকা ব্যাকটেরিয়ায় জেনেটিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকছে।
আর বাংলাদেশের আইনে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নতুন আইনে সেটা ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এখন এটা শুধু প্রয়োগের ব্যাপার।
আজকের পত্রিকা: পৃথিবীজুড়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক গাইডলাইন আছে। আমাদের দেশে তা কি আছে? থাকলে কেন সেটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না?
ডা. রহমান: গাইডলাইন কোনোভাবেই বাধ্যবাধকতা নয়। এটা কোনোভাবে কারও জন্য আদেশও নয়। বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের জন্য গাইডলাইন আছে। যেমন টিবির জন্য কোন অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে, তার নির্দেশনা আছে। এমনিভাবে ডেঙ্গু, করোনায় কী দেওয়া হবে, তার জন্য সেটা আছে। এভাবে বিভিন্ন রোগের জন্য গাইডলাইন আছে। গাইডলাইন হয় তিন রকমের—ন্যাশনাল, রিজিওনাল ও ইনস্টিটিউশনাল। সেগুলো সেভাবে ব্যবহার করাই উত্তম।
আজকের পত্রিকা: সামগ্রিকভাবে এখান থেকে মুক্তি পেতে আপনার পরামর্শ কী?
ডা. রহমান: সাধারণ জনগণের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, মানুষ যেমন সাদা, নীল, হলুদ রঙের মানে জানে, একইভাবে তাদের জানা থাকা দরকার, সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্যাকেটের রং লাল করা হয়েছে। অনেকে পকেটের টাকা বাঁচানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটা ব্যবহার করে। আর ডাক্তারের কাছে গেলে কিছু জিনিসের পরীক্ষা করতে হয়। তিনি যদি একজন অষ্টম শ্রেণি পাস লোকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খান, এর মধ্য দিয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ প্রজন্মসহ তিনি নিজেও এমন একটা ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হতে পারেন, যেটা অ্যান্টিবায়োটিকপ্রতিরোধী নয়। ফলে পরবর্তী সময়ে তাঁর নিজের চিকিৎসাও সফল হবে না। এভাবে তিনি নিজের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবেন।
তাই পৃথিবীর মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না। এ জন্য করণীয় হলো, অ্যান্টিবায়োটিক যৌক্তিকভাবে ব্যবহার করা। প্রয়োজনে ব্যবহার করা। আর শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা। পশুপাখির জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে, সেটা মানুষের জন্য ব্যবহার না করা। চিকিৎসক যত দিনের জন্য এবং যে মাত্রায় ব্যবহার করতে বলবেন, সেই অনুযায়ী ব্যবহার করা। এভাবে সম্পূর্ণ পরামর্শ মেনে চলা। আর সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, যেন ইনফেকশন কম হয়। ইনফেকশন যত কম হবে, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার তত কম করা হবে।
আজকের পত্রিকা: অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধক্ষমতা ফুরিয়ে যাওয়ার কারণ কী?
ডা. মো. সায়েদুর রহমান: প্রথমে একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধক্ষমতা আসলে থাকছে না, বিষয়টা সে রকম নয়। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এর প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে উঠছে না। প্রতিরোধক্ষমতার ব্যাপারটা হচ্ছে, অ্যান্টিবায়োটিক আগে ওই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসকে যেভাবে হত্যা বা নিষ্ক্রিয় করত, এখন সেটা করতে পারছে না। অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বেঁচে থাকার সামর্থ্য গড়ে উঠছে। ফলে এটাকে নিষ্ক্রিয় বা থামিয়ে রাখার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এটাকে বলা হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধক্ষমতা না থাকা। অ্যান্টিবায়োটিক ডেভেলপ করছে না ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের মধ্যে। এ কারণে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারাচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের পর বেশির ভাগ অ্যান্টিবায়োটিকেরই কার্যকারিতা থাকবে না। তাহলে আমরা কী করতে পারি?
ডা. রহমান: আসলে এ অবস্থাটা আরও খারাপ হয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৫০ সালের কথা বলেছে। কিন্তু দুই বছর আগে করোনা মহামারির সময় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে এর আগেই ঘটনাটি ঘটে যাবে। এর কিছু সমস্যা আছে। যেমন একদিকে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের প্রচলিত যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আবিষ্কার করা হয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার সামর্থ্য অর্জন করছে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলো। উল্টোদিকে বিজ্ঞানীরা ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস বা ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের যে জানাশোনা, সেই অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যত ধরনের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে, সে-সম্পর্কে জেনে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করা দরকার ছিল। কিন্তু পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করা যাবে, সেই সম্ভাবনা খুবই কম। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এবং বিজ্ঞানী মহল থেকে আগাম সতর্কতা দেওয়া হচ্ছে, ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে যে সঞ্চিত অস্ত্র ছিল, সেগুলোর বিরুদ্ধেও তারা বেঁচে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের পাইপলাইনে, মানে পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে ওষুধ আবিষ্কারের সম্ভাবনা সর্বোচ্চ দুই-তিনটির বেশি নয়।
সে ক্ষেত্রে মনে করা হচ্ছে, প্রতিরোধক্ষমতার অভাবে মানুষ সাধারণ ইনফেকশনের কারণে মারা যাবে। সাধারণ ইনফেকশন কথাটা হচ্ছে, অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আগে ছোটখাটো আঘাতের কারণে মানুষ যেভাবে মারা গেছে, অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারানোর কারণে মানুষ আসলে সেই আগের অবস্থায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমাদের হাতের কাছে থাকা অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে না। ঘটনাটি ইতিমধ্যে ঘটা শুরু হয়ে গেছে। এটা কোনো দেশে আগে এবং কোনো দেশে পরে ঘটবে—বিষয়টা সে রকম নয়। আবার কোনো ইনফেকশনের বিরুদ্ধে আগে এবং কোনো ইনফেকশনের বিরুদ্ধে পরে ঘটবে, ব্যাপারটা সে রকমও নয়। এ কারণে মানুষকে বোঝানোর জন্য ২০৫০ সালের কথা বলা হয়েছে। তাই হাসপাতাল, আইসিইউতে এখন এ কারণে অনেক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। কারণ কার্যকর ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যথার্থ অ্যান্টিবায়োটিক নেই বলে ঘটনাগুলো ঘটছে। তাই এটাকে চলমান মহামারি বলতে হবে।
আজকের পত্রিকা: তাহলে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি ঠেকানো যাচ্ছে না কেন?
ডা. রহমান: পৃথিবীর যেসব দেশে খুবই কার্যকরভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং কোর্স সম্পন্ন করা হয়, সেই সব দেশেও এ ঘটনা ঘটছে; মানে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। তাই কথা হচ্ছে, আপনি অ্যান্টিবায়োটিক যতই সঠিকভাবে ব্যবহার করেন না কেন, ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এর ব্যবহার করলেও প্রতিরোধক্ষমতা থাকবে না। এটা হলো মূল কথা। ধরুন, ১ লাখ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে টার্গেট করে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হলো, সেখান থেকে ৫০০ থেকে ১ হাজারের বিরুদ্ধে কাজ করল, বাকিগুলো বেঁচে গেল।
অ্যান্টিবায়োটিক কীভাবে আক্রমণ করে, সেই কৌশল জেনে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস পরবর্তী প্রজন্মকে জেনেটিক মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে। ফলে তাদের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে ৫০০ থেকে বেড়ে ৫ হাজার, সেখান থেকে বেড়ে ৫ লাখে দাঁড়াচ্ছে। এভাবে যে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে বাঁচতে পারে, তাদের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। এই সংখ্যাটা যখন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে থাকে, তখন অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। তাই অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার, অতিরিক্ত ব্যবহার এবং সঠিক ব্যবহার—যেকোনো ধরনের ব্যবহার তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারছে না। তবে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহারের সুবিধা হচ্ছে, ১ লাখ ব্যাকটেরিয়ার ১ লাখই মেরে ফেলতে পারলে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হবে। কিন্তু যখন অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ না করা, ভুল অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলো বেঁচে যাচ্ছে; তারা তখন বেঁচে থাকার কৌশলটা ধরে ফেলছে।
আমাদের মতো দেশে ভুল এবং অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুল মাত্রায় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। সে জন্য আমাদের দেশে এ ঘটনাটি আগে ঘটার আশঙ্কা বেশি। যে ঘটনাটি ২০ বছর পরে ঘটার কথা, সেটা ৫ বছর আগে ঘটতে পারে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরেকটা সমস্যা হলো, এখানে ২ লাখ ফার্মেসি আছে। যখন আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি, তখন ২ লাখ ফার্মেসির মধ্য থেকে ১ লাখ অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয়ে গেছে। এগুলো কোনো পরামর্শ ছাড়াই কেনা হচ্ছে। কথা হলো, যেখানে ডাক্তার ও হাসপাতাল থাকবে, সেখানে গেলে ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম আছে। হলেও সেটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকবে। কিন্তু যখন এর যথেচ্ছ ব্যবহার হয়, তখন ঘটনাটা তাড়াতাড়ি ঘটবে। শুধু মানুষের মধ্যে এর ব্যবহার হচ্ছে না; এখন পশু, মুরগি পালনের ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। যেগুলো পর্যায়ক্রমে প্রকৃতিতে থাকা ব্যাকটেরিয়ায় জেনেটিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকছে।
আর বাংলাদেশের আইনে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নতুন আইনে সেটা ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এখন এটা শুধু প্রয়োগের ব্যাপার।
আজকের পত্রিকা: পৃথিবীজুড়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক গাইডলাইন আছে। আমাদের দেশে তা কি আছে? থাকলে কেন সেটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না?
ডা. রহমান: গাইডলাইন কোনোভাবেই বাধ্যবাধকতা নয়। এটা কোনোভাবে কারও জন্য আদেশও নয়। বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের জন্য গাইডলাইন আছে। যেমন টিবির জন্য কোন অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে, তার নির্দেশনা আছে। এমনিভাবে ডেঙ্গু, করোনায় কী দেওয়া হবে, তার জন্য সেটা আছে। এভাবে বিভিন্ন রোগের জন্য গাইডলাইন আছে। গাইডলাইন হয় তিন রকমের—ন্যাশনাল, রিজিওনাল ও ইনস্টিটিউশনাল। সেগুলো সেভাবে ব্যবহার করাই উত্তম।
আজকের পত্রিকা: সামগ্রিকভাবে এখান থেকে মুক্তি পেতে আপনার পরামর্শ কী?
ডা. রহমান: সাধারণ জনগণের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, মানুষ যেমন সাদা, নীল, হলুদ রঙের মানে জানে, একইভাবে তাদের জানা থাকা দরকার, সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্যাকেটের রং লাল করা হয়েছে। অনেকে পকেটের টাকা বাঁচানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটা ব্যবহার করে। আর ডাক্তারের কাছে গেলে কিছু জিনিসের পরীক্ষা করতে হয়। তিনি যদি একজন অষ্টম শ্রেণি পাস লোকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খান, এর মধ্য দিয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ প্রজন্মসহ তিনি নিজেও এমন একটা ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হতে পারেন, যেটা অ্যান্টিবায়োটিকপ্রতিরোধী নয়। ফলে পরবর্তী সময়ে তাঁর নিজের চিকিৎসাও সফল হবে না। এভাবে তিনি নিজের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবেন।
তাই পৃথিবীর মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না। এ জন্য করণীয় হলো, অ্যান্টিবায়োটিক যৌক্তিকভাবে ব্যবহার করা। প্রয়োজনে ব্যবহার করা। আর শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা। পশুপাখির জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে, সেটা মানুষের জন্য ব্যবহার না করা। চিকিৎসক যত দিনের জন্য এবং যে মাত্রায় ব্যবহার করতে বলবেন, সেই অনুযায়ী ব্যবহার করা। এভাবে সম্পূর্ণ পরামর্শ মেনে চলা। আর সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, যেন ইনফেকশন কম হয়। ইনফেকশন যত কম হবে, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার তত কম করা হবে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে